বছরজুড়ে প্রযুক্তির আলোচিত ১০

২০২৩ সালে প্রযুক্তিবিশ্ব দেখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। পাশাপাশি মহাকাশ যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রেও এসেছে উল্লেখযোগ্য সব অগ্রগতি। বছরজুড়ে ঘটে যাওয়া ১০ আলোচিত আবিষ্কার ও ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এ লেখা। এ জন্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, টেকনোলজি ম্যাগাজিনসহ বেশ কিছু খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকীর ।

প্রযুক্তিগত এসব অর্জনের কোনোটিই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এ লেখায় তাই বিষয়গুলো ক্রমানুসারে সাজানো হয়নি। তাহলে চলুন, বছরজুড়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঘটে যাওয়া দারুণ সব বিষয় দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

আরও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বছরের শুরু, আসলে গত বছরের শেষ থেকেই মিডজার্নির জয়জয়কার। লিখে নির্দেশ দিলে এঁকে দিতে পারে ছবি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এ ধরনের চিত্রকর্মের নাম এআই আর্ট। এখন শুধু মিডজার্নিই নয়, মাইক্রোসফটের ডাল-ই, এমনকি ফ্রি-পিকের মতো ওয়েবসাইটেও সহজেই তৈরি করা যাচ্ছে এআই আর্ট। ফেসবুকের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেটা এআইও এগোচ্ছে সমান তালে। তবে এত সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে আলাদা করে বলতে হবে দুটির কথা। এক, চ্যাটজিপিটি ও দুই, জেমিনি।

ওপেনএআই তাদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের নতুন ও বিবর্ধিত সংস্করণ চ্যাটজিপিটি-৪ উন্মুক্ত করেছে এ বছর। আগের সংস্করণ কেবল টেক্সট বা লেখার মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত। নতুন সংস্করণ টেক্সটের পাশাপাশি ছবিও তৈরি করে দিতে পারে। তবে, এসব সুবিধা পেতে অর্থ খরচ করতে হয়। চ্যাটজিপিটি নিয়ে আরও জানতে পড়ুন: চ্যাটজিপিটি সব জানে!

অন্যদিকে চ্যাটজিপিটি-৪ এর প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে গুগল নিয়ে এসেছে জেমিনি। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই মডেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানায় গুগল। এটি একই সঙ্গে ছবি, টেক্সট, ভিডিও, কোড সব বুঝতে পারে, এবং নির্দেশানুযায়ী এগুলো তৈরিও করে দিতে পারে। অর্থাৎ এটি একটি বহুমুখী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা বিপ্লব তৈরি করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে।

জেমিনির কথা বিস্তারিত জানা যাবে এই লেখায়: গুগলের বহুমুখী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জেমিনি

মাইন্ডরিডার!

যন্ত্র মনের খবর পড়ছে—এটা এখন আর কল্পবিজ্ঞান নয়, বাস্তব! যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের একদল নিউরোটেকনোলজিস্ট এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। মূলত স্ট্রোক বা এএলএস (স্টিফেন হকিং যে রোগে আক্রান্ত ছিলেন)-এর মতো রোগের কারণে কথা বলতে অক্ষম মানুষের মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড রিড করে (পড়ে), তা স্বাভাবিক ভাষায় অনুবাদের জন্য এই যন্ত্র নির্মাণ করা হয়।

এতে একটি তারহীন যন্ত্রের সাহায্যে ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করে মস্তিষ্কের চারপাশের রক্ত প্রবাহের মাত্রা মাপা হয়। পরে সেখান থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানুষের স্বাভাবিক ভাষায় অনুবাদ করা হয় ভাবনাগুলোকে। কিন্তু শুধু এক-দুটো বাক্যের মতো বিষয় নয়, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন কারো মস্তিষ্কে ঘটে চলা গল্পও পড়া সম্ভব। সবসময় অবশ্য একদম শব্দ ধরে অনুবাদ করতে পারে না এ প্রযুক্তি, তবে ধরতে পারে মূল বিষয়টি। যেমন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী একজন একটি বাক্য শুনতে পান, ‘আমার এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই’। যন্ত্রটি বাক্যটিকে দেখায় এভাবে—‘তিনি এখনো ড্রাইভিং শেখেননি।’ অর্থাৎ কিছুটা ভুল থাকলেও মূল বিষয়টি ধরতে পারছে এই মাইন্ডরিডার।

গবেষকেরা বর্তমানে আরও কম খরুচে প্রযুক্তি, যেমন ইলেকট্রনসেফালোগ্রাম (ইইজি) বা নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকটোমেট্রি ব্যবহার করে এ কাজ করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করছেন। আশা করা হচ্ছে, চিকিৎসাক্ষেত্র ও প্রযুক্তিতে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নতুন দিগন্ত

কোয়ান্টাম কম্পিউটার আগের তুলনায় আরও বেশি ব্যবহারোপযোগী হয়েছে এ বছর। আন্তর্জাতিক বার্ষিক কোয়ান্টাম সামিটে কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইবিএম কনডোর ও হেরোন নামে দুটি কোয়ান্টাম চিপ বা প্রসেসর উন্মুক্ত করেছে। হাজারের বেশি কিউবিট সম্পন্ন এ দুটি প্রসেসর এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম ক্রটিযুক্ত ও উচ্চক্ষমতার কাজ করতে পারবে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

‘আইবিএম সিস্টেম টু’ নামে নতুন এক মডুলার কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে তারা। আইবিএমের প্রসেসরগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা ও উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করবে এটি।

এ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: হাজার কিউবিটের কোয়ান্টাম চিপ তৈরি করল আইবিএম

ডি-সক প্রযুক্তির সফল পরীক্ষণ

নাসা উদ্ভাবিত মহাকাশ যোগাযোগের নতুন প্রযুক্তি ডিপ স্পেস অপটিক্যাল কমিউনিকেশন (সংক্ষেপে ডি-সক, DSOC)। প্রচলিত বেতার তরঙ্গের বদলে লেজার রশ্মির মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায় এ প্রযুক্তিতে। ফলে সময় যেমন কম লাগে, তেমনি পাঠানো যায় প্রচুর তথ্য। প্রযুক্তিটি পরীক্ষামূলকভাবে যুক্ত করা হয় সাইকি নভোযানে। গত মাসে পৃথিবী ছেড়েছে এ নভোযান।

এর আগে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে লেজার রশ্মির সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে। কোটি মাইল দূর থেকে এ প্রযুক্তির ব্যবহার এবারই প্রথম। ১৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার সাইকি নভোযানের পাঠানো তথ্য গ্রহণ করে জেট প্রপালশন ল্যাব। গবেষকরা বলছেন, সাইকি নভোযান থেকে পৃথিবীতে তথ্য আসতে সময় লেগেছে মাত্র ৫০ সেকেন্ড। অবলাল আলোকরশ্মির মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয় এ প্রযুক্তিতে।

সাইকি নভোযান ও ডি-সক নিয়ে আরও জানতে পড়ুন : কোটি মাইল দূরের সাইকি থেকে বার্তা পেল নাসা

ওয়েব ৩.০ ও ব্লকচেইন

ক্রিপটোকারেন্সি বা ক্রিপ্টোমুদ্রার বাইরেও নানা ক্ষেত্রে হচ্ছে ব্লকচেইনের প্রয়োগ। এমনিতে ক্রিপ্টোমুদ্রার কারণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তির হাত ধরে। গড়ে উঠছে বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোমুদ্রাসহ নানা ধরনের লেনদেন ব্যবস্থা। ফলে, বিনিয়োগ ও লেনদেনের নতুন রাস্তা খুলেছে। নিরাপত্তা বেড়েছে আগের চেয়ে বহু গুণে। তবে এই ব্লকচেইনের অন্যতম দারুণ প্রয়োগের ফলে এসেছে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট প্রযুক্তি—ওয়েব ৩.০।

ওয়েব ৩.০ কী? বুঝতে হলে সংক্ষেপে জেনে নিতে হবে ওয়েব ১.০ এবং ওয়েব ২.০ সম্পর্কে।

একসময় ওয়েবসাইটগুলো ছিল পত্রিকার মতো। পত্রিকা যেমন শুধু হাতে নিয়ে পড়া যায়, কিন্তু পত্রিকা সংশ্লিষ্ট কেউ বা পাঠকদের মতামত জানানো যায় না, ওয়েব ১.০ ঠিক সেরকম একতরফা ছিল। যেকোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে শুধু পড়া বা দেখা যেত। মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ ছিল না। ছিল না ব্যবহারকারীদের নিজের ডাটা শেয়ার করার সুবিধাও।

২০০৪ সালে এই পরিস্থিতি বদলে গেল ওয়েব ২.০ আসায়। আমরা যে ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত—ইউটিউব বা ওয়েবসাইটে মন্তব্য করা যায়, ফেসবুকে নিজের মতো পোস্ট করা যায়—এসবই ওয়েব ২.০-এর কেরামতি। তবে এই ইন্টারনেট কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কে কী করবে, গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারে থাকে ব্যবহারকারীদের তথ্য।

ওয়েব ৩.০ হচ্ছে বিকেন্দ্রীক ইন্টারনেট, যেখানে ব্যবহারকারীদের তথ্যের মালিক ব্যক্তি নিজেই। মেশিং লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সিমেন্টিক ওয়েবের ওপর গড়ে ওঠা এই প্রজন্মের ইন্টারনেটে তথ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ব্লকচেইন। এতে আপনার ভিডিও আর ইউটিউব কর্তৃপক্ষ চাইলে সরিয়ে দিতে পারবে না, টুইটার বা ফেসবুক চাইলে পারবে না কারো অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে দিতে। বিষয়টা খানিকটা টরেন্টের মতো, ব্যবহারকারীদের ডিভাইসগুলোই সার্ভারের মতো কাজ করে এবং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার মাধ্যমে আদান-প্রদান করে তথ্য।

