মানবমস্তিষ্কে চিপ বসানোর অনুমতি পেল নিউরালিংক

পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে ইলেকট্রনিক চিপ বসানোর অনুমতি পেল ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ ছাড়পত্র দিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনেস্ট্রেশন বা এফডিএ। মানব সভ্যতায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউরালিংক যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত নিউরো টেকনোলজিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের জুলাইতে যাত্রা শুরু। ইলন মাস্ক এর সহপ্রতিষ্ঠাতা। জৈবিক মস্তিষ্কের সঙ্গে ইলেকট্রনিক কম্পিউটার সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে কি না, তা গবেষণা করে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে নানা প্রাণীর মাথায় ইলেকট্রনিক চিপ বসিয়ে মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে তারা।

২০২১ সালের এপ্রিলে পেজার নামে একটি বানরের মাথায় চিপ বসায় নিউরালিংক। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তিন মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, পেজার নামে একটি বানর শুধু চিন্তা করে করে, কোনো কিছু হাত দিয়ে না ধরেই মাইন্ড পং নামের একটি ভিডিও গেম খেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে এ ভিডিও। প্রাণীদের নিয়ে এরকম বেশ কিছু গবেষণা শেষে এবারে প্রতিষ্ঠানটি মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার অনুমতি পেল।

চিন্তা করে করে গেম খেলছে পেজার

বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় নিউরালিংক এই অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি জানায়। তাতে বলা হয়, ‘এফডিএ প্রথমবারের মতো আমাদের হিউম্যান ক্লিনিক্যাল স্টাডির অনুমতি দিয়েছে। এতে আমরা আনন্দিত। এফডিএ-র এ অনুমোদন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। নিউরালিংক এর মাধ্যমে অনেক মানুষকে সাহায্য করার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।’

এফডিএ এক বিবৃতিতে এ অনুমোদনের কথা নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর জন্য তারা নিউরালিংককে অনুমতি দিয়েছে। সেইসঙ্গে অস্ত্রপচারের জন্য রোবটও ব্যবহার করতে পারবে তারা। তবে এ বিষয়ে ইলন মাস্ক বা নিউরালিংকের কারো মতামত পাওয়া যায়নি।

এদিকে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ অনুমোদনের সমালোচনা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউরালিঙ্ক প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা চালানোর ফলে মারা গেছে অনেক নিরীহ প্রাণী। এ নিয়ে এখন রাষ্ট্রীয় তদন্ত চলছে। সে অবস্থাতেই এ অনুমতি দেওয়া হলো।

মার্কিন সরকারের একাধিক বিভাগ নিউরালিংকের এসব গবেষণা নিয়ে তদন্ত করছে।

১০ জন মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর জন্য আবেদন করে নিউরালিংক। সম্প্রতি নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে এ সংখ্যা কমানো নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা। তবে এফডিএ শেষ পর্যন্ত কতজন মানুষের ওপর এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অনুমতি দিয়েছে, তা জানা যায়নি।

নিউরালিংকের গঠন

ইলন মাস্ক মনে করেন, নিউরালিংকের এ বিশেষ চিপের মাধ্যমে মানবদেহের স্থুলতা, অটিজম, হতাশা, সিজোফ্রেনিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সারিয়ে তোলা যাবে। পাশাপাশি মানুষের মস্তিষ্ককে ওয়েব ব্রাউজিং ও টেলিপ্যাথির মতো কাজে সক্ষম করে তোলা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে তিনি এত আত্মবিশ্বাসী যে বাচ্চাদের মস্তিষ্কেও চিপ স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চারবার মানবদেহে নিউরালিংকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর ভবিষ্যদ্বাণী করেন ইলন মাস্ক। তবে প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের গোড়ার দিকে এফডিএ-র অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। সে সময় অবশ্য আবেদনটি প্রত্যাখাত হয়েছিল।

বর্তমানে এফডিএ নিউরালিংককে বেশ কিছু নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। যেমন ডিভাইসে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার, চিপ স্থানান্তরের সময় মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তার ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি। মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করার আগে এগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে তারা।

নিউরালিংকের এ গবেষণা সফল হলে মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা এখনই জানার সুযোগ নেই। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত আছে। চলছে বিতর্ক। সময়ই হয়তো সব প্রশ্নের উত্তর দেবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: রয়টার্স; টুইটার, নিউরালিংক