যেসব কাজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলে বাড়বে বিপদ
চ্যাটজিপিটি এখন সবার মুখে মুখে। আপনি হয়তো অনেক কাজেই এটা ব্যবহার করছেন। কিন্তু যেকোনো শক্তিশালী জিনিসের মতো, এটা ঠিকভাবে ব্যবহার না করলে সমস্যা হতে পারে। এমন কিছু কাজ আছে, যা চ্যাটজিপিটি দিয়ে করা একদমই উচিত নয়। এই ভুলগুলো করলে আপনি বড় বিপদেও পড়তে পারেন!
চ্যাটজিপিটির সব কথা বিশ্বাস করবেন না
চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো একটু বেশিই সাহায্য করতে চায়। আর বেশি সাহায্য করতে গিয়েই বাঁধায় ঝামেলা। মাঝেমধ্যেই বানিয়ে তথ্য দেয়। যে ব্যাপারে চ্যাটবট জানে না, সে ব্যাপারেও বানিয়ে একটা তথ্য দিয়ে দেয়। একে বলে এআই হ্যালুসিনেশন। কেন বানিয়ে তথ্য দেয়, তা বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই লেখাটি: চ্যাটবট কেন বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে তথ্য দেয়
চ্যাটজিপিটি হঠাৎ করে তথ্য বানিয়ে ফেলতে পারে। এমন বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা বলতে পারে, যে গবেষণা কোনোদিন হয়নি। আইনি মামলার কথা বলতে পারে যেটা কাল্পনিক। গাণিতিক সমস্যার উত্তর ভুল দিতে পারে। চ্যাটজিপিটি-৫ মডেলে এই হ্যালুসিনেশনের হার প্রায় ১.৪ শতাংশ। হার কম শোনালেও মনে রাখতে হবে, এর মানে প্রতি ১০০টা উত্তরের মধ্যে একটা দুটোতে ভুল তথ্য দেয় চ্যাটজিপিটি।
তাই চ্যাটজিপিটি যা বলছে, সেটা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে যদি সেটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় হয়। তথ্য, পরিসংখ্যান, বৈজ্ঞানিক তথ্য—এসব দেখলে একবার গুগল করে বা অন্য সূত্র থেকে মিলিয়ে নিতে হবে। চ্যাটজিপিটি হয়তো আপনাকে দারুণভাবে সাহায্য করছে, কিন্তু এটাকেই শতভাগ বিশ্বাস করলে ঠকতে হবে।
হোমওয়ার্ক ফাঁকি দেওয়ার কাজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার না করা
স্কুলের শিশুরা যদি চ্যাটজিপিটি দিয়ে হোমওয়ার্কের উত্তর তৈরি করে, তাহলে তা মোটেই ভালো হবে না। প্রথমত, এটা একধরনের ফাঁকি দেওয়া। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকেরা খুব সহজেই বুঝতে পারেন, কে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছে, আর কে নিজে লিখেছে। তাছাড়া চ্যাটজিপিটির সাহায্যে হোমওয়ার্ক করলে শিশুদের শেখা হবে না। কোনো পিতা-মাতাই হয়তো এটা চাইবেন না।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপারটা আরও গুরুতর। ধরা পড়লে কোর্সে ফেল করিয়ে দিতে পারে। হতে পারে আরও বড় শাস্তি। তবে চ্যাটজিপিটির স্টাডি মোডকে টিউটর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা অনেকটা বাসায় শিক্ষকের পড়ানোর মতো। সেখানে শিক্ষার্থী বিষয়টা বুঝতে পারবে, কিন্তু কাজটা করতে হবে নিজেকেই।
ফাঁকি দেওয়া আর শেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন, কেউ যদি জিজ্ঞেস করে ‘এই অঙ্কটা কীভাবে করতে হয়’ তাহলে তা শেখা। কিন্তু যখন বলবে, ‘এই অঙ্কটা সমাধান করে দাও’ তখন তা ফাঁকি। প্রথমটায় আপনি বুঝতে পারবেন, কীভাবে সমাধান করতে হবে। আর দ্বিতীয়টায় শুধু উত্তর দেখে হুবহু খাতায় বসানো। তাই নিজেদের সার্থেই, চ্যাটজিপিটির সাহায্যে হোমওয়ার্ক করা উচিত নয়।
শিশুদের একা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে দেওয়া ঠিক নয়
ওপেনএআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য চ্যাটজিপিটি নয়। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তাই ১৩ বছরের কম বয়সী কারো চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
আর বয়স ১৩ বছরের বেশি হলেও তাদের ওপর পিতামাতার নজর রাখা উচিত। আপনি যদি চ্যাটজিপিটি দিয়ে বাচ্চাদের জন্য ঘুমপাড়ানি গল্প বানাতে চান, বা ওদের সঙ্গে খেলতে চান, তাহলে তা ঠিক আছে। শুধু মনে রাখতে হবে, কাজটা আপনাকেই করতে হবে, বাচ্চার হাতে সবটা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
এর পেছনে নির্দিষ্ট কারণও আছে। চ্যাটজিপিটি বেশ শক্তিশালী, কিন্তু শিশুদের জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট বোঝার মতো বিচারবুদ্ধি এর নেই। অনিচ্ছায় এমন কিছু বলে ফেলতে পারে যা শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়। আর শিশুরা এখনো বুঝে উঠতে পারে না, কোন তথ্য বিশ্বাসযোগ্য, আর কোনটা নয়। তাই বড়দের তত্ত্বাবধান জরুরি।
ভুলেই ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দেবেন না
কোনো কিছুতে সাইন আপ করতে চাইলে পেমেন্টের জন্য তথ্য দেওয়া লাগে। সেসব ঠিক আছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটির সঙ্গে চ্যাট করার সময় কখনোই ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দেবেন না।
চ্যাটজিপিটি খুব সম্ভবত নিজের থেকে ক্রেডিট কার্ড নম্বর চাইবে না। কিন্তু সাধারণ নিয়ম হিসেবে, আপনি নিজ থেকেও দেবেন না। এআই যত এগোচ্ছে, তত নতুন নিরাপত্তা হুমকিও তৈরি হচ্ছে। খারাপ মানুষেরা এআইকে কাজে লাগাতে পারে নতুন ধরনের প্রতারণায়।
হতে পারে কোনো ক্ষতিকর কোড চ্যাটজিপিটিতে হামলা চালাবে, বা চ্যাটজিপিটির নকল বানিয়ে ফেলবে। আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড নম্বর দিয়ে দেন, তাহলে বিপদে পড়বে। তাই সাবধান থাকা ভালো। যেকোনো ধরনের সংবেদনশীল তথ্য যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, পাসওয়ার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেওয়া উচিত নয়।
চিকিৎসা পরামর্শের জন্য চ্যাটবট ব্যবহার করবেন না
চ্যাটজিপিটি যে কোনো ডাক্তার নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো রোগ নিয়ে গবেষণা করতে চান, বা ডাক্তার যা বলছেন তা সহজ ভাষায় বুঝতে চান, তাহলে চ্যাটজিপিটি খুবই কাজের। চিকিৎসাবিজ্ঞানের কঠিন শব্দগুলো ব্যাখ্যা করতে এটা দারুণ। কিন্তু এর মানে এই না যে, আপনি নিজের রোগ ভালো করার জন্য চ্যাটজিপিটির পরামর্শ নেবেন। এটা বিপজ্জনক হতে পারে। চ্যাটজিপিটি আপনাকে এমন কিছু বলতে পারে যা ভুল। আর আপনি যদি সেটা বিশ্বাস করে ভুল চিকিৎসা নেন, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে।
সাধারণ পরামর্শ হলো, কোনো বিষয়ে জানার জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সেটাই শতভাগ সত্য ধরে মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। চিকিৎসা বিষয়ে সবসময় পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মোদ্দাকথা হলো, চ্যাটজিপিটি একটা অসাধারণ প্রযুক্তি যেটা আমাদের জীবনকে সহজ করতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এর সীমাবদ্ধতা বুঝতে হবে। কখন এটা ব্যবহার করা উচিত আর কখন উচিত নয়, তা জানতে হবে। কারণ, চ্যাটজিপিটি আপনার চিন্তাভাবনার পরিপূরক হতে পারে, প্রতিস্থাপন নয়। আপনার নিজের বিচারবুদ্ধি, শেখার ইচ্ছা, সৃজনশীলতা কখনো এআই দিয়ে বদলানো যাবে না। চ্যাটজিপিটিকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করুণ, নির্ভরশীলতা হিসেবে নয়।