আপনি কি জানেন

প্রতীকী ছবি

আমাদের দুটি চোখ, দুটি কান, হাত-পা দুটি করে অথচ নাক কেন একটি? এর উত্তর খুব সহজ নয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আমাদের বেশির ভাগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুটি করে থাকার বিশেষ কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো আমাদের দেহের গঠনের প্রতিসাম্য। এটা আমাদের দৈহিক গঠনের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভ্রূণের বিকাশের সময়ই নাক, চোখ, হাত, পা প্রভৃতি মূল কয়েকটি অঙ্গের বিকাশ ঘটে প্রতিসাম্য রক্ষা করে, যেন আয়নার প্রতিবিম্ব। দুই পাশে দুটি চোখ, দুটি কান প্রভৃতি। এ প্রতিসাম্য আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল শর্ত হিসেবে কাজ করে। এ–সম্পর্কিত বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পরে দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে বলি, নাক কেন একটি।

ফাইল ছবি

একটি নাকের নাসাপথ কিন্তু দুটি

লক্ষ করলে দেখব, আমাদের নাক যদিও একটি, কিন্তু এর দুটি নাসাপথ। অর্থাৎ একটি নাক এমনভাবে তৈরি যেন সে দুটি নাসাপথের মাধ্যমে একই সঙ্গে দুই ধরনের কাজ করতে পারে। নাসাপথের প্রধান কাজ দুটি। একটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য বাতাস গ্রহণ। ফুসফুস এ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, যা রক্তের মাধ্যমে দেহকোষে পৌঁছায়। জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন দরকার। সুতরাং একটি নাক অবশ্যই দরকার। কিন্তু একটি নাকের ভেতর দুটি নাসাপথ কেন?

কারণ, নাকের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো গন্ধ গ্রহণ। তার মানে এ নয় যে একটি নাসাপথ অক্সিজেন গ্রহণ করে ও অপর নাসাপথ গন্ধ গ্রহণ করে। আসলে দুটি নাসাপথই অক্সিজেন ও ঘ্রাণ গ্রহণ করে। কিন্তু কোনো কোনো গন্ধ বিশ্লেষণে মস্তিষ্ক একটু বেশি সময় নিতে পারে। তখন ঘ্রাণ গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। এ সময় নাসাপথের একটি মূলত গন্ধ বিশ্লেষণে বেশি ব্যস্ত থাকে এবং অপর নাসাপথ শ্বাস গ্রহণের মূল কাজটি করে। প্রকৃতপক্ষে নাসাপথ দুটির একটি মাঝেমধ্যে কিছু সময় একটু সংকুচিত ও অপরটি একটু প্রসারিত থাকে। এই পালাবদল পর্যায়ক্রমে হয়। কেন, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেন না। তবে দুটি নাসাপথ সব সময় একই গতিতে সক্রিয় থাকে না, এটা নিশ্চিত। আবার কখনো ঠান্ডা লেগে একটি নাসা পথ বন্ধ থাকলে আমাদের গন্ধ গ্রহণের অনুভূতি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে। তখন আমরা গন্ধ অনুভব করতে পারি না। ওই সময় অপর নাসাপথ মূলত শ্বাসপ্রশ্বাসের দায়িত্ব পালন করে। একটি নাকের মধ্যে দুটি নাসাপথ থাকায় এরা ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় শ্বাস ও ঘ্রাণ গ্রহণের কাজ দুটি সমন্বিতভাবে করতে পারে।

চোখ-কান দুটি করে কেন

আমাদের দুটি চোখের মধ্যে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব থাকে। ফলে একটি বস্তু আমরা দুটি কোণ থেকে দেখি। মস্তিষ্ক এ পার্থক্য বিশ্লেষণ করে ওই বস্তু কতটা চওড়া, তা বুঝতে পারে। এভাবে আমরা বস্তুর ত্রিমাত্রিক চিত্র পাই। আবার পাশাপাশি দুটি বস্তুর কোনটা কাছে, কোনোটা দূরে, তা বোঝার জন্যও মুখের দুই পাশে দুই চোখের অবস্থান বিশেষ ভূমিকা রাখে। চোখ একটা থাকলে চারপাশের সঠিক চিত্র আমরা হয়তো বুঝতে পারতাম না। আদিম যুগে মানুষ যখন প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকত, তখন পশু শিকার করার জন্য দুই চোখের বিশেষ অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এখনো দুই চোখের অবস্থান আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
দুটি কানেরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যখন কোনো শব্দ শুনি, তখন সেই শব্দ কোনো দিক থেকে আসছে তা বোঝার জন্য দুই কানের প্রয়োজন। শব্দ দুই কানে পোঁছাতে সময়ের সামান্য পার্থক্য থাকে। এ পার্থক্য বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্ক শব্দের অবস্থান বুঝতে পারে। ধরা যাক, আমি বনে বেড়াতে গিয়েছি। এ সময় বাঘের একটা গর্জন কানে শুনলাম। এ শব্দ কোনো দিক থেকে আসছে, সেটা আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি এবং সে অনুযায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারি। প্রাণ রক্ষার জন্য দুই কানের বিশেষ অবদান রয়েছে। আধুনিক জীবনে রাস্তায় চলাফেরার সময়ও আমরা গাড়ির হর্নের শব্দ কোনো দিক থেকে আসছে, তা বুঝতে পারি। তাই দুটি কান না থাকলে আমাদের হয়তো রাস্তাঘাটে গাড়িচাপা পড়ার ভয় আরও বেড়ে যেত।

দুই পা, দুই হাত কেন

দুই পা না থাকলে আমাদের হাঁটাই কঠিন হতো। আর দুই হাত ছাড়া আমরা অনেক কাজই করতে পারতাম না। এটা তো সবাই বুঝি। কিন্তু আরেকটি ব্যাপার আছে। চলাফেরার সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্যও এদের একটি ভূমিকা আছে। হয়তো সবাই লক্ষ করেছি, হাঁটার সময় বাঁ পা আগে বাড়ালে ডান হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেছনে চলে যায়। পরমুহূর্তে ডান পা আগে বাড়ালে বাঁ পা সামনে চলে যায়। এটা হলো চলাফেরার সময় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া।

এভাবে দেখা যায়, আমাদের শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ জোড়ায় জোড়ায় হওয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে জোড়ায় জোড়ায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকার কারণেই হয়তো মানুষ টিকে থাকার সামর্থ্য অর্জন করেছে।

*লেখক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক,
[email protected]