কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ঝুঁকিতে যেসব চাকরি

প্রযুক্তি যত এগিয়েছে, ততই বদলেছে কাজের ধরন ও পরিধি। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি বেড়েছে। ফলে গত ২০০ বছরের ইতিহাসে কয়েকবার বদলেছে পৃথিবীর শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের চিত্র। বিশেষজ্ঞরা একে ‘শিল্পবিল্পব’ বলে আখ্যায়িত করেন। এই মুহূর্তে নতুন আরেকটি শিল্পবিল্পবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ বিকাশকে বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিল্পব। অন্যসব শিল্পবিল্পবের মতো, এটাও কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসবে বড় পরিবর্তন। পরিবর্তনটা কেমন হবে, তা সঠিক জানা না থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে একধরনের ভীতি আছে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই সামনের দিনগুলোতে কর্মক্ষেত্র কেমন হবে, সে ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে ভবিষ্যতে চাকরির বাজার কেমন হবে, সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আগামী ৫ বছরে কোন দক্ষতাগুলো বা চাকরিগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে, কোন চাকরিগুলো হারিয়ে যেতে পারে, তুলে ধরা হয় তাও।

প্রতিবেদনটি চাকরিদাতাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরিপ্রার্থী বা এখন থেকে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করছেন, এমন মানুষদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৯০ লাখ নতুন কর্মক্ষেত্র বা চাকরি তৈরি হবে। আর প্রায় ৮ কোটি ৯০ লাখ চাকরি হারিয়ে যাবে শ্রমবাজার থেকে। মোটের ওপর প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ চাকরি হারিয়ে যাবে গোটা পৃথিবী থেকে।

এতে করে কিছু কিছু ক্ষেত্র বা প্রতিষ্ঠান বেশ লাভবান হবে। তৈরি হবে নতুন নতুন চাকরি। কিছু ক্ষেত্র হবে ক্ষতিগ্রস্থ। কম দক্ষ বা একইধরনের কাজ করতে হয়, এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। চাকরি হারিয়ে যাওয়া বা তৈরির পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে প্রযুক্তি। আরও ভালো করে বললে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, আগামীদিনগুলোতে চাহিদা তুঙ্গে থাকবে, এমন কিছু চাকরি হলো—

·         এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ

·         সাস্টেইনেবেলিটি বিশেষজ্ঞ

·         বিজনেস ইন্টিলিজেন্স বিশেষজ্ঞ

·         ইনফরমেশন সিকিউরিটি বা তথ্য-নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ

·         ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার বা বাণিজ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ

·         ডাটা অ্যানালিস্ট অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট

·         রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ার বা রোবট প্রকৌশলী

·         বিগ ডাটা স্পেশালিস্ট বা বিগ ডাটা বিশেষজ্ঞ

·         এগ্রিকালচারাল ইকুইপমেন্ট কৃষি যন্ত্র পরিচালক

·         ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন বিশেষজ্ঞ

এসব পদে আগামী কয়েক বছরে এখনকার চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি জনবলের প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে, আগামী দিনগুলোতে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি পদ হলো—

·         ব্যাংক টেলার (টাকা গুণেন যিনি) এবং সংশ্লিষ্ট সহযোগী পদ

·         পোস্টাল সার্ভিস বা ডাকসেবা সংশ্লিষ্ট পদগুলো

·         ক্যাশিয়ার বা হিসাবরক্ষক এবং টিকেট বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সহযোগী পদগুলো

·         ডাটা নিবন্ধনের কাজ

·         ম্যাটেরিয়াল রেকর্ডিং ও স্টক-কিপিং ক্লার্ক

·         অ্যাকাউন্টিং, বুককিপিং ও পেরোল ক্লার্ক

·         স্ট্যাটিসটিক্যাল, ফাইন্যান্স এবং ইনস্যুরেন্স ক্লার্ক

প্রযুক্তি যেমন অসুবিধা বয়ে আনবে, তেমনি তৈরি করবে নানারকম সুযোগ ও সুবিধা। চাকরি নিয়ে তাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ যত উন্নতি করেছে, ততই গৎবাঁধা ও কায়িক শ্রম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। শারীরিক শ্রম বা গতানুগতিক কাজগুলো যন্ত্রকে দিয়ে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেছে। সামনের দিনগুলো এ প্রচেষ্টা আরও জোরদার হতে পারে।

ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে প্রধান চাহিদা থাকবে বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতার। এরপরই থাকবে সৃজনশীল চিন্তা, সহনশীলতা, নমনীয়তা ও উদ্যম, অনুপ্রেরণা ও আত্মসচেতনতা, কৌতুহল ও জীবনমুখী শিক্ষার দক্ষতা। এই দক্ষতাগুলোর সঙ্গে কোনো বিশেষ সফটওয়্যার বা প্রযুক্তির সম্পর্ক নেই। বরং নানা ধরনের প্রযুক্তি পরিচালনায় এসব দক্ষতা কাজে আসবে।

বুঝতেই পারছেন, সামনের দিনে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য কী কী গুণ প্রয়োজন। গতানুগতিক কাজ থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে গড়ে করে তুলতে হবে নতুন দিনের জন্য। স্মার্ট প্রযুক্তির চেয়েও স্মার্ট হতে হবে আমাদের। তাহলে অনাগত ভবিষ্যত ধরা দেবে আশীর্বাদ হয়ে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: ফাস্ট কোম্পানি, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম