লাল গ্রহে পারসিভারেন্স

মঙ্গলযান পারসিভারেন্সনাসা

দীর্ঘ সাড়ে ছয় মাস মহাশূন্যে ভ্রমণ শেষে আজ মঙ্গলগ্রহের মাটিতে অবতরণ করতে যাচ্ছে রোভার দ্য পারসিভারেন্স। মঙ্গলের উদ্দেশ্য নাসার পাঠানো পঞ্চম রোভার এটি। উৎক্ষেপণ থেকে অবতরণের আগ পর্যন্ত রোভারটি পাড়ি দেবে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার। ২০২০ সালের ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কার্নিভাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে এ রোভার।

রোভার পারসিভারেন্স মূলত মঙ্গলের বুকে প্রগৈতিহাসিক প্রাণের খোঁজ চালাবে। পাশাপাশি সংগ্রহ করবে মঙ্গলের মাটি এবং পাথর। সম্ভব হলে সেগুলো নিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আসবে।

ইনজেনুইটি নামের এই মহাকাশযানটি উড়বে মঙ্গলের আকাশে
নাসা

পারসিভারেন্সের এই অভিযানে যুক্ত হয়েছে ইনজেনুইটি (INGENUITY) নামে মার্স হেলিকপ্টার। এটাই পৃথিবীর বাইরে পাঠানো উড্ডয়নক্ষম যান। অবতরণের পর মার্স কপ্টারটি আগামী ৩০ দিনে একাধিকবার মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এর সাহায্য মঙ্গলের খুব কাছ থেকে পৃষ্ঠের ছবি তোলাসহ পারসিভারেন্সের বিভিন্ন কার্জক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশ সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত (১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত) ১ টা ১৫ মিনিটে পারসিভারেন্স মঙ্গলগ্রহের জেজেরো ক্রেটার অঞ্চলে অবতরণ করবে। অবতরণের জন্য এই স্থানটিকে বেছে নেওয়ার কারণ আছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মঙ্গলের প্রাণ অনুসন্ধানের জন্য এটি হচ্ছে আদর্শ জায়গা। ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে এটা বিশাল এক হ্রদ ছিল। কালের বিবর্তনে এখন শুকিয়ে গেছে। ফলে এখানে ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

এভাবেই মঙ্গলে অবতারণ করবে পারসিভারেন্স
বিজ্ঞাচিন্তা/সূত্র:নাসা

পারসিভারেন্স মিশনটি পরিচালনা হচ্ছে নাসার ‘মার্স ২০২০’ প্রকল্পের আওতায়। জেজেরো হ্রদ সম্পর্কে এই মিশনের অন্যতম বিজ্ঞানী কেন উইলিফোর্ড বলেন, ‘জীবনের চিহ্ন খোঁজার জন্য জেজেরো হ্রদ সবচেয়ে আদর্শ জায়গা বলে আমরা মনে করি। এর উপকূল কার্বন এবং নানা খনিজ পদার্থের সন্ধান মিলেছে। তাই এখানে জীবাশ্ম থাকার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।'

অবতরণ-দৃশ্যটি সরাসরি দেখার ব্যবস্থা করেছে নাসা। তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে যে-কেউ এই অবিস্মরণীয় মূহর্তটি সরাসরি দেখতে পারবেন।

অবতরণ কেমন হবে দেখুন ভিডিওতে :

নাসার এই অভিযান সফল হলে পরবর্তীতে মঙ্গলে মানব অভিযান পরিচালনার পথ সুগম হবে বলে আশা করেছেন বিজ্ঞানীরা।

এর আগে নাসা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মঙ্গলের বুকে আরও চারটি রোভার পাঠায়। যার প্রত্যেকটাই সফলভাবে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলের বুকে এবারের অভিযান।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: নাসা