স্মার্টফোনের উপাদান

আধুনিক মোবাইলের পর্দার রেজল্যুশন অনেক বেশি, অনেক সংবেদনশীল। এখনকার ফোনের ব্যাটারির ধারণক্ষমতাও অত্যন্ত বেশি। সঙ্গে শক্তিশালী প্রসেসর। আপনি কি স্মার্টফোনের এত সব ফিচার দেখে অবাক হন? এশিয়ান জিওগ্রাফি দেখিয়েছে কীভাবে মোবাইলের বিভিন্ন উপাদান কাজ করে।

পর্দা

স্মার্টফোনের পর্দা দেখতে সাধারণ কাচের মতো। আসলে এটা কম পরিচিত ও দুষ্প্রাপ্য কিছু পদার্থ দিয়ে তৈরি। যেমন এতে আছে বিদ্যুৎ পরিবাহী ইনডিয়াম টিন অক্সাইডের স্বচ্ছ আবরণ। পর্দায় স্পর্শ করে আপনি যে নির্দেশ দেবেন, সেই নির্দেশ ফোনের অন্যান্য যন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংকেতের সাহায্যে পৌঁছে দেয় এই আবরণ। গ্যাডোলিনিয়াম, প্রাসিওডাইমিয়াম, টারবিয়াম এবং ইট্রিয়াম পর্দায় রঙের জোগান দেয়। এ ছাড়া পর্দায় অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট ব্যাবহার করা হয়, যা অ্যালুমিনা ও সিলিকার মিশ্রণ। এই মিশ্রণকে পটাশিয়াম যৌগ দিয়ে আরও শক্তিশালী করা হয়।

কেসিং

ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের সংকর ধাতু এবং প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় মোবাইলের কেসিং তৈরিতে। বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় ব্যতিচারের সময় নিকেলের উপস্থিতি মোবাইলে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। এ ঘটনা রোধ করার জন্য ব্রোমাইন ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু ফোনের পর্দা এবং ক্যামেরার লেন্সে নীলকান্তমণি ব্যবহার করা হয়। এতে সামান্য পারিমাণ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও লোহা, ক্রোমিয়াম ও টাইটেনিয়াম থাকে।

ব্যাটারি

বেশির ভাগ স্মার্টফোনে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। এর ক্যাথোড হিসেবে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড এবং অ্যানোডে কার্বন ব্যবহার করা হয়। কিছ কিছু ব্যাটারিতে কোবাল্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ম্যাঙ্গানিজ। এ ছাড়া ব্যাটারির বাইরের আবরণ তৈরি করা হয় অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে।

আরও পড়ুন

ইলেকট্রনিকস

মোবাইলে যেসব ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকে, সেগুলো তৈরি হয় সোনা, রুপা, টাংস্টেন দিয়ে। পরিবাহী তারগুলো তৈরিতে তামা ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোক্যাপাসিটর প্রতিমুহূর্তে শক্তি সঞ্চয় করে এবং বিদ্যুতের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি হয় ট্যান্টালাম এবং সামান্য পরিমাণ প্যালাডিয়াম ও প্লাটিনাম দিয়ে। সার্কিড বোর্ডে দস্তা (জিংক) ব্যবহার করা হয়।

স্মার্টফোনের স্পিকার ও মাইক্রোফোনে থাকা শক্তিশালী চুম্বক তৈরি হয় গ্যাডোলিনিয়াম, নিওডাইমিয়াম, প্রাসিওডাইমিয়াম, লোহা ও বোরন দিয়ে। মোবাইলের ভাইব্রেশন ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে ডিসপ্রোসিয়াম, নিওডাইমিয়াম ও টারবিয়াম দিয়ে তৈরি চুম্বক। মাইক্রোফোন এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য নিকেল ব্যবহার করা হয়।

স্মার্টফোনের সার্কিট বোর্ডটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় তামা, টিন, রুপা ও সিসা।

মাইক্রোচিপগুলোকে বলা হয় মোবাইলের মস্তক। এগুলোর মূল উপাদান সিলিকন। নানা উপায়ে এই চিপ থেকে শক্তি উৎপাদিত হয়। এর অপরিবাহী অঞ্চলে জারণ প্রক্রিয়ায় শক্তি উপাদিত হয়। বোরন, গ্যালিয়াম, ইনডিয়াম, আর্সেনিক, ফসফরাস, অ্যান্টিমনি ও অক্সিজেন মিলিত হয়ে বিদ্যুৎ পরিবহিতা সহজ করে।

মোবাইলের শীর্ষ ৯ উপাদান

স্মার্টফোন যে অপরিহার্য ধাতুগুলো ছাড়া চলতে পারে না, সেগুলো দেখা যাক।

নিকেল

নিকেল ক্যাপাসিটর, ব্যাটারি এবং বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। নিকেল প্রথমে গরম এবং পরে ঠান্ডা করে আকরিক থেকে বের করা হয়। ইন্দোনেশিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিকেল উৎপাদনকারী দেশ।

রুপা

নমনীয় রুপালি এই মূল্যবান ধাতু সার্কিট বোর্ডে ব্যবহার করা হয়। রুপা সাধারণত স্বর্ণ, নিকেল, দস্তা ও তামার খনিতে উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। শীর্ষ রৌপ্য প্রস্তুতকারী দেশ মেক্সিকো। চীন বিশ্বের তৃতীয় রৌপ্য উৎপাদক দেশ। বিশ্বের সব থেকে বেশি রুপা মজুত আছে পেরুর ভাঁড়ারে।

স্বর্ণ

স্মার্টফোনের সার্কিট বোর্ডে অল্প পরিমাণ স্বর্ণের ব্যবহার আছে। চীন বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণ রপ্তানিকারক দেশ।

অ্যালুমিনিয়াম

মোবাইলের কেসিং এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুলভ ধাতু এই অ্যালুমিনিয়াম। সবচেয়ে বেশি অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ চীন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার ১০ গুণ অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন করে চীন।

সিসা

সিসার মতো নরম, ভারী, নমনীয় এবং বিষাক্ত ধাতব উপাদানগুলো আমাদের মোবাইলে ব্যবহার করা হয়। খনিতে পাওয়া আকরিক থেকে ও রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় সিসা উৎপাদন করা হয়। বিশ্বের শীর্ষ সিসা প্রস্তুতকারক দেশ চীন।

দস্তা

দস্তা নীল–সাদা ধাতু। এটা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভঙ্গুর, কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় নমনীয়। স্মার্টফোনের সার্কিট বোর্ডে দস্তা ব্যবহার করা হয়। দস্তা উৎপাদনে বিশ্বে চীন রয়েছে শীর্ষে।

তামা

সার্কিট বোর্ডে বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে তামা ব্যবহার করা হয়। এই লাল–বাদামি ধাতুটি কপার সালফাইড আকারে খনিতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি তামা উৎপাদিত হয় চিলিতে। চীন এই তালিকায় দ্বিতীয়।

লিথিয়াম

মোবাইলের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই ধাতু। লবণ হ্রদ ও শক্ত পাথুরে আকরিক থেকে লিথিয়াম সংগ্রহ করা হয়। লিথিয়াম রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ অস্ট্রেলিয়া।

কোবাল্ট

রুপালি সাদা এই ধাতু দিয়ে ধাতব গলন প্রক্রিয়া উৎপাদন করা হয়। ব্যাটারি তৈরিতে কোবাল্ট দরকার হয়। বিশ্বের বৃহত্তম কোবাল্ট ভান্ডার হলো কঙ্গো। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কোবাল্ট সরবরাহ করে আফ্রিকান এই দেশ।

সূত্র: সায়েন্স ইলাস্ট্রেটেড