প্রযুক্তি
২০২৪ সালের বৈপ্লবিক ১০ প্রযুক্তি
প্রতি বছর এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ আসন্ন বছরের বৈপ্লবিক প্রযুক্তিগুলো তুলে ধরে। তাদের মতে, এই প্রযুক্তিগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে, বদলে দিতে পারে বৈশ্বিক অবকাঠামো থেকে শুরু করে চিন্তাধারা, জীবনযাপনের ধরন। চলতি বছর এমআইটি টেকনোলজি রিভিউতে উঠে আসা নির্বাচিত দশ প্রযুক্তির কথা থাকছে বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য।
সব কাজের কাজী এআই
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, ওপেনএআই
অবস্থা: বর্তমান
২০২২ সালের নভেম্বরে বাজারে আসে চ্যাটজিপিটি। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। গত জানুয়ারিতেই চ্যাটজিপিটি সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ওয়েব অ্যাপগুলোর একটিতে পরিণত হয়। অন্যতম শক্তিশালী এই নিউরাল নেটওয়ার্ক এখন সবার জন্য উন্মুক্ত।
গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে পাল্লা দিতে বাজারে আসে গুগল বার্ড। পারেনি, মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে বদনাম কুড়িয়েছে সবার কাছে। এদিকে মাইক্রোসফটের বিংও এসে যায় বাজারে। সেটাও ঠিক ‘আপ টু দ্য মার্ক’ ছিল না। তবে এ থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠান দুটোই বাজারে এনেছে তাদের এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নত সংস্করণ। গুগল তো নতুন এআই-ই বাজারে এনেছে, জেমিনি। এটি একই সঙ্গে ছবি, টেক্সট, ভিডিও, কোড সব বুঝতে পারে, এবং নির্দেশানুযায়ী এগুলো তৈরিও করে দিতে পারে। পাল্লা দিয়ে মেটাও (ফেসবুকের মাতৃপ্রতিষ্ঠান) বাজারে এনেছে নতুন এআই।
তবে চ্যাটজিপিটিও থেমে নেই। এনেছে নতুন সংস্করণ, চ্যাটজিপিটি-৪। আগের সংস্করণ কেবল টেক্সট বা লেখার মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত। নতুন সংস্করণ টেক্সটের পাশাপাশি ছবিও তৈরি করে দিতে পারে। তবে এসব সুবিধা পেতে অর্থ খরচ করতে হয়।
আলাদিনের জাদুর চেরাগের মতো এআই বোতল থেকে বেরিয়ে পড়েছে।আর পিছু ফেরা নয়।সামনের সময়টা এআইয়ের।আমাদের শুধু ব্যবহার করতে জানতে হবে।
প্রথম জিন সম্পাদনানির্ভর চিকিৎসা
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: ক্রিসপার থেরাপিউটিকস, এডিটাস মেডিসিন, প্রিসিশন বায়োসায়েন্সেস, ভারটেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস
অবস্থা: বর্তমান
যেকোনো প্রাণীর জীবনের নীলনকশা লেখা থাকে যে ডিএনএ-তে, তার একধরনের একক বলা যায় জিনকে। এই জিন বলে দেয় দেহের কার্যকরী একক প্রোটিনগুলো কেমন হবে। তাই যেকোনো রোগ দ্রুত সারিয়ে তোলা সম্ভব জিন সম্পাদনা ও বদলে দেওয়ার মাধ্যমে। খুব সরল করে বললে, ডিএনএর নির্দিষ্ট জায়গায় কেটে, জিন বদলে দিয়ে আবার জুড়ে দিলেই হলো। সেরে যাবে রোগ!
