ফ্রিজ কীভাবে কাজ করে

ফ্রিজে চলে বাষ্পীভবন আর ঘনীভবনের চক্র। জেনে নিই কীভাবে তা ঠান্ডা রাখে খাবারকে।

খাবারকে জীবাণু থেকে দূরে রাখতে হলে তা ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন। ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ব্যাকটেরিয়া-ছত্রাক মোটামুটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। নিজেদের বংশবিস্তার করতে পারে না। কিন্তু তাপমাত্রা ৪ থেকে বাড়লেই তা হয়ে ওঠে অণুজীবদের জন্য আদর্শ। নষ্ট হয় খাবার। ফলে তাপমাত্রা কমিয়ে খাবার বেশ কিছু সময় সংরক্ষণ করা সম্ভব।

হাজার বছর ধরে মানুষ খাবার রক্ষা করতে লড়েছে জীবাণুদের সঙ্গে। উদ্ভাবন করেছে নানা সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। প্রাচীনকালে গ্রিকরা তুষারে গর্ত খুঁড়ে খাবার জমিয়ে রাখত। আঠারো শতকের দিকে ইউরোপে ব্যবহৃত হতো সল্টেড আইস। বরফে লবণ দেওয়া হলে এর তাপমাত্রা আরও কমে যায়! এটাই সল্টেড আইস। ১৮০০ সালের আগে আজকের চেহারার রেফ্রিজারেটরের দেখা মেলেনি।

আধুনিক রেফ্রিজারেটর বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ঠান্ডা রাখে সবকিছু। এই বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়া নির্ভর করে একটি তরলের ওপর। যে তরল বাষ্পীভবনের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয় গ্যাসে। এ ঘটনা যেকোনো তল থেকে তাপ সরিয়ে আশপাশের তাপমাত্রা হ্রাস করতে পারে। মানুষের শরীরেও কিন্তু ঘাম বেরিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া দেখা যায়। এটিও বাষ্পীভবন। শরীরের তাপ ঘামকে বাষ্পীভূত করে, যা তাপ শোষণ করে একটা ঠান্ডা অনুভূতির জন্ম দেয়। স্যানিটাইজার বা যেকোনো অ্যালকোহল দ্রবণের ছোঁয়া শরীরে লাগলে ঠান্ডা অনুভূত হয়। কারণ, অ্যালকোহলের স্ফুটনাঙ্ক বেশ কম। তাই তাপ শুষে তলকে ঠান্ডা করার ঘটনাটা ঘটে বেশ দ্রুত। পুরো ব্যাপারটিকে রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে তুলনা করলে চামড়ার জায়গায় তাতে থাকে পাইপের একটি নেটওয়ার্ক। পাইপগুলোর মাঝ দিয়ে রেফ্রিজারেন্ট নামের একটা তরল প্রবাহিত হয়। রেফ্রিজারেন্টে তাপ দেওয়া হলে তা বাষ্পীভূত হয় এবং পাইপ নেটওয়ার্কে বাইরের একটি কয়েল সেই তাপ শোষণ করে। পুনরায় তরল অবস্থায় আসে রেফ্রিজারেন্ট। আর অন্যদিকে পাইপগুলো হয় হিমশীতল। ফ্রিজের অভ্যন্তরে সেই শীতলতা খাবারের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।

ফ্রিজ যেভাবে কাজ করে

ওজোন বিধ্বংসী

১৯২০ সালের দিকে রেফ্রিজারেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (CFC)। এর আগে ব্যবহৃত গ্যাসগুলো ছিল দাহ্য ও বিষাক্ত। সে তুলনায় সিএফসি বেশ নিরাপদ বিকল্প। তবে মানবদেহের ক্ষতি কমাতে গিয়ে ক্ষতি হলো পরিবেশের। রেফ্রিজারেটর নষ্ট হলে বা ধ্বংস করা হলে অবমুক্ত হয় সিএফসি গ্যাস। গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরে অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ওজোনস্তরে গর্তের সৃষ্টি করে। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে ওজোনস্তর। তাই ওজোনস্তরের ক্ষতি হওয়ার মানে সুখকর নয়। ব্যাপারটা টের পাওয়ার পর ১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়।

শীতলতার আবিষ্কার

আধুনিক রেফ্রিজারেটর বহু বিজ্ঞানীর অনেক বছরের পরিশ্রমের ফসল। শুরুটা হয়েছিল স্কটিশ আবিষ্কারক উইলিয়াম কালেনের হাতে। ১৭৪৮ সালে তিনি রেফ্রিজারেশনের কৃত্রিম প্রক্রিয়ার নমুনা দেখান। সেখানে রেফ্রিজারেন্ট ছিল ডাই ইথাইল ইথার। ১৮৩৫ সালে মার্কিন আবিষ্কারক জেকোচ পারকিনস বাষ্পীভবনের চক্র ব্যবহার করা রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করেন। কালেনের কাজ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি নকশায় সাহায্য করেন আরেক আবিষ্কার অলিভার ইভানস। এখানে রেফ্রিজারেন্ট ছিল অ্যামোনিয়া।