আপনি কি জানেন

আমাদের অনেকেই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকি, অর্থাৎ নাসিকাগর্জন। বেশ অস্বস্তিকর। একটা হাসাহাসির ব্যাপার হয়ে ওঠে। অথচ আমরা জানিই না যে ঘুমের মধ্যে এই কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছি।

একই ঘরে অন্য কেউ ঘুমালে তাদের ঘুমের সমস্যা হয়। অবশ্য নাক ডাকার রোগটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। সাধারণ নাক ডাকা অথবা ঘুমের মধ্যে হালকা নাক ডাকা কিন্তু সাধারণত স্বাস্থ্যবিভ্রাট নয়। কিন্তু প্রচণ্ড শব্দে ও একটানা নাক ডাকার সমস্যা থাকলে চিকিৎসা প্রয়োজন।

নাক ডাকি কেন আর কীভাবে এটা দূর করা যায়, সেটা জানা থাকলে হয়তো আমাদের অস্বস্তি দূর করার একটা সুযোগ হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক এরিক ভান্সের একটি সুন্দর লেখা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-সায়েন্স টাইমসে ১২ মে ২০২২ অনলাইন এডিশনে ছাপা হয়েছে।

তিনি লিখেছেন, ঘুমের সময় জিহ্বা, মুখের ভেতরের তালু ও গলার পেশিগুলো শিথিল হয়ে শ্বাস গ্রহণের পথে বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে নাক ডাকার সমস্যা হয়।

এটা অবশ্য জানা কথা। ঘুম ও নাক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডালাসের ডা. কেন্ট স্মিথ জানিয়েছেন, শ্বাসতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথে বাধার জন্য পেশিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। এটাই নাক ডাকার একটি অন্যতম কারণ।

কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

দেখা গেছে, নাক ডাকার সমস্যা নারীদের চেয়ে পুরুষদের বেশি হয়। নারীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পুরুষ এ রোগে ভোগেন। অনেক কারণে নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। যেমন গলার বিশেষ গড়ন, জিহ্বার অস্বাভাবিক পেশি, শরীরের ওজন, অ্যালার্জির প্রবণতা, ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ এবং সর্বোপরি বয়স।

বয়স বাড়লে পেশিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। তখন গলার শেষ প্রান্তে শ্বাসনালির মুখে বাতাস চলাচলে বাধা থেকে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।

কী করব

যদি সাদামাঠা নাক ডাকার সমস্যা হয়, তাহলে তেমন চিন্তার কিছু নেই। ওজন কমাতে হবে। পাশ ফিরে ঘুমালে উপকার পাওয়া যায়। ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ থাকলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা দরকার। একটু উঁচু বালিশ নাক ডাকা উপশমে সাহায্য করে। জিহ্বা ও গলার পেশি শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্যায়াম করা দরকার।

এ ধরনের ব্যায়াম হলো আসলে মুখের ভেতরের জিহ্বা, চোয়াল, গলার গোড়ার অংশের পেশিগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য মুখমণ্ডলের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় খুব হালকাভাবে দু-চার মিনিট নাড়াচাড়া করা।

এতে ঘুমের সময়ও জিহ্বা ও গলার পেশিগুলো টান টান থাকবে, সহজে গলার শ্বাসনালির দিকে নেমে যাবে না। তবে অনেক সময় সমস্যাটা তীব্রতর হতে পারে। যেমন যদি ঘণ্টায় ১৫ বারের বেশি নাক ডাকার জন্য ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা গুরুতর। যদি ঘণ্টায় ৩০ বারের বেশি ঘুম ভেঙে যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসক দেখাতে হবে।

কারণ, শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এমনকি হার্ট ফেইলিউরও হতে পারে। নাক ডাকার সমস্যা কতটা গুরুতর, তা পরিমাপের বিশেষ যন্ত্র আছে। সমস্যা বেশি হলে যন্ত্রের মাধ্যমে পরিমাপের ব্যবস্থা করা দরকার।

তবে স্লিপ অ্যাপনি বা শ্বাস গ্রহণে বাধার কারণে ঘুমের সমস্যা হলে কিছু বিশেষ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার যায়। এর সাহায্যে ঘুমের মধ্যে সহজে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করা সম্ভব। তবে এসব বিষয়ে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আব্দুল কাইয়ুম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক [email protected]