মাত্র ১১ বছর আগে ক্রিসপার প্রযুক্তির আবিষ্কার অবিশ্বাস্য বিষয়টি বাস্তবে রূপ দেয়। ক্রিসপার মূলত একধরনের কাঁচি। ডিএনএ কাটাকুটির কাজটা এই ক্রিসপার দিয়েই করতে হয়। এই ক্রিসপারনির্ভর প্রথম চিকিৎসা অনুমোদন পেয়েছে ২০২৩ সালের শেষদিকে।
রোগটির নাম সিকল সেল অ্যানিমিয়া। বংশগত রোগ। বেটা-গ্লোবিন নামে একটি জিনে মিউটেশনের ফলে এ রোগ হয়৷ এই জিন রক্তের হিমোগ্লোবিন প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা দেয়৷ এতে মিউটেশন হলে হিমোগ্লোবিনের গঠন বদলে যায়। ফলে লোহিত রক্তকণিকার স্বাভাবিক আকার বদলে সিকল বা কাস্তের মতো হয়ে যায়। অনেকটা অর্ধচন্দ্রের মতো। অস্বাভাবিক আকৃতির কারণে এটি আটকে যায় রক্তনালিতে। তখন রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় ও রক্তে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়৷ ফলে মৃত্যুও হয় অনেকের।
এ রোগ প্রতিকারে এফডিএ ক্রিসপারনির্ভর ‘ক্যাসজেভি’ চিকিৎসা পদ্ধতি অনুমোদন করেছে। এতে মূলত তিনটি জিনিস প্রয়োজন—ক্যাস৯ প্রোটিন, গাইড আরএনএ ও সুস্থ জিন। সিকল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে গাইড আরএনএ ব্যবহার করে রোগীর স্টেম কোষে ত্রুটিপূর্ণ বেটা-গ্লোবিন জিন শনাক্ত করে ক্যাস৯ প্রোটিনের আণবিক কাঁচি দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয়। পরে সে অংশে বিজ্ঞানীদের সরবরাহকৃত সুস্থ জিন বসালেই হয়ে যায়। এই সুস্থ বেটা-গ্লোবিন জিন হিমোগ্লোবিন তৈরির যে নির্দেশনা দেয়, তার গঠন ঠিক থাকে৷
অনেক রোগীর মতে, এটি জীবন বদলে দেওয়া প্রযুক্তি। এখন চ্যালেঞ্জ হলো, কম খরচে এই চিকিৎসা সবাই যেন নিতে পারে, তা নিশ্চিত করা।
হিট পাম্পের জয়জয়কার
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: ডাইকিন, মিতসুবিশি, ভিয়েসমান
অবস্থা: বর্তমান
বিদ্যুৎ ব্যবহার করে কোনো জায়গা ঠান্ডা বা গরম করতে পারে হিট পাম্প। শুনে নিশ্চয়ই বড় কিছু মনে হচ্ছে না। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই সময়ে এটি হয়ে উঠেছে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।
এতদিন এ কাজে মূলত ব্যবহৃত হতো জীবাশ্ম জ্বালানি। সে জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়লে বাঁচবে প্রকৃতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে ২০২৩ সালে এই হিট পাম্পের ব্যবহার বেড়েছে ৪০%। গোটা বিশ্বে এর ব্যবহার বেড়েছে ১১%। সব মিলে এর ব্যবহার ২০৩০ সালের মধ্যে কমাতে পারে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি টন গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ।
এখন চ্যালেঞ্জ হলো, চাহিদা অনুসারে যোগান দেওয়া। এশিয়ার মতো বড় অঞ্চলজুড়ে বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবে এখন পর্যন্ত আশাজনকই মনে হচ্ছে। পৃথিবীর সেরে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এ প্রযুক্তি।
টুইটার-পরবর্তী থ্রেডস যুগের সূচনা
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: ব্লু-স্কাই, ডিস্কর্ড, মাস্টোডোন, নস্টার, থ্রেডস
অবস্থা: বর্তমান
বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও বিশ্বব্যাপী মত প্রকাশের অন্যতম বড় মাধ্যম টুইটার। গত প্রায় ১৭ বছর ধরে টুইটার নামের সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে অনেক বড় বড় ঘটনার জন্ম হয়েছে। আরব বসন্তের মতো বিপ্লব যেমন হয়েছে, তেমনি জ্যাক স্নাইডারের ‘জাস্টিস লিগ’ মুভি মুক্তি পাওয়ার পেছনেও ভূমিকা রেখেছে টুইটার। এককথায়, পৃথিবীজুড়ে বড়-ছোট যাই ঘটুক, সব কিছুর খোঁজ ছিল এতে। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল পেরিয়ে মানুষ মনের কথা বলতে পারত এতে নিঃসংকোচে।
