ধরুন, আপনার আইফোনটির পর্দা ৫.৮ ইঞ্চি। কিংবা বাসায় ৪৩ ইঞ্চির বড় টিভি বসিয়েছেন খেলা দেখার জন্য। এখানে সংখ্যাগত পরিমাপটি আসলে আপনার ‘পর্দার দৈর্ঘ্য’ নয়, পর্দার কর্ণের দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ কর্ণ বরাবর আপনার পর্দাটির দৈর্ঘ্য ৫.৮ ইঞ্চি।
কম্পিউটার বা মোবাইলের পর্দায় গড়ে উঠেছে আমাদের নতুন জগৎ। প্রতিদিন, প্রায় প্রতি মুহূর্তে আমরা মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ছবি দেখছি, কিংবা ভিডিও। কোনো লেখা পড়ছি, কিংবা লিখছি নিজের মতামত। ভার্চ্যুয়াল এই দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ মাধ্যম ওই পর্দা, ইংরেজিতে যাকে বলে স্ক্রিন। শুধু মোবাইল বা কম্পিউটার নয়, টেলিভিশন কিংবা স্মার্ট টিভির পর্দায় চোখ রেখেও অনেকে কাটান দীর্ঘ সময়।
নতুন ফোন যখন কিনতে যাই, তখন আমরা প্রায় সবাই সম্ভবত ফোনটি নিয়ে একটু ঘেঁটে দেখি, রিভিউ পড়ি, ভিডিও দেখি। দেখি, ফোনটির স্ক্রিন কত ইঞ্চি, এর আসপেক্ট রেশিও কত, ব্যাটারি কত অ্যাম্পিয়ার ইত্যাদি। কিন্তু আমরা যা দেখি, সব আসলে সেরকম নয়। এর আদর্শ উদাহরণ হতে পারে স্ক্রিনের আকৃতি।
ধরুন, আপনার আইফোনটির পর্দা ৫.৮ ইঞ্চি। কিংবা বাসায় ৪৩ ইঞ্চির বড় টিভি বসিয়েছেন খেলা দেখার জন্য। এখানে সংখ্যাগত পরিমাপটি আসলে আপনার ‘পর্দার দৈর্ঘ্য’ নয়, পর্দার কর্ণের দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ কর্ণ বরাবর আপনার পর্দাটির দৈর্ঘ্য ৫.৮ ইঞ্চি।
এখন এ থেকে আপনার স্ক্রিনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বের করবেন কীভাবে? কেন, পিথাগোরাসের উপপাদ্য আছে না! যেকোনো সমবাহু ত্রিভুজের কর্ণের (অতিভুজ) বর্গ তার অন্য দুই বাহুর বর্গের যোগফলের সমান। মানে, কর্ণ২ = দৈর্ঘ্য২ + প্রস্থ২। সমস্যা একটা-ই। যেকোনো সমীকরণে ৩টা চলক থাকলে অন্তত দুটোর মান জানতে হয়। তাহলে তৃতীয়টা বের করা যায়। কিন্তু আপনি তা জানেন না। শুধু কর্ণের দৈর্ঘ্য জানেন। তাহলে, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বের করার উপায়? উপায় আছে। এর নাম, আসপেক্ট রেশিও।
আসপেক্ট রেশিও আর কিছুই না, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত। অর্থাৎ আসপেক্ট রেশিও = দৈর্ঘ্য/প্রস্থ। কিংবা দৈর্ঘ্য: প্রস্থ। ধরুন, আপনার ফোনের আসপেক্ট রেশিও ১৬: ৯। এবারে আমরা ছোট্ট করে হিসাব কষে বের করে নেব, আপনার ফোনের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কত। তার আগে, সূত্র দুটো আবার লিখে ফেলি।
১. কর্ণ২ = দৈর্ঘ্য২ + প্রস্থ২
২. আসপেক্ট রেশিও = দৈর্ঘ্য/প্রস্থ
এবারে, এই সূত্র দুটোকে আমাদের প্রয়োজন মতো যদি সাজিয়ে লিখি, তাহলে পাব,
প্রস্থ = কর্ণ/√ (আসপেক্ট রেশিও২ + ১)
[যাঁরা বুঝতে পারেননি, ২ নং সূত্রটিকে বর্গ করে পাই, আসপেক্ট রেশিও২ = দৈর্ঘ্য২/প্রস্থ২
বা, আসপেক্ট রেশিও২ × প্রস্থ২ = দৈর্ঘ্য২
বা, দৈর্ঘ্য২ = আসপেক্ট রেশিও২ × প্রস্থ২… (৩)
এটা ১ নং সূত্রে বসিয়ে পাব, কর্ণ২ = প্রস্থ২ + (আসপেক্ট রেশিও২ × প্রস্থ২)
বা, কর্ণ২ = প্রস্থ২ (১ + আসপেক্ট রেশিও২)
বা, প্রস্থ২ = কর্ণ২ / (১ + আসপেক্ট রেশিও২)
বা, প্রস্থ = ± (কর্ণ/√ (আসপেক্ট রেশিও২ + ১))—এখান থেকে আমরা ধনাত্মক মানটি নেব, যেহেতু স্ক্রিনের প্রস্থ ঋণাত্মক হতে পারবে না।]
এখান থেকে আমরা বের করে নিতে পারব স্ক্রিনের প্রস্থ—
প্রস্থ = ৫.৮ / √ ((১৬/৯)২ + ১) = ২.৮৪ ইঞ্চি
এবারে দৈর্ঘ্য বের করে ফেলতে পারব ২ নং সূত্রে প্রস্থের মান বসিয়ে,
আসপেক্ট রেশিও = দৈর্ঘ্য/প্রস্থ
বা, দৈর্ঘ্য = আসপেট রেশিও ×প্রস্থ
বা, দৈর্ঘ্য = (১৬/৯) × ২.৮৪ = ৫.০৬ ইঞ্চি
বুঝতেই পারছেন, প্রায় ৬ ইঞ্চির আপনার ফোনটির আসল দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চির মতো। এটা আপনি জানলেও, প্রায় ৬ ইঞ্চি স্ক্রিনের ফোন শুনলে যে মানসিক বিভ্রম বা আকর্ষণ তৈরি হয়, মার্কেটিংয়ের কারিকুরিতে তা এড়ানো কঠিন। তবে মার্কেটিং এ লেখার আলোচ্য বিষয় না। তাই সে প্রসঙ্গ থাকুক।
স্ক্রিনের দৈর্ঘ্যের পাশাপাশি, এর রেজুল্যুশন, এর ভেতরের পিক্সেল বা বিট—এরকম আরও অনেক বিষয় আছে। সেগুলো নিয়ে তোলা রইল পরের কোনো লেখার জন্য।
লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা
সূত্র: উইকিপিডিয়া, স্ক্রিন সাইজ ডট ইনফো