হেডফোনে নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে

আমরা যে শব্দ শুনি, তা মূলত ত্রিমাত্রিক অণুর কম্পন। সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে সেই কম্পন তরঙ্গ আকারে আমাদের কানে এসে আঘাত করে। কানের পর্দা আন্দোলিত হয়, মস্তিষ্ক শুনতে পায় শব্দটিকে। প্রতি সেকেন্ডে অণুর কম্পন ২০ থেকে ২০ হাজার বারের মধ্যে থাকলে তা মানুষের কানে ধরা পড়ে। এর বেশি বা কম হলে মানুষ শুনতে পায় না। তবে অনেক প্রাণী সেসব শব্দও শুনতে পায়।

যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষের জন্য শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই শব্দও অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। অযাচিত বা অতিরিক্ত শব্দ চিন্তাজগৎকে এলোমেলো করে দেয়। বিরক্তিকর শব্দ থেকে রেহাই পাওয়ার তাৎক্ষণিক একটি সমাধান হলো নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন। নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এই হেডফোনের কাজটা কী।

নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন সাধারণত দুই ধরনের হতে দেখা যায়—অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ। দুটোর উদ্দেশ্য একই—বাইরের শব্দ থেকে আপনার কানের সুরক্ষা দেওয়া। তবে এদের কাজের পদ্ধতি ভিন্ন।

অ্যাকটিভ নয়েজ ক্যানসেলিং কাজ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। বলা উচিৎ, স্মার্ট পদ্ধতিতে। এর ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন বাইরে থেকে আসা শব্দ শনাক্ত করে।

প্যাসিভ নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন মূলত বাইরের শব্দ শোষণ করে নিয়ে ভেতরে নিরবতা তৈরি করে। এদের গঠন উপাদানগুলো বাইরের শব্দ তরঙ্গকে ভালোভাবে শোষণ করে নিতে পারে। ভেতরের দিকেও থাকে তুলোর আস্তরণ বা তুলতুলে রবারের কাঠামো। কানে লাগানোর অংশ, মানে ইয়ার বাডগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যেন কানে লাগানোর পর কোনো ফাঁকা না থাকে। ফলে বাইরের শব্দ স্বাভাবিকভাবেই কানে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারে না। ভালো প্যাসিভ নয়েজ ক্যানসেলিং মাঝারি থেকে উচ্চ কম্পাঙ্কের প্রায় ১৫-৩০ ডেসিবল তীব্রতার শব্দ ঠেকিয়ে দিতে পারে। এ কারণে হেলিকপ্টার বা উড়োজাহাজে প্যাসিভ নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করা হয়।

অ্যাকটিভ নয়েজ ক্যানসেলিং কাজ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে। বলা উচিৎ, স্মার্ট পদ্ধতিতে। এর ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র মাইক্রোফোন বাইরে থেকে আসা শব্দ শনাক্ত করে। হেডফোনের ভেতরে থাকা নয়েজ ক্যানসেলিং প্রসেসর শব্দটির তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে। তারপর সেই শব্দ তরঙ্গের ঠিক বিপরীত তরঙ্গ তৈরি করে ক্ষুদ্র আরেকটি স্পিকারে। দুটি পরষ্পরমুখী বিপরীত তরঙ্গ একটা আরেকটার ওপর আছড়ে পড়ে, শূন্য করে দেয় একে অন্যকে। ফলে হেডফোনের ভিতরে তৈরি হয় নিরবতা। পুরো বিষয়টি হেডফোন চালু থাকাকালীন সময় নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘটতে থাকে বারবার।

নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষতি করে না। তবে অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় এ ধরনের হেডফোন ব্যবহারের ফলে কানে অস্বস্তিকর অবস্থা, মাথাব্যথা ইত্যাদির মতো উপসর্গ তৈরি হয়।

শব্দের কম্পাঙ্ক বেশি হলে অ্যাকটিভ নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি পুরোপুরি নিরবতা দিতে পারে না। তবে কম কম্পাঙ্কের শব্দ নিষ্ক্রিয় করতে দারুণ কাজ করে এই প্রযুক্তি। অর্থাৎ, সাধারণ রাস্তার শব্দ, কথাবার্তার আওয়াজ ইত্যাদির বেলায় এ ধরনের হেডফোন ভালো কাজে দেয়।

নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষতি করে না। তবে অনেকের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় এ ধরনের হেডফোন ব্যবহারের ফলে কানে অস্বস্তিকর অবস্থা, মাথাব্যথা ইত্যাদির মতো উপসর্গ তৈরি হয়। কানের পর্দার কাছের অঞ্চলে বাতাসের চাপ কমে যাওয়ায় মূলত এমনটা হয়। তাই দীর্ঘ সময় ধরে এগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য এ ধরনের হেডফোন ব্যবহার করায় কোনো সমস্যা নেই।

হেডফোন ছাড়াও স্মার্টফোন ও ভালো মাইক্রোফোনে নয়েজ ক্যানসেলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেও বিভিন্ন ভয়েস রেকর্ডারে অযাচিত শব্দ ছেটে ফেলার সুযোগ রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, আল্টিমেট ইয়ারস