ইলেকট্রনিক–জগতের যত চমক

ইন্ট্রো

প্রযুক্তি দুনিয়ার নতুন সব চমকের মেলা বসে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শোতে। সবার কাছে যা সিইএস নামে পরিচিত। চলতি বছর সিইএস-এ এসেছে হলোগ্রাম, উড়ন্ত গাড়ি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত এআই সহযোগীর মতো আকর্ষণীয় সব প্রযুক্তি। জেনে নিন আগামী পৃথিবী বদলে দেওয়ার মতো কয়েকটি প্রযুক্তির কথা...

প্রযুক্তি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মিলনমেলা কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শো বা সিইএস। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত এই ট্রেড শোতে বিশ্বের কয়েক হাজার কোম্পানি তাদের ইলেকট্রনিক পণ্য নিয়ে হাজির হয়। এ বছরও মোট ১৫০টি দেশ থেকে স্যামসাং, ইনটেল, গুগল, হুন্দাই, আইবিএম, মার্সিডিস-বেঞ্জ, সনি, প্যানাসনিকের মতো প্রায় চার হাজার ছোট-বড় কোম্পানি তাদের নতুন পণ্য নিয়ে যোগ দেয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে। নিজেদের প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে উপস্থিত ছিল বাংলাদেশের প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনও। কনজ্যুমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই বার্ষিক ট্রেড শোতে এ বছর সরাসরি অংশ নেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

চার দিনের এই প্রদর্শনীতে রান্নাঘরে ব্যবহৃত ব্লেন্ডার-মিক্সচার থেকে শুরু করে ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক কার, এমনকি মঙ্গল গ্রহের যান পর্যন্ত—সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য এবং নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির কনসেপ্ট ডিজাইন নিয়ে হাজির হয় কোম্পানিগুলো।

প্রতিবছর এই প্রদর্শনীতে নতুন জেনারেশনের স্মার্টফোন, সর্বাধুনিক প্রসেসরের ল্যাপটপ, উন্নত প্রযুক্তির টিভি, অটোমেটেড হোম অ্যাপ্লায়েন্স, অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক গাড়ির মতো গতানুগতিক প্রযুক্তিপণ্যের পাশাপাশি দেখা মেলে নতুন অনেক প্রযুক্তির। এগুলোই পরে ধীরে ধীরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পণ্য হিসেবে জায়গা করে নেয়।

এ বছরের সিইএসে প্রদর্শিত হাজারো ইলেকট্রনিক পণ্যের মধ্যেও এমন কিছু নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ছিল। এগুলো সম্ভবত পাল্টে দিতে যাচ্ছে আমাদের নিত্যব্যবহার্য গতানুগতিক প্রযুক্তির চেহারা। এসব প্রযুক্তির কথা আপনারও জানা প্রয়োজন। চলুন, দেখে নিই ঝটপট।

হলোকানেক্টস হলোবক্স

হলোগ্রামে হবে যোগাযোগ

হলোগ্রামের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আশির দশক থেকে শুরু করে একালের জনপ্রিয় সাই-ফাই মুভি—স্টার ওয়ার্স, স্টার ট্রেক বা হালের মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের (এমসিইউ) চরিত্রগুলো একে অপরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ভিডিও কলের মতো এই হলোগ্রামের সাহায্যে যোগাযোগ করে। টিভি-সিনেমার পর্দায় আবির্ভাবের এত বছর পরও কিন্তু এ প্রযুক্তি এত দিনেও ঠিক ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনি। তবে এ বছর সিইএসে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের হলোগ্রাফিক প্রযুক্তির পসরা সাজিয়ে বসেছিল, যাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক হলোকানেক্টস অন্যতম।

হলোকানেক্টস হলোবক্স (Holoconnects Holobox) একটি বাক্সসদৃশ স্ক্রিনের মতো। এর সাহায্যে একদম মুভির মতোই হলোগ্রাফিক যোগাযোগ সম্ভব। ভিডিও কলে যেভাবে পরস্পরকে সরাসরি দেখার পাশাপাশি কথা বলা যায়, হলোকানেক্টস হলোবক্সের মাধ্যমেও তা করা যাবে। কিন্তু হলোবক্সের গভীরতা উপলব্ধি (Depth Perception) এবং সেই তথ্য দিয়ে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক প্রতিচ্ছবি বানানোর ক্ষমতার জন্য মনে হবে স্ক্রিনের লোকটি আসলেই সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। তার নড়াচড়া, অঙ্গভঙ্গি—সবকিছুই মনে হবে সামনে থাকা মানুষের মতো। তা ছাড়া অপর প্রান্তে থাকা মানুষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীরই দেখা যাবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।

কিন্তু এই হলোগ্রামগুলো এখনও স্ক্রিনে। তাই একদম মানুষের মতো অবিকল চেহারা ও গায়ের রং হয়তো বোঝা যাবে না ঠিক এখনই। তবে এর ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি তৈরি করার ক্ষমতা হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল স্ক্রিন প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক ধাপ। হয়তো একদিন হঠাৎ হলোবক্সের স্ক্রিন ব্যবহৃত হওয়া শুরু হবে ফোনের স্ক্রিনেই। তখন হয়তো মিটে যাবে ভিডিও কল এবং সরাসরি কথা বলার ব্যবধান।

লুকিং গ্লাস গো

লুকিং গ্লাস গো: সবার জন্য হলোগ্রাম

হলোকানেক্টস হলোবক্স ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করলেও বৃহদাকার ও দামের জন্য এখনই তা ব্যক্তিপর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী নয়। তবে সবার কাছে হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে বেশ কিছু ছোট গ্যাজেটও এসেছে এ বছরের সিইএসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লুকিং গ্লাস কোম্পানির গো হলোগ্রাফিক ডিসপ্লে।

লুকিং গ্লাস গো (Looking Glass Go) একটি ৬ ইঞ্চি ডিজিটাল হলোগ্রাফিক ফ্রেম, যেকোনো দ্বিমাত্রিক ছবিকে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রামে রূপান্তর করতে পারে। ডিজিটাল ছবির পাশাপাশি পুরোনো দিনের ফিল্ম বা পোলারয়েডের ছবি থেকেও হলোগ্রাম বানাতে পারবে ডিভাইসটি। এ জন্য লুকিং গ্লাস গো ব্যবহার করবে জেনারেটিভ এআই। এর মাধ্যমে পুরোনো ছবির জন্য ডেপ্থ ইনফরমেশন (গভীরতার উপলব্ধি দেওয়ার মতো তথ্য) বানিয়ে সেটিকে হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে ব্যবহারের উপযোগী করবে এই ডিজিটাল ফ্রেম।

এত ছোট স্ক্রিনে এ রকম থ্রিডি হলোগ্রাম বানানো ডিসপ্লে জগতের জন্য বড় মাইলফলক। স্পষ্টতই হলোগ্রাফিক প্রযুক্তি এখন এত উন্নত হয়ে গেছে যে তা ৬ ইঞ্চির ছোট্ট স্ক্রিনেও ব্যবহারের উপযোগী। তাই আশা করা যায়, এসব থ্রিডি হলোগ্রাম হয়তো আমাদের ফোনের ডিসপ্লেতেও চলে আসবে শিগগিরই।

র‍্যাবিট আর১

র‍্যাবিট আর১ এআই পকেট কম্প্যানিয়ন

নিজের ব্যক্তিগত ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকার ইচ্ছা কার নেই? এই চাহিদা মেটানোর দৌড়ে আছে গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিরি, চ্যাটজিপিটি, বার্ড ইত্যাদি। তবে এদের সীমাবদ্ধতা অনেক। এসব টুলস আমাদের জিজ্ঞাসা, চাহিদা, ইচ্ছা এবং কাজ বুঝলেও তা সঠিকভাবে করতে জানে না।

আপনি যদি এ চারটির কোনোটিকে এক সপ্তাহ পরের কোনো সকালের জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজারের একটি ফ্লাইট টিকিট কেটে দিতে বলেন, সব কটি টুলসই বুঝবে কী চাইছেন। তবে সেই চাওয়া পুরো মেটাতে পারবে না। প্রতিটিই আপনাকে ফ্লাইট ডিটেলস, ভাড়া, টিকিট কনফার্ম করার লিংক—এসব দেখাবে। কিন্তু এর কোনোটাই আপনার হয়ে টিকিট কেটে দিতে পারবে না। নিজেকেই সেই ওয়েবসাইটে গিয়ে টিকিট কনফার্ম করতে হবে। ব্যক্তিগত অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং এআই টুলগুলোর এই সীমাবদ্ধতা কাটাতেই বাজারে এসেছে র‍্যাবিট আর১ (Rabbit R1) পকেট এআই কম্প্যানিয়ন।

দেখতে ছোট এই পকেট-ডিভাইস এআই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো কাজ করবে। আপনি মুখে ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে টিকিট কেটে দিতে বললে তা করে দেবে। উবারের রাইড রিকোয়েস্ট রেখে দিতে বললে আপনার হয়ে সে-ই উবারে গাড়ি বা মোটরসাইকেল ঠিক করে দেবে। বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করতে চাইলে এনে দেবে তা–ও।

