কৃত্রিম বৃষ্টিপাত

খরা বা প্রচণ্ড গরমে সবার যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন স্বস্তি হয়ে দেখা দেয় এক পশলা বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি চাইলেই তো আর বৃষ্টি পাওয়া যায় না। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব হতো তাহলে কেমন হত? সে চেষ্টাও বেশ কয়েক দশক করে চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সেই ১৯৪০ সাল থেকে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাফল্যও ধরা দিয়েছে অনেক আগে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর এই প্রযুক্তির নাম ক্লাউড সিডিং। এই কদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্লাউড সিডিং পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে।

বৃষ্টিপাতের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সূর্য। সূর্যের তাপে নদী-সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায় আকাশে। ভূ-পৃষ্ঠের চেয়ে মেঘ অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। ফলে বাষ্প বিন্দু বিন্দু পানির কণায় পরিণত হয়। অনেক অনেক কণা একত্র হয়ে তৈরি করে মেঘ। এই কণাগুলো ছোট ও ওজনেও কম। তাই সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে পড়ে না। ধূলিকণা বা ধোঁয়ার সংস্পর্শে এসে ছোট ছোট পাণির কণাগুলো ঘণীভূত হয়ে বড় কণায় পরিণত হয়। এরপর সেগুলো বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে মাটিতে।

ছোট কণাগুলো জুড়ে বড় পানির কণা তৈরি হতে বেশ সময় লাগে। ততক্ষণে মেঘ উড়ে অন্য এলাকায় চলে যেতে পারে। তখন আর বৃষ্টিই হয় না ওই এলাকায়। তাই সময়ের আগেই যদি ছোট কণাগুলো বড় পরিণত করা যায় কৃত্রিমভাবে, তাহলে সময়ের আগেই বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব। আর এই কাজটিই করেন বিজ্ঞানীরা। এটাই হলো কৃত্রিম বৃষ্টিপাত। আর এজন্য ব্যবহার করা হয় ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মেঘের ওপরে উড়োজাহাজ বা ড্রোনের মাধ্যমে লবণকণা অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড বা সিলভার আয়োডায়িডের কণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলো ধূলিকণা বা ধোঁয়ার মত কাজ করে। এই কণাগুলোর সংস্পর্শে পাণির ক্ষুদ্র কণাগুলো ঘনীভূত হয়ে বড় কণায় পরিণত হয়। তারপর মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ঝরে পড়ে বৃষ্টি আকারে।

শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত নয়, ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে চীন এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিল। খেলার মাঠে মেঘ জড়ো হওয়ার আগেই খেলার মাঠ থেকে দূর কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিল। ফলে বৃষ্টি খেলার মাঝে বিঘ্ন ঘটায়নি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস।