বিজ্ঞানের নতুন চমক তরল রোবট

রোবট তো অনেকে দেখেছেন। মানুষের মতো দেখতে রোবট, পোকা আকৃতি রোবট এমনকি নানা প্রাণীর আকৃতির রোবটও বানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে কখনো তরল রোবটের কথা শুনেছেন? এমন কোনো রোবটের কথা শুনেছেন, যেটা তার সুবিধা মতো যেকোনো সময় আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে? যেকোনো সংকীর্ণ স্থানের মধ্য দিয়ে যেতে পারে অনায়াসে? কিংবা হঠাৎ গলে যেতে পারে, আবার মুহূর্তেই শক্ত হয়ে যেতে পারে? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সম্প্রতি এমন একটি রোবট তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটা বানানো হয়েছে নতুন এক ধরনের পদার্থ দিয়ে।

বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই নরম রোবট তৈরি করে আসছেন। সেগুলো নরম হলেও সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে যেতে পারে না। আবার কোনো রোবট তরল কিন্তু ভারী বস্তু বহন করতে পারে না। তবে নতুন এক গবেষণায় প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন ধরনের একটা রোবট। সামুদ্রিক শসার মতো প্রাণী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই তরল রোবট বানানো হয়েছে। সমুদ্রের গভীরের এই প্রাণী খুব সহজে তার দেহের আকার পরিবর্তন করতে পারে। তেমন আকৃতির রোবট নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক কারমেল মাজিদি ও তাঁর দল।

গবেষকরা তরল রোবট বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা সরাসরি মানুষের পেট থেকে বস্তু বের করার কাজে এই রোবট ব্যবহার করেছেন।

গবেষকদের তৈরি রোবটটি খুব ছোট এবং খেলনা আকৃতির। তাঁদের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, রোবটটি লোহার শিকের ভেতর দিয়ে আসা যাওয়া করছে। শক্ত ধাতব রোবট খুব সহজেই তরল হয়ে লোহার গারদে প্রবেশ করছে এবং আবার শক্ত হয়ে আকৃতি বদলে ফেলছে। বিজ্ঞানীরা এই রোবট তৈরিতে ব্যবহার করেছেন গ্যালিয়াম ধাতু। এই ধাতু ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলে যেতে পারে। তবে এটিকে তরল করার জন্য বিজ্ঞানীরা তড়িৎচৌম্বকীয় পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যেজন্য গ্যালিয়ামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন আরও কিছু পদার্থ। নিওডাইমিয়াম, আয়রন, বোরন ও গ্যালিয়াম দিয়ে তৈরি করেছেন এক ধরনের সংকর ধাতু।

গ্যালিয়ামের সঙ্গে চৌম্বকীয় কণাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তাই একটি স্থায়ী চুম্বক এটিকে টেনে আনতে পারে। তড়িৎ-চৌম্বক ক্ষেত্র গ্যালিয়ামের ভেতরে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। ফলে এটি উত্তপ্ত হয় এবং গলে যায়। তবে গলে গেলেও রোবটের সার্কিটের বিদ্যুৎ পরিবাহিতা থাকবে। গবেষকরা জানান, তাঁদের গবেষণা তরল ধাতুতে নির্মিত সার্কিটের ওপর। তরল অবস্থাতেও বিদ্যুৎ পরিবাহিতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। এসব ধাতুকে ইনসুলেট করলে বা অন্য কোনো আবরণ দিলে গলে গেলেও ছড়িয়ে পড়ে না।

গবেষকরা তরল রোবট বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা সরাসরি মানুষের পেট থেকে বস্তু বের করার কাজে এই রোবট ব্যবহার করেছেন। রোবটটি মানবদেহের পাকস্থলীতে গিয়ে তরল অবস্থায় একটি বল বের করে আনে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এই রোবট। আবার বিজ্ঞানীরা একে স্ক্রুতে পরিণত করেছেন। এটি বিভিন্ন কোণায় পৌঁছে যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন সার্কিট জোড়া দেওয়ার কাজেও ব্যবহার করা হবে এই তরল রোবট। তবে এই রোবট নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

সূত্র: সায়েন্স নিউজ