ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাঝেমধ্যে জিপিএস কাজ করে না কেন
অচেনা কোনো শহরে গিয়েছেন। পকেট থেকে ফোন বের করে গুগল ম্যাপে নিজের অবস্থান দেখার চেষ্টা করছেন। হয়তো ফুটপাত ধরে সোজা হাঁটছেন, কিন্তু ম্যাপের ওই নীল ডটটা লাফাচ্ছে! কখনো দেখাচ্ছে আপনি রাস্তার উল্টো পাশে, আবার কখনো বড় কোনো বিল্ডিংইয়ের ভেতরে। আসলে আপনি কিন্তু সেই ফুটপাত ধরেই হাঁটছেন, কিন্তু জিপিএস ঠিকভাবে কাজ না করায় এই উটকো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
জিপিএসের এই ভুলের কারণে মেজাজ খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, খোলা রাস্তায় জিপিএস এত সুন্দর কাজ করে, অথচ একটু জনবসতিতে ঢুকলেই কেন এমন ঝামেলা করে? এর উত্তর এবং সমাধান খুঁজে বের করেছেন নরওয়ের একদল গবেষক।
শহরগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘আরবান ক্যানিয়ন’। মানে দুই পাশে বিশাল সব দালানকোঠা, আর মাঝখানে সরু রাস্তা। জিপিএস কাজ করে মহাকাশের স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগন্যাল ধরে। খোলা জায়গায় এই সিগন্যাল সোজা আপনার ফোনে চলে আসে। কিন্তু বেশি জনবসতিতে থাকলে একটু ঝামেলা হয়। কারণ সেখানে বিল্ডিংয়ে থাকে কাঁচ আর কংক্রিটের বিশাল সব দেওয়াল।
স্যাটেলাইটের সিগন্যাল এই দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে এদিক-সেদিক প্রতিফলিত হয়ে তারপর আপনার ফোনে পৌঁছায়। যেহেতু সিগন্যালটা সোজা পথে না এসে ধাক্কা খেয়ে ঘুরে আসে, তাই পৌঁছাতে একটু দেরি হয়। আর এই সামান্য দেরির কারণেই জিপিএস হিসাব গুলিয়ে ফেলে। এ কারণেই আপনি এক জায়গায় থাকলেও সিগন্যাল দেখায় অন্য কোথাও।
শহরগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘আরবান ক্যানিয়ন’। মানে দুই পাশে বিশাল সব দালানকোঠা, আর মাঝখানে সরু রাস্তা।
তবে আমরা হাঁটার সময় জিপিএস একটু ভুল দেখালে হয়তো ম্যানেজ করে নিই। কিন্তু বিদেশে চালকহীন গাড়ির সবচেয়ে বেশি বিপদ হয়। এই গাড়িগুলো পুরোপুরি জিপিএস নির্ভর। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি জিপিএস ভুল করে ফুটপাতে বা উল্টো লেনে পাঠিয়ে দেয়, তবে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই চালকহীন গাড়ির জন্য দরকার নিখুঁত লোকেশন। না হলে এটা জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে উঠবে। তাহলে উপায় কী?
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক আরদেশির মোহামাদি এবং তাঁর দল এই সমস্যার এক দারুণ সমাধান বের করেছেন। তাঁরা তৈরি করেছেন স্মার্টন্যাভ নামে এক নতুন প্রযুক্তি। তাঁরা সাহায্য নিয়েছেন গুগলের। গুগল ম্যাপে এখন বিশ্বের প্রায় ৪ হাজার শহরের দালানকোঠার ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি মডেল আছে। আপনি জুম করলেই দালানের উচ্চতা বা গঠন দেখতে পাবেন। গবেষকরা এই থ্রিডি মডেল কাজে লাগিয়েছেন। তাঁদের তৈরি সফটওয়্যারটি আগে থেকেই অঙ্ক কষে বের করে ফেলে, ওই দালানগুলোতে সিগন্যাল কীভাবে ধাক্কা খেতে পারে। গুগল জানে দালানটা কোথায়, তাই সে সিগন্যালের ভুল পথটা সংশোধন করে দেয়।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক আরদেশির মোহামাদি এবং তাঁর দল তৈরি করেছেন স্মার্টন্যাভ নামে এক নতুন প্রযুক্তি। তাঁরা সাহায্য নিয়েছেন গুগলের।
এর সঙ্গে তাঁরা ব্যবহার করেছেন সিগন্যালের রেডিও ওয়েভের কিছু বিশেষ তথ্য। সব মিলিয়ে তাঁরা জগাখিচুড়ি সিগন্যালগুলোকে সোজা পথে আনার ব্যবস্থা করেছেন।
গবেষকেরা নরওয়ের ট্রনহাইম শহরের রাস্তায় এই প্রযুক্তি পরীক্ষা করেছেন। ফলাফল ছিল চমকে দেওয়ার মতো। আগে যেখানে জিপিএস কয়েক মিটার ভুল করত, এখন সেখানে ভুলের মাত্রা নেমে এসেছে ১০ সেন্টিমিটারের নিচে! ৯০ শতাংশ সময় এখন সঠিক তথ্য দেখাচ্ছে। এটা বড় অগ্রগতি।
সবচেয়ে ভালো খবর হলো, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দামি কোনো যন্ত্র লাগবে না। সাধারণ স্মার্টফোন বা গাড়ির জিপিএস রিসিভারেই এটা ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ, আগামী দিনে অচেনা শহরের রাস্তায় আর পথ হারানোর ভয় থাকবে না!