এখন এ পরিস্থিতি বদলে গেছে অনেকখানি। ডিস্কর্ড থেকে নস্টারের মতো মাধ্যমগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর পেছনে অনেকেই দায়ী করছেন ইলন মাস্ককে। টুইটার কিনে নিয়ে নাম বদলে রেখেছেন এক্স (X), বদলেছেন নানা কিছু। সেগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে এর পেছনে। তবে খেলার পুরো রূপ বদলে দিয়েছে ফেসবুকের মাতৃপ্রতিষ্ঠান মেটা। বাজারে এনেছে থ্রেডস। প্রতিমাসে এর ব্যবহারকারীর বর্তমান সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মত প্রকাশ কিংবা বর্তমান-ভবিষ্যতের পৃথিবীতে মানুষের যোগাযোগে বড় পরিবর্তন হিসেবে গণ্য করা উচিত এ ঘটনাকে।
ভূ-তাপীয় উত্তাপ ব্যবহারে আরেক ধাপ এগিয়ে
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: আল্টারক এনার্জি, ফার্ভো এনার্জি, উটাহ ফোর্জ ল্যাব
অবস্থা: ৩-৫ বছরের মধ্যে আসতে পারে
জিওথার্মাল হিট, বাংলায় বলা হচ্ছে ভূ-তাপীয় উত্তাপ কার্বন মুক্ত শক্তির উৎস। জীবাশ্ম জ্বালানির একধরনের বিকল্প। তবে গোটা বিশ্বের নবায়নযোগ্য শক্তির মাত্র ১ শতাংশ আসে এ থেকে। কারণ, প্রয়োজনীয় কারখানা বানাতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ভূ-অবস্থা।
এ পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে ফার্ভো এনার্জি নামের মার্কিন এক প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। তাদের একটি কারখানা স্থাপিত হয়েছে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায়। আরেকটি তারা নির্মাণ করছে একই দেশের উটাহে। ২০২৬ সালের মধ্যে ক্লিন বা দূষণহীন, স্থিতিশীল ও নবায়োনযোগ্য শক্তি সরবরাহের লক্ষ্যে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান উন্নত প্রযুক্তিতে সুনির্দিষ্ট ভূ-অবস্থার প্রয়োজনীয়তা কমেছে অনেকটা।
বর্তমানে এ জন্য হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে তুলনামূলক কঠিন পাথর ফাটানো হয়। এসব পাথর ভূ-কুয়োর অনেকটা গভীরে থাকে। এসব পাথরে পরে পানি প্রবেশ করানো হয়, এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় বাষ্প আর এই বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে তৈরি করা হয় বিদ্যুৎ। ফার্ভো নতুন পদ্ধতিতে এ ধরনের ভূ-কুয়োয় চাপ বাড়িয়ে-কমিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কম-বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি শক্তি জমিয়েও রাখতে পারবে। চাহিদা বাড়লে প্রয়োজনে সরবরাহ করতে পারবে বাড়তি এই শক্তি।
এ পদ্ধতিতে ভূকম্পনের ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে বিতর্ক চলছে, তবে এ পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার অনেকটা কমাতে পারলে এ প্রযুক্তিতে মনযোগ দেওয়াটা প্রয়োজনীয়ও বটে।
ওজন কমাবে ওষুধ
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: এলি লিলি, নোভার্টিস, নোভো নর্ডিস্ক, ফাইজার, ভাইকিং থেরাপিউটিকস
অবস্থা: বর্তমান
ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস থেকে ক্যান্সারের মতো সমস্যারও যোগ আছে। এ জন্য কিছু ওষুধ রয়েছে বাজারে। তবে আরও কার্যকর এক ওষুধ অনুমোদন পেয়েছিল ২০২১ সালের জুনে। উইগোভি নামের এই ওষুধ খাবার পর পাকস্থলী যেসব হরমোন নিঃসরণ করে, সেরকম একধরনের হরমোনের নকল করে। ফলে গ্রহীতার মনে হয়, পেট ভরা। এভাবে সপ্তাহে একবার এ ওষুধ দেহে প্রবেশ করিয়ে (ইনেজকশনের মাধ্যমেও হতে পারে) ১২ থেকে ১৫% ওজন কমানো সম্ভব।
তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। বমি ভাব, ডায়েরিয়া, বমি হওয়া ইত্যাদি। আবার এগুলোর দীর্ঘকালীন প্রতিক্রিয়া এখনো অজানা। এ জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে এসব ওষুধ যে লাখো-কোটি মানুষকে সাহায্য করতে পারে, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
মুরের সূত্র রক্ষায় চিপলেট
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেস, ইন্টেল, ইউনিভার্সাল চিপলেট ইন্টারকানেক্ট এক্সপ্রেস
অবস্থা: বর্তমান
এখানে মূল বিষয়টা হলো প্যাকেজিং! শুনতে বিরক্তিকর ও অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে হয়তো। তবে আসলে কম্পিউটার নির্মাণে এই প্যাকেজিং হয়ে উঠেছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিপলেটের (অতিক্ষুদ্র চিপ) ব্যবহার। আর এর পেছনে আছে মুরের সূত্র বা মুর’স ল।
ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর বলেন, প্রতি দুই বছর পরপর আইসিতে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দ্বিগুণ করলে ট্রানজিস্টর প্রতি গড় উৎপাদনের খরচ সর্বনিম্ন হয়। এভাবে ট্রানজিস্টরের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে, কার্যক্ষমতাও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তাঁর এই পর্যবেক্ষণ মুর’স ল নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে এসে সেটা আর করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ চিপের আকার ছোট করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ জন্য এখন চিপনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও ক্ষুদ্র চিপ বা চিপলেট বানাচ্ছে। এসব চিপ নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারে। আর চিপ ছোট হলে এত ত্রুটির পরিমাণও কমে যায়, ফলে খরচও কমে। পরে চিপগুলোকে একসঙ্গে প্যাকেট করে বা জুড়ে দিয়ে পুরো সিস্টেমটা বানানো হয়। মুরের সূত্র রক্ষায় এ ক্ষেত্রে এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই প্যাকেজিং বা প্যাকেট করার পদ্ধতি। পাশাপাশি রাখলে কম জায়গা নেবে, নাকি ওপরে-নিচে—এসব খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর দামের পাশাপাশি কার্যকারিতার মতো বিষয়ও নির্ভর করছে এখন।
প্যাকেজিংয়ে একটা বড় সমস্যা ছিল, একই কোম্পানি সব ধরনের চিপলেট বানায় না। বিভিন্ন কোম্পানির চিপ একসঙ্গে প্যাকেট করা সহজ নয়, কারণ এর কোনো আদর্শ বা প্রমিত নীতি নেই। তবে বর্তমানে ‘ইউনিভার্সাল চিপলেট ইন্টারকানেক্ট এক্সপ্রেস’ নামে নতুন প্রমিত নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। তাত্ত্বিকভাবে, এর মাধ্যমে বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের চিপ সহজে প্যাকেট করা, অর্থাৎ একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে সিস্টেম বানানো সম্ভব হবে।
নতুন প্রজন্মের সৌরকোষ
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: বিয়ন্ড সিলিকন, ক্যালাক্স, ফার্স্ট সোলার, হানওয়া কিউ সেলস, অক্সফোর্ড পিভি, সুইফট সোলার, ট্যান্ডেম পিভি
অবস্থা: ৩ থেকে ৫ বছর
সৌরকোষের উন্নতির চেষ্টা চলছে বহুদিন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সেই সূত্র ধরে এসেছে আরেকটি রেকর্ড পরিমাণ কার্যক্ষম সৌরকোষ বা সোলার সেল। আগের রেকর্ডটি টিকেছে পাঁচ বছর, এটাও হয়তো বেশিদিন টিকবে না।
এমনিতে সিলিকনভিত্তিক সৌরকোষের কার্যক্ষমতা ৩০%-এরও কম। আর পার্ভোস্কাইট সৌরকোষগুলোর কার্যক্ষমতা ২৬ শতাংশের মতো। পার্ভোস্কাইট মানে, যেসব পদার্থের কেলাসের গঠন ABX3 রাসায়নিক সংকেত মেনে চলে। প্রথম এটি যে খনিজে পাওয়া যায়, সেটা ছিল ক্যালসিয়াম টাইটেনিয়াম অক্সাইড (CaTiO3)। এরই আরেক নাম পার্ভোস্কাইট। বর্তমানের উন্নত সৌরকোষগুলো পার্ভোস্কাইট ট্যানডেম সৌরকোষ, অর্থাৎ পার্ভোস্কাইটের সঙ্গে সিলিকনের সংমিশ্রণে তৈরি। এগুলোর কার্যক্ষমতা বর্তমানে ৩৩ শতাংশের মতো। সমস্যা হলো, সিলিকন কোষগুলো যুগ যুগ ধরে টেকে। তবে পার্ভোস্কাইট কোষগুলো খুব টেকসই নয়। পানি বা তাপে ক্ষয়ে যায়।
তবে এগুলো আরও উন্নত হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বেশ উন্নতমানের সৌরকোষ বানানো যাবে এভাবে। ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যেমন কমবে, তেমনি কমবে খরচ। সাশ্রয়ী ও টেকসই সৌরকোষের সেবা পাওয়া যাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
অ্যাপল ভিশন প্রো
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: অ্যাপল
অবস্থা: ২০২৪
বারবার এ ধরনের হেডসেট-কম্পিউটার কাম গ্লাস বা চশমা বানানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গুগল গ্লাস, মাইক্রোসফট হলোলেন্স থেকে শুরু করে মেটার কোয়েস্ট—কোনোটিই আশানুরূপ সফলতা পায়নি। এবার মাঠে নেমেছে অ্যাপল। তাদের অ্যাপল ভিশন প্রো এখন পর্যন্ত বানানো সবচেয়ে সফল ও কার্যক্ষম হেডসেট-কম্পিউটার কাম গ্লাস।
এর মূল আকর্ষণ মিক্সড রিয়েলিটি। এতে ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে বাস্তব জগতের বিভিন্ন বস্তুর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বস্তু মিলেমিশে যায়। যেমন আপনার রুমের দেয়ালের কোণেই হয়তো ঝুলে থাকতে দেখবেন স্পাইডার-ম্যানকে। টুইন বা যমজ মাইক্রো-ওলেড ডিসপ্লেতে দারুণ রেজ্যুলুশনে দেখা যাবে সবকিছু।
প্রশ্ন হলো, এ জিনিস মানুষ ব্যবহার করবে কী কাজে? শুধু ভিডিও দেখতে? অ্যাপল ইতিমধ্যে বেশ কিছু অ্যাপ বানিয়েছে, ডেভেলপাররা নিশ্চয়ই আরও বানাবেন। তবু প্রশ্ন থেকেই যায়, এটা কি শুধু দামি ভিডিও দেখার চশমা হিসেবেই ব্যবহৃত হবে? অ্যাপল আবার বলছে, চশমার কাচের বাইরের দিকে ব্যবহারকারীর ভার্চ্যুয়াল চোখের প্রতিকৃতি থাকবে। কেমন অদ্ভুত লাগবে না? ৩ হাজার ৪৯৯ ডলার দিয়ে এ জিনিস কিনে পরবে তো মানুষ?
সেটা জানা যাবে সময়ে। তবে মিক্সড রিয়েলিটির এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ বিকাশের, সে কথা অস্বীকারের উপায় নেই।
এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান: ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাব, জুলিখ সুপারকম্পিউটিং সেন্টার, চায়না’স সুপারকম্পিউটিং সেন্টার ইন উক্সি
অবস্থা: বর্তমান
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যুগ আসি আসি করছে, তার আগে বর্তমানে ভরসা সুপারকম্পিউটারই। সেই সুপারকম্পিউটার জগৎ কাঁপিয়ে দিয়েছিল ফ্রন্টিয়ার, ২০২২ সালের মে-তে। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবটেরিতে অবস্থিত এই কম্পিউটার সেকেন্ডে ১০১৮ বা এক্সাফ্লপ কাজ করতে পারে। সহজ করে বললে, ১ লাখ উন্নতমানের ল্যাপটপের সমপরিমাণ কাজ করতে পারে সেকেন্ডে।
একইরকম দ্রুতগামী আরও দুটো সুপারকম্পিউটার আসছে সম্প্রতি—এল ক্যাপিটান, আসবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে। আরেকটির নাম অরোরা, আসবে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ইন ইলিনয়ে। ওদিকে ইউরোপেও আসছে প্রথম এক্সাস্কেল সুপারকম্পিউটার। জুপিটার নামের এই কম্পিউটার সক্রিয় হবে ২০২৪ সালে। চীনেও আসতে যাচ্ছে এ ধরনের সুপারকম্পিউটার।
বর্তমানে ফ্রন্টিয়ার ব্যবহার করে মিল্কিওয়েতে গ্যাসের প্রবাহের মতো জটিল বিষয়ে মডেল বানানো হচ্ছে। একটা গোটা গ্যালাক্সির পরিসরে প্রবাহীর এ ধরনের জটিল মডেল সুপারকম্পিউটার ছাড়া সম্ভব হতো না। বোঝা যাচ্ছে, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা, বায়ুগতিবিদ্যার মতো জটিল বিষয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওষুধ বা রাসায়নিকের সিমুলেশন—নানা ক্ষেত্রে কাজে লাগবে এসব কম্পিউটার।