ডিভাইসটি অনেকটা ফোনের মতো কাজ করে। এর নিজের অপারেটিং সিস্টেমও আছে, নাম র‌্যাবিট ওএস। তবে ফোনের মতো এটি ব্যবহারকারীদের নিজেদের কাজে বিঘ্ন ঘটাবে না। মিনিমাল ফোনের কনসেপ্ট নিয়ে আগেও অনেক ফোন বাজারে এসেছিল। এসেনশিয়াল ফোন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তবে তাতে ছিল না এআই বা এআই–চালিত এসব নতুন ফিচার। তাই এ বছর সিইএসে প্রদর্শনীর পর থেকেই এই পকেট এআই নিয়ে নেটজুড়ে ব্যস্ততা চলছে অনেক।

তা ছাড়া যেহেতু ফোনের চেয়ে ছোট এই ডিভাইসে এআই–চালিত এসব সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে; সেদিন দূরে নেই, যখন ফোনের অ্যাসিস্ট্যান্টকে বললেই সে আপনার জন্য টিকিট কাটা, খাবার অর্ডার করা, কোনো ফর্ম তৈরি করা, ই–মেইলের উত্তর দেওয়ার মতো জটিল কাজগুলো করতে পারবে আপনার কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই।

হুন্দাই সুপারনাল এস-এ২

হুন্দাই সুপারনাল এস-এ২: এয়ার ট্যাক্সি

উবার, পাঠাও, ও ভাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মে বাইক, সিনএনজিচালিত অটোরিকশা এবং গাড়িভাড়া নিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ ঢাকাবাসীর যোগাযোগে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ঢাকা শহরের জ্যামে আটকে গেলে এসবে ব্যক্তিগত ট্রান্সপোর্টেশন রেন্টালও তেমন কাজে আসে না। তবে কেমন হবে, যদি সেই জ্যামের মধ্য থেকেই আপনার গাড়িটি হেলিকপ্টারের মতো সাঁই করে ওপরে উঠে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়?

এই অসম্ভব চিন্তাটাও হয়তো খুব জলদিই সত্যি হতে যাচ্ছে।

এবারের সিইএসে কোরিয়ান মোটরযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাই নতুন এক ইভিটিওএল এয়ারক্র্যাফট  (eVTOL aircraft – electric vertical take-off and landing aircraft) নিয়ে হাজির হয়। এর নাম তারা দিয়েছে সুপারনাল এস-এ২ (Supernal S-A2)।

এটি একটি যাত্রীবাহী ইলেকট্রিক উড়ন্ত গাড়ি। মাটি থেকে দেড় হাজার ফুট উচ্চতায় ১২০ মাইল ঘণ্টা বেগে যাত্রী নিয়ে একাধারে ২৫-৪০ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। গাড়িটি সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক হওয়ায় চলাচলের সময় অন্য যানবাহনের মতো তেমন শব্দও করে না।

তবে স্বপ্নের এই ফ্লায়িং কার ঠিক এখনই যাত্রী নিয়ে উড়াল দিচ্ছে না। আরও কিছু সময় লাগবে হুন্দাইয়ের এই কনসেপ্ট কার বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়তে।

ট্রান্সপারেন্ট টিভি

পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে ট্রান্সপারেন্ট টিভি

একসময় টেলিভিশন ছিল বিশাল ও ভারী। প্রযুক্তির বিবর্তনে সেই বিশালাকার টিভি এখন বইয়ের প্রস্থের আকারে এসে পৌঁছেছে। অনেক টিভির ডিসপ্লে তো আরও সূক্ষ্ম, স্রেফ কয়েক মিলিমিটার। এই ডিসপ্লেগুলো ছোট হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে এখন তা ইলেকট্রনিকসের সীমাবদ্ধতার কারণে আর ছোট করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইঞ্জিনিয়াররা থেমে থাকেননি। টেলিভিশন এবং ডিসপ্লে প্রযুক্তি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে এবার সিইএসে বেশ কিছু ভিন্নধর্মী টিভির দেখা মিলেছে, যার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে স্যামসাং এবং এলজির ট্রান্সপারেন্ট ডিসপ্লে টিভি।

স্যামসাং তাদের মাইক্রোএলইডি (microLED) এবং এলজি তাদের সিগনেচার ওলেড (OLED) প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিভির স্ক্রিনকে স্বচ্ছ ডিসপ্লেতে রূপ দিয়েছে। ফলে ডিসপ্লেতে থাকা ছবি দেখার পাশাপাশি টিভির পেছনের পরিবেশের সঙ্গেও মিশে যাচ্ছে স্ক্রিন।

ইতিমধ্যে বাজারজাতকরণও শুরু হয়ে গেছে এই টিভিগুলোর। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগির অন্যান্য ডিভাইস এবং গ্যাজেটেও দেখা মিলবে এই ডিসপ্লের। তা ছাড়া টিভির এই স্বচ্ছ স্ক্রিন এবং লুকিং গ্লাস গোর হলোগ্রাফিক প্রতিচ্ছবি ফোনে ব্যবহার শুরু হলে এত বছর শুধু মুভিতে দেখে আসা ফিউচারিস্টিক ট্রান্সপারেন্ট হলোগ্রাফিক ফোন ব্যবহারের স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নিতে পারে।

ফ্লেক্স ইন অ্যান্ড আউট ফ্লিপ ফোন

স্যামসাংয়ের ব্যতিক্রমী ফ্লিপ ফোন

টিভি স্ক্রিনের পাশাপাশি ফোনের স্ক্রিনের কিছু ব্যতিক্রম প্রযুক্তির দেখা মিলেছে সিইএসে। ফোল্ডিং ফোনকে মেইনস্ট্রিম মার্কেটে পরিচিত করার পর স্যামসাং এবার নিয়ে এসেছে ফ্লেক্স ইন অ্যান্ড আউট ফ্লিপ ফোন। গতানুগতিক ফোল্ডিং ফোনের মতো শুধু একদিকে নয়; সামনে এবং পেছনে—দুই দিকেই ভাঁজ করে রাখা যাবে। এতে ফোনের মেইন ডিসপ্লেকেও ফোল্ডেড অবস্থায় সেকেন্ডারি ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

লেনোভো থিঙ্কবুক প্লাস জেন ৫ হাইব্রিড

লেনোভো থিঙ্কবুক প্লাস জেন ৫ হাইব্রিড: উইন্ডোজ ও অ্যান্ড্রয়েড একসঙ্গে

বাইরে থেকে লেনোভোর থিঙ্কবুক প্লাস জেন ৫ হাইব্রিডকে দেখতে সাধারণ টু-ইন-ওয়ান ল্যাপটপ-ট্যাবলেট হাইব্রিডের মতোই মনে হয়। কিন্তু স্ক্রিনরূপী ট্যাবলেটটিকে আলাদা করলেই বেরিয়ে আসে এর আসল রূপ। দেখতে আর দশটা উইন্ডোজ ল্যাপটপের মতো মনে হলেও এতে রয়েছে দুটি অপারেটিং সিস্টেম—উইন্ডোজ ১১ এবং অ্যান্ড্রয়েড ১৩।

কি–বোর্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেটের মতো কাজ করলেও এতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ফাইল এবং অ্যাপসও ব্যবহার করা যায়। আবার ডক করা অবস্থায় চাইলে সম্পূর্ণ উইন্ডোজ কম্পিউটারের মতোই ব্যবহার করা যাবে এই হাইব্রিড ডিভাইস। তা ছাড়া এতে রয়েছে একটি বিশেষ ওএস সুইচ বাটন। এর মাধ্যমে নিমেষেই ডক করা অবস্থায় উইন্ডোজ থেকে অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যান্ড্রয়েড থেকে উইন্ডোজ মেশিনে রূপান্তর করা যাবে এই ট্যাবলেট-কাম-ল্যাপটপকে। ফলে একই ডিভাইসে উইন্ডোজ সফটওয়্যারের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপসও ব্যবহার করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

সিইএস ২০২৪-এ এবার নিজেদের প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশি প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন

এসব ছাড়াও এ বছর সিইএসে এসেছে আরও কিছু চমক। যেমন—

  • ভোক্সওয়াগন তাদের আইডি ৪ এবং আইডি ৭ ইলেকট্রিক গাড়ি দুটিতে চ্যাটজিপিটি-চালিত এআই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট যোগ করেছে।

  • বিএমডব্লিউ আনছে রং বদলানো গাড়ি। ই-ইঙ্ক দিয়ে ঢাকা এই কনসেপ্ট গাড়ির বাহ্যিক আবরণ ৩২টি ভিন্ন রঙে পরিবর্তন করা যাবে গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকেই।  

  • ফ্রেঞ্চ কোম্পানি উইথিংস (Withings) বিমও (BeamO) নামে নতুন এক মেডিকেল ডিভাইস বাজারে এনেছে, যা একই সঙ্গে একটি থার্মোমিটার, অক্সিমিটার, স্টেথোস্কোপ এবং ইসিজি মেশিনের কাজ করতে পারে।

  • ডেল এক্সপিএস এবং এইসার সুইফটের নতুন উইন্ডোজ ১১ ল্যাপটপগুলোতে আসছে এআই বাটন, যার মাধ্যমে এক ক্লিকেই ব্যবহার করা যাবে মাইক্রোসফট কোপাইলট এআই।

  • ইউটিউব-খ্যাত মিস্টার মোবাইলের হাত ধরে আইফোনের জন্য এসেছে নতুন ক্লিকস কাভার, যার মাধ্যমে আইফোনেও ব্যবহার করা যাবে পুরোনো দিনের সেই ফুল ফিজিক্যাল কোয়ার্টি (QWERTY) কি–বোর্ড বাটন।

লেখক: ব্যবস্থাপক, ডেফ্টাইল্ড

সূত্র: সিইএস, ওয়্যার্ড এবং সিনেট