ফ্রিজারের বাতাসের জলীয় বাষ্পের চাপ সমান রাখতে বরফ বাষ্পে পরিণত হয়। ঊর্ধ্বপাতনের সময় খাবারে থাকা পানি খাবারের গায়ে জমে বরফের স্ফটিকে পরিণত হয়।

যে কোনো ধরনের খাবার সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ দারুণ এক যন্ত্র। ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা বাইরের পরিবেশে বের করে দেয় যন্ত্রটি। ফলে ফ্রিজের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারে না। কারণ, কম তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। ফলে ফ্রিজে অনেক দিন খাবার ভালো থাকে। কিন্তু এই ভালো থাকার সময়সীমা কত? মানে ফ্রিজে কোনো খাবার রাখলে কি সেটা সারাজীবন ভালো থাকবে?

না, সেটা সম্ভব নয়। অনন্তকাল ফ্রিজে খাবার ভালো রাখার কোনো সুযোগ নেই। খেয়াল করলে দেখবেন, ফ্রিজের ফ্রিজার অংশে (ফ্রিজের যে অংশে খাবার জমে যায়) তরল জিনিস রাখলে তা বরফে পরিণত হয়। যেমন, পানি বা ড্রিঙ্কস। কিন্তু এই বরফ আরও বেশিদিন রাখলে তা চিমসে যায়। দেখে মনে হয় বরফ শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে। হ্যাঁ, সত্যিই বরফ শুকিয়ে যায়। ফ্রিজের শুষ্ক বাতাসে বরফ তরল না হয়ে সরাসরি জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এ ঘটনাকে বলা হয় সাবলিমেশন বা ঊর্ধ্বপাতন।

ফ্রিজারের বাতাসের জলীয় বাষ্পের চাপ সমান রাখতে বরফ বাষ্পে পরিণত হয়
ছবি: সংগৃহীত

ফ্রিজারের বাতাসের জলীয় বাষ্পের চাপ সমান রাখতে বরফ বাষ্পে পরিণত হয়। ঊর্ধ্বপাতনের সময় খাবারে থাকা পানি খাবারের গায়ে জমে বরফের স্ফটিকে পরিণত হয়। খাবারের আর্দ্রতা কমার কারণে ফল ও শাক সবজি শুকিয়ে চিমসে হয়ে যায়। মাংস হয়ে যায় চামড়ার মতো স্থিতিস্থাপক। মাংসের গায়ে কালো দাগ পড়ে। পানিশূন্যতার কারণে খাবারের মধ্যে ফাঁকা স্থান তৈরি হয়৷ ফাঁকা স্থানে ফ্রিজের বাতাস মুক্ত থাকায় জারণ বিক্রিয়া আরও দ্রুত ঘটে। ফলে চর্বিযুক্ত খাবার বিস্বাদ লাগে। ফ্রিজারের এমন পরিণতিকে ইংরেজিতে বলে ফ্রিজার বার্ন। বাংলায় এর ভালো কোনো নাম নেই। তাই ফ্রিজার বার্নকে বাংলায় শীতল দগ্ধ বা হিমপোড়া বলতে পারি।

ফ্রিজারে বেশি দিন খাবার রাখা ঠিক নয়। বরং কিছুদিন পরপর ফ্রিজারের খাবার শেষ করে নতুন ও সতেজ খাবার রাখা ভালো।
কিছুদিন পরপর ফ্রিজারের খাবার শেষ করে নতুন ও সতেজ খাবার রাখা ভালো
ছবি: সংগৃহীত

ফ্রিজার বার্নের কবলে পড়া খাবার অস্বাস্থ্যকর হলেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকির ভয় নেই। তাই এ ধরনের খাবার খাওয়া নিরাপদ। প্রায় সব ধরনের খাবারই ফ্রিজার বার্নের শিকার হয়। তবে খাবারে পানির পরিমাণ বেশি হলে ফ্রিজার বার্ন হয় দ্রুত। এ পরিস্থিতি থেকে খাবারকে নিরাপদ রাখতে বায়ুরোধী পাত্রে খাবার সংরক্ষণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বায়ুরোধী পাত্র না থাকলে খাবারকে পলিথিন বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে শক্ত করে মুড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়া অনেকটা কমে।

ফ্রিজারে বেশি দিন খাবার রাখা ঠিক নয়। বরং কিছুদিন পরপর ফ্রিজারের খাবার শেষ করে নতুন ও সতেজ খাবার রাখা ভালো। আবার অনেকে ফ্রিজার বার্ন থেকে খাবার ভালো রাখতে ফ্রিজারের ভেতরে ঢাকনা খোলা পানির পাত্র রাখার পরামর্শ দেন। এতে ফ্রিজের আর্দ্রতার চাপ সমান থাকে। খাবারের ঊর্ধ্বপাতন কমে।

ফ্রিজার বার্নের মতো আরেকটি প্রক্রিয়ার নাম ফ্রিজার-ড্রায়িং বা হিমায়িত শুষ্ককরণ। সাধারণত অনেক দিন খাবার ভালো রাখার জন্য এ পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ করা হয়।

সাধারণ ফ্রিজারের চেয়ে নন-ফ্রস্ট (বরফ জমে না এমন ফ্রিজ) ফ্রিজে ফ্রিজার বার্ন আরও বেশি হয়। কারণ, এসব ফ্রিজের বরফের স্তরটি কিছু সময় পরপর গলে যায়। কিন্তু জলীয় বাষ্পের চাপ থাকে অনেক কম। ফলে ঊর্ধ্বপাতন বেশি হয়।

ফ্রিজার বার্নের মতো আরেকটি প্রক্রিয়ার নাম ফ্রিজার-ড্রায়িং বা হিমায়িত শুষ্ককরণ। সাধারণত অনেক দিন খাবার ভালো রাখার জন্য এ পদ্ধতিতে খাবার সংরক্ষণ করা হয়। নভোচারী ও পর্বতারোহীদের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এছাড়া ইনস্ট্যান্ট কফি ও শুকনো ফল তৈরিতে খাবারকে হিমায়িত করে শুকানো হয়। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে খাবারকে প্রচণ্ড ঠান্ডা করে। তারপর বায়ুশূন্য যন্ত্রের সাহায্যে খাবারের চাপ কমিয়ে খাবারের লেগে থাকা বরফ সরিয়ে ফেলে। ফলে, ফ্রিজার বার্ন ছাড়াই খাবার হয় শুষ্ক ও দীর্ঘমেয়াদী। সাধারণ খাবার হয়ে ওঠে অসাধারণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস

আরও পড়ুন