এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির জন্মকথা
আলো কণা না তরঙ্গ, এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক ছিল তিন শতাব্দী ধরে। নিউটন বলেছিলেন আলো কণা, সমসাময়িক বিজ্ঞানী হাইগেনস বলেছিলেন আলো তরঙ্গ। দুজনের তত্ত্বেই যুক্তি ছিল। কিন্তু দুশো বছর পর আরেক ব্রিটিশ টমাস ইয়ং ডাবল স্লিট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন আলো আসলে তরঙ্গ। রন্টজেন এক্স-রশ্মি আবিষ্কার পর এটা নিয়েও কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। এর আগে ক্যাথোড রশ্মি নিয়েও বিজ্ঞানীদের এই দ্বিধা ছিল। শেষমেশ প্রমাণিত হয়, ক্যাথোড রশ্মি আসলে ইলেকট্রন কণার স্রোত। তাই এক্স-রশ্মি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব ছিল না রন্টজেনের পক্ষে। তবে এক্স-রশ্মি একবার আবিষ্কার হওয়ার পর সেটা নিয়ে শুধু রন্টজেনই নয়, অনেক বিজ্ঞানীই এর পেছনে আদাজল খেয়ে নামলেন।
রন্টজেন এই রশ্মিকে তরঙ্গই ভেবেছিলেন। তরঙ্গবাদীদের সামনে তখন নতুন সমস্যা দেখা দেয়। এটা যদি তরঙ্গই হয়, তাহলে কী ধরনের তরঙ্গ? শব্দের মতো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ, নাকি আলোর মতো অনুপ্রস্থ তরঙ্গ? তা নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। রন্টজেন নিজে মনে করতেন এক্স-রশ্মি তরঙ্গ। তিনি আরও ব্যাপক পরিসরে গবেষণা শুরু করেন। রন্টজেন প্রথমেই ভাবেন, এক্স-রে কেন ও কীভাবে তৈরি হয়?
এক্স-রে তৈরি হয় ক্যাথোড টিউব থেকে। ক্যাথোড টিউব নিয়ে গবেষণা চলেছে অনেক অনেক বছর। ক্যাথোড বায়ূশূন্য ক্যাথোড টিউবের দেয়ালে আঘাত করে ক্যাথোড রশ্মি, সেই আঘাতের ফলেই উৎপন্ন হয় এক্স-রে। কিন্তু আঘাতের কারণেই বা কেন এক্স-রে উৎপন্ন হলো?
রন্টজেন এক্স-রে আবিষ্কার করছেন, তখনো নিশ্চিত হয়নি ক্যাথোড রশ্মি আসলে কণা। ১৮৯৭ সালে জে জে টমসন প্রমাণ করেন, ক্যাথোড রশ্মিই হলো ইলেকট্রন কণার স্রোত। সে সব ইলেকট্রন অতি উচ্চগতির। প্রবল বেগে ধেয়ে চলা এসব ইলেকট্রন যখন ক্যাথোড টিউবের দেয়ালে আঘাত করে, তখন এরা বাধা পায়, ফলে কমে যায় গতি। সুতরাং কমে যায় ইলেকট্রনের গতিশক্তিও। এই হারানো গতিশক্তিটা কোথায় যাবে? শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বলে, কোনো শক্তি পুরোপুরি ধংস হয়ে যেতে পারে না। এক শক্তি আরেক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় মাত্র। ক্যাথোড টিউবে যেসব ইলেকট্রন আঘাত করে, ফলে কমে যায় তাদের গতিশক্তি, সেই হারানো গতিশক্তিটা রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে বিদ্যুৎচুম্বকীয় শক্তি, এক্স-রশ্মির বিকিরণ রূপে। অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এক্স-রশ্মি আসলে এক ধরনের বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গ।
এই ঘটনা, এই ব্যাখ্যা থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হলেন, কাচের মতো স্বচ্ছ পদার্থও প্রবল বেগে ধেয়ে চলা ক্যাথোড রশ্মির অর্থাৎ ইলেকট্রনের গতি কমিয়ে দিতে সক্ষম। তখন বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে নতুন ভাবনা। যদি কাচের চেয়ে আরও ঘন আর আরও ভারী বস্তুর ভেতর দিয়ে ক্যাথোড রশ্মি, অর্থাৎ ইলেকট্রনকে যেতে দেওয়া হয়, তাহলে কী ঘটবে?
নিশ্চয়ই ইলেকট্রনের গতি কমবে আরও দ্রুত! তাই যদি হয়, ইলেকট্রন বেশি করে গতিশক্তি হারাবে, সেই বেশি বেশি হারানো গতিশক্তি দিয়ে যে এক্স-রশ্মি উৎপন্ন হবে, তার শক্তি নিশ্চয়ই আরও বেশি হবে?
এই ব্যাপারটিই পরীক্ষা করে দেখার কথা ভাবলেন বিজ্ঞানীরা। কাচের চেয়েও ভারী ও ঘন বস্তু তাহলে কী হতে পারে?
ধাতব পাতের চেয়ে আদর্শ বস্তু এক্ষেত্রে আর কী আছে?
বিজ্ঞানীরা ধাতব পাত দিয়ে ক্যাথোড টিউব থেকে উৎপন্ন ইলেকট্রনের গতি কমিয়ে দেখলেন। একটি মাত্র ধাতব পাত নয়, বিভিন্ন ধাতুর পাত দিয়ে পরীক্ষাটা করলেন।
এই পরীক্ষাগুলো করা হলো ক্যাথোড নলের ভেতরেই। ক্যাথোড রশ্মি নির্গত হয় যে পথ থেকে, তার পাশে বসানো হলো ধাতব পাত। অর্থাৎ ক্যাথোড রশ্মি বা ইলেকট্রনের স্রোত ক্যাথোড পাত থেকে নির্গত হয়ে যে পথে ছুটে চলে সেই পথেই বসানো হলো ধাতব পাত। সুতরাং ক্যাথোড পাত থেকে নির্গত ইলেকট্রনের স্রোত সহজেই বাধা পেল ধাতব পাতের দ্বারা। এই ধাতব পাতগুলির নাম দেওয়া হলো অ্যান্টিক্যাথোড। এই অ্যান্টিক্যাথোডে বাধা পেয়ে ইলেকট্রনের স্রোত গতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তার ফলে উৎপন্ন হয় শক্তিশালী এক্স-রশ্মি।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস গ্রোভার বার্কলা পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। কী এমন কাজ করেছিলেন তিনি, যেজন্য নোবেল ওঠে তাঁর ঝুলিতে? বার্কলা এক ঐতিহাসিক আবিষ্কার করেন ১৯১১ সালে। তিনি দেখেনে, এক্স-রশ্মির ভেদনক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য এই আবিষ্কারটা নতুন নয়। রন্টজেনই দেখেছিলেন ব্যাপারটা। বার্কলার আবিষ্কারটা অন্য রকম। তিনি লক্ষ্য করেন, আন্টিক্যাথোডে ব্যবহার করা ধাতুর ওপরে নির্ভর করে এক্স-রশ্মির ভেদনক্ষমতা। অর্থাৎ অ্যান্টিক্যাথোডে ব্যবহার করা প্রতিটি ধাতুর জন্য উৎপন্ন এক্স-রশ্মির ভেদনক্ষমতা নির্দিষ্ট। এই বিষয়টা আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে গিয়ে বার্কলা আবিষ্কার করেন, একটা নির্দিষ্ট ধাতু থেকে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘের এক্স-রে উৎপন্ন হয়।
বার্কলার চমক এখানেই শেষ হলে না। তিনি দেখলেন, কিছু কিছু ধাতু দুই ধরনের এক্স-রে। অর্থাৎ দুটি ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘের আলাদা আলাদা এক্স-রশ্মি বিকিরণ করছে। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আলাদা, দুই ধরনের এক্স-রশ্মির ভেদনক্ষমতাও তাই আলাদা। এখানেই থামলেন না বার্কলা, বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ও ভেদক্ষমতার এক্স-রে আবিষ্কার করলেন তিনি।
বার্কলার কাজটিকে আরেকধাপ এগিয়ে নিলেন আরেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি মোসলে। ১৯১৩ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির সাহায্যে বিভিন্ন বিভিন্ন উৎস থেকে নিঃসরিত বিভিন্ন ধরনের এক্স-রশ্মির ধর্ম ব্যাখ্যা করলেন তিনি।
দুই
এক্স-রে নিয়ে বিজ্ঞানীদের দ্বিধা-দ্বন্দের কথা লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে। এক্স-রেকে কেউ কেউ কণা মনে করতেন, কেউ কেউ মনে করতেন তরঙ্গ। কিন্তু দিন যত এগোয়, গবেষণা যত বাড়ে, তরঙ্গবাদীদের ভীত তত মজবুত হয়। বিজ্ঞানীরা মেনে নিতে বাধ্য হন, এক্স-রে আসলে তরঙ্গধর্মী। তরঙ্গধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার ডাবল স্লিট পরীক্ষার।
ডাবল স্লিটