এআই দিয়ে লেখা চেনার উপায় কী

কোনো লেখা দেখলে কীভাবে বুঝবেন তা মানুষের লেখা নাকি এআইয়ের?এআই আর্ট

ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে একটা দারুণ স্বাস্থ্যবিষয়ক টিপস পেলেন। অথবা হয়তো একটা নতুন ফোনের রিভিউ পড়ছেন। লেখাটা ঝরঝরে এবং সুন্দরভাবে গুছিয়ে লেখা। কিন্তু পড়ে মনে হচ্ছে সবকিছু কেমন যেন নিখুঁত, কিন্তু প্রাণহীন। আপনার মনে হতেই পারে, এই লেখাটা এআই দিয়ে লেখা। কিন্তু আসলেই সেটা এআইয়ের লেখা নাকি মানুষের, তা কীভাবে বুঝবেন? কোন বিচারে একটি লেখাকে এআইয়ের লেখা বলবেন? 

এআইয়ের লেখা চেনার কিছু সহজ ও সাধারণ উপায় আছে। এর জন্য কোনো সফটওয়্যারের দরকার নেই। লেখার মধ্যেই এমন কিছু চিহ্ন লুকিয়ে থাকে, যা দেখেই আপনি ধরে ফেলতে পারবেন, লেখাটা মানুষের নাকি এআইয়ের। চলুন, সেই সহজ উপায়গুলো জেনে নিই।

১. একই রকম শুরু

এআই দিয়ে লেখা অনেক কনটেন্টের শুরু হয় একই ধরনের প্রশ্ন দিয়ে। যেমন, আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন..., আপনি কি এই সমস্যায় ভুগছেন..., বা আমি যদি বলি...ইত্যাদি। সাধারণত এ ধরনের বাক্য দিয়ে পাঠকের মনোযোগ টানার চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু এআই কেন এমন বাক্য দিয়ে লেখা শুরু করে? কারণ, এআই মডেলগুলো ইন্টারনেটের লাখ লাখ ব্লগ পোস্ট আর বিজ্ঞাপনের লেখা থেকে শেখে। সেখানে এই ফর্মুলাগুলোই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একজন সত্যিকারের লেখক সবসময় নতুনত্ব খোঁজেন। তিনি হয়তো সরাসরি কোনো গল্প দিয়ে শুরু করবেন, বা কোনো মজার তথ্য দিয়ে। তাই এরপর যখন দেখবেন কোনো লেখার শুরুতে এমন একঘেয়ে প্রশ্ন বারবার আসছে, ধরে নিতে পারেন এর পেছনে কোনো এআইয়ের হাত আছে।

২. কথাবার্তা খুব সাধারণ, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই

এআইয়ের লেখায় প্রায়ই দেখবেন এমন কিছু বাক্য আছে যেগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু ওসব বাক্যে তেমন কোনো তথ্য নেই। যেমন, অনেক গবেষণায় দেখা গেছে..., বিশেষজ্ঞরা মনে করেন... বা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে...। এ ধরনের বাক্যে স্পষ্ট করে বলা হয় না যে কোন গবেষণা বা কোন বিশেষজ্ঞ বলেছেন।

ধরুন, আমি আপনাকে বললাম, একটা জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহার করুন, দেখবেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু অ্যাপটার নাম আর বললাম না। এআই সাধারণত এ ধরনের উদাহরণ দেয়। কিন্তু মানুষ যখন লেখে, তখন সে তার অভিজ্ঞতা থেকে নির্দিষ্ট উদাহরণ দেয়। সে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম, আসল পরিসংখ্যান বা কোনো বিশেষ ঘটনার কথা বলে। যখন দেখবেন কোনো লেখায় এমন নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব, বুঝবেন সেখানে অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। এমন লেখাকে এআইয়ের লেখা ভাবলে ভুল হবে না।

এআইয়ের লেখায় প্রায়ই দেখবেন এমন কিছু বাক্য আছে যেগুলো শুনতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু ওসব বাক্যে তেমন কোনো তথ্য নেই
এআই আর্ট

৩. প্রেস রিলিজের মতো শোনায়

কিছু লেখা পড়লে মনে হবে যেন কোনো কোম্পানির প্রেস রিলিজ পড়ছেন। সেখানে হয়তো যুগান্তকারী, বিপ্লবী বা অত্যাধুনিকের মতো বড় বড় শব্দের ছড়াছড়ি থাকবে। কিন্তু এই শব্দগুলো কেন ব্যবহার করা হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা থাকে না।

এআই প্রায়শই কঠিন শব্দ ব্যবহার করে লেখাকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু মূল ভাবটা সহজ করে বোঝাতে পারে না। একজন অভিজ্ঞ মানুষ যখন লেখেন, তিনি আপনাকে বলবেন কোন জিনিসটা কেন ভালো বা কোনটার ব্যবহার কিছুটা ঝামেলার। যদি কোনো লেখা পড়ে আপনার মনে হয়, লেখক আপনাকে তথ্য দেওয়ার চেয়ে চমক দিতেই বেশি আগ্রহী, তাহলে সম্ভবত লেখাটা এআই দিয়ে তৈরি।

অনেকেই লেখার মধ্যে এম ড্যাশ (—) দেখলেই এআইয়ের লেখা মনে করেন। কিন্তু এটা অন্যায়। শত শত বছর ধরে লেখকরা এই চিহ্ন ব্যবহার করেছেন। লেখার মধ্যে নাটকীয়তা আনতে, বিরতি দিতে, অতিরিক্ত চিন্তা করতে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়

৪. সবকিছুই যেন অতিরিক্ত ইতিবাচক

এইয়ের লেখার আরেকটা বড় লক্ষণ হলো, এর একঘেয়ে সুর। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখাটা একই রকম ইতিবাচক আর উৎসাহে ভরপুর থাকে। যেকোনো সমস্যার সমাধান সেখানে খুব সহজভাবে তুলে ধরা হয়। কোনো জটিলতা বা হতাশার কথা থাকে না। কিন্তু মানুষের লেখা এত সরল হয় না। মানুষের লেখায় মেজাজের পরিবর্তন থাকে। লেখার মধ্যে রাগ, বিরক্তি, আনন্দ বা সংশয় ফুটে ওঠে। যখন দেখবেন কোনো লেখায় শুধু ভালো ভালো কথা বলা হচ্ছে আর কঠিন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন একটু সন্দেহ করতেই পারেন।

এআই আপনাকে কোনো কাজ করার সঠিক ধাপগুলো নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারবে, কিন্তু সেই কাজ করতে গেলে বাস্তবে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা বলতে পারবে না
এআই আর্ট

৫. বাস্তব জীবনের ঝামেলাগুলো অনুপস্থিত

এআইয়ের লেখা চেনার সবচেয়ে বড় উপায় এটা। এআই আপনাকে কোনো কাজ করার সঠিক ধাপগুলো নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারবে, কিন্তু সেই কাজটি করতে গেলে বাস্তবে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা বলতে পারবে না। যেমন ধরুন, একটি রেসিপি বই আপনাকে কেক বানানোর সব উপকরণ আর প্রণালী বলে দেবে। কিন্তু আপনার মা আপনাকে বলবেন, ‘ডিমটা ফ্রিজ থেকে বের করে একটু নরমাল হতে দিস, নইলে কেক ভালো ফুলবে না।’ এই যে বাস্তব অভিজ্ঞতার ছোঁয়া, এটাই এআইয়ের লেখায় অনুপস্থিত থাকে। লেখাগুলো বইয়ের পাতার মতো নিখুঁত হয়, কিন্তু বাস্তব জীবনের কোনো অভিজ্ঞতার ছাপ সেখানে থাকে না।

ড্যাশ দিয়ে লেখা বিচার করবেন না

অনেকেই লেখার মধ্যে এম ড্যাশ (—) দেখলেই এআইয়ের লেখা মনে করেন। কিন্তু এটা অন্যায়। শত শত বছর ধরে লেখকরা এই চিহ্ন ব্যবহার করেছেন। লেখার মধ্যে নাটকীয়তা আনতে, বিরতি দিতে, অতিরিক্ত চিন্তা করতে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। তবে এআই এম ড্যাশ ব্যবহার করে ভুল জায়গায়। যেখানে সেমিকোলন দিতে হবে, সেখানে দেয় এম ড্যাশ। অনেক সময় বাক্যের মধ্যে এম ড্যাশ প্রয়োজন না হলেও জোর করে দেয়। মানুষ এই এম ড্যাশ ব্যবহার করে লেখার অর্থ বাড়াতে, কিন্তু এআই ব্যবহার করে লেখা চৌকস দেখাতে। তাই শুধু যতিচিহ্ন দেখে রায় দেবেন না। 

তবে শেষ করার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট করে বলি, এআই ব্যবহার করা খারাপ কিছু নয়। এআই দিয়ে লেখালেখিতে সাহায্য নেওয়া মোটেও অন্যায় নয়। যেমন, বানান ঠিক করা, ভালো শব্দ খুঁজে দেওয়া, টোন ঠিক করা—এসব ক্ষেত্রে এআই দারুণ কাজের। কিন্তু আপনি যদি একটা প্রশ্ন দিয়ে বলেন, এই লেখাটা লিখে দাও, তাহলে সেটা খারাপ। আপনি বরং নিজের লেখাটা এআইকে দিয়ে আরও সুন্দর করতে পারেন, কিন্তু সম্পূর্ণ লেখাটা এআইকে দিয়ে লেখাবেন না। সর্বোচ্চ লেখার আইডিয়া নিতে পারেন। কি লিখবেন বা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কি কি লেখা হতে পারে, তা আপনি এআইয়ের থেকে জেনে নিতেই পারেন। কিন্তু লেখাটা আপনার নিজেরই লিখতে হবে। 

সূত্র: টমস গাইড ডটকম