তবে এটি এখনো সবার জন্য ব্যবহৃতভাবে আসেনি। মেটা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে, এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বলে জানা গেছে। এই প্রযুক্তি নতুন যুগের সূচনা করবে ইন্টারনেট জগতে, এমনটাই বিশেষজ্ঞদের আশা।

মাল্টিক্লাউড জটিলতার সমাধান

এ বছর ক্লাউড প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। বিশেষ করে মাল্টিক্লাউড ব্যবস্থাপনায়। মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্যাসের (SAS) গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক অ্যাপ্লিকেশন, বিশ্লেষণ ও জরুরী ডেটা হোস্ট করতে কমপক্ষে দুটি ক্লাউড সেবা ব্যবহার করছে। একাধিক ক্লাউড সেবা ব্যবহারের কারণে সমন্বয়, তথ্য পরিবেশনসহ নানারকম জটিলতা তৈরি হয়। এই বছর এসব সমস্যা সমাধানের বেশ কিছু প্রযুক্তি ও কৌশল নিয়ে কাজ করেছেন অনেক প্রযুক্তিবিদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ভবিষ্যতের ইন্টারনেটের জন্য এ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ।

ফাইভ জি পরবর্তী প্রযুক্তি

বিশ্বজুড়ে ৫জি নেটওয়ার্কের পরিধি বেড়েছে ২০২৩ সালে। নোকিয়া, টি-মোবাইলের মতো নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠান নিরবিচ্ছিন্নভাবে উচ্চগতির এ সেবা দিচ্ছে পৃথিবীর নানা দেশে। পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের ৬জি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে এ বছর। তারহীন এ প্রযুক্তি সামনের দিনে আরও ব্যপক পরিবর্তন আনবে তথ্যপ্রযুক্তির জগতে, তা বলা বাহুল্য।

ইন্টারনট অব থিংস ইকোসিস্টেম থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ৬জি নেটওয়ার্ক শিল্প, অর্থনীতিসহ পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে এক নতুন রূপ দেবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জিরো ট্রাস্ট

বিশ্বাস নয়, যাচাই করুন সবসময়—এটাই জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটির মূল কথা। ২০২৩ সালে হাইব্রিড ও রিমোট ওয়ার্কিংয়ের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধান হিসেবে জিরো ট্রাস্ট ছিল প্রযুক্তির দুনিয়ার অন্যতম আগ্রহের জায়গা।

মার্কিন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকোর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৯টিই জিরো ট্রাস্ট সিকিউরিটি মডেল ব্যবহার করেছে। ডেল টেকনোলজিস-এর সিটিও (প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা) জন রয়েসের মতে, এই গতি সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে। ২০২৪ সালে জিরো ট্রাস্ট হয়ে উঠবে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার আদর্শ মানদণ্ড।

অগমেন্টেড ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি

বাস্তব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যকার সীমারেখা দূর করার কাজ করে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি। ফলে শেখা ও  ইন্ট্যারেকশনের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে এ প্রযুক্তি।

এ বছর মার্কিন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল বাজারে এনেছে ভিশন প্রো হেডসেট। প্রতিষ্ঠানটির সিইও টিম কুকের দাবি, নতুন কম্পিউটিং যুগের সূচনা হয়েছে এর মাধ্যমে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এটি মেটাভার্সের মতো ডিজিটাল জগতকে বাস্তব জগতের সঙ্গে ব্যাপকভাবে জুড়তে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ পণ্যটির বাজার ৬১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

মেটার ভার্চ্যুয়াল জগতের ব্যাপারে আরও জানতে পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিপ্লব

টেকসই গ্রিন এনার্জি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হচ্ছে ডেটাসেন্টারগুলোর ধারণক্ষমতা। এতে প্রচুর জ্বালানি ব্যবহৃত হতো অতীতে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে বর্তমানে গ্রিন এনার্জিনির্ভর বা পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রযুক্তি নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ‘২০২৩ সালের সেরা ১০ উদীয়মান প্রযুক্তি’ শিরোনামের এক প্রতিবেদন বলছে, নেট-জিরো এনার্জি ডেটাসেন্টার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়। এতে পানি বা শীতক তরল ব্যবহার করে তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত।

নেট-জিরো এনার্জি ডেটাসেন্টার কী? যে সব ডেটাসেন্টারে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ ও সেই ডেটাসেন্টার (পড়ুন, সংশ্লিষ্ট স্থাপনায়) উৎপাদিত নবায়নযোগ্য শক্তির পরিমাণ সমান। অর্থাৎ, এতে মোট বাড়তি শক্তির দরকার পড়ে না। আর বাড়তি শক্তি না লাগলে, শক্তি উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও দরকার পড়বে না। সে ক্ষেত্রে কমে যাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন এবং কমবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিস্টেম বর্তমানে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের শক্তির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সক্রিয়তা ও কর্মদক্ষতা এতে অনেক বেড়ে যায়। এভাবে বর্তমানে গুগলের ডেটাসেন্টারগুলোতে শক্তির ব্যবহার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তিগত কর্মদক্ষতা বাড়াতে এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন, টেকনোলোজি ম্যাগাজিন, বিজ্ঞানচিন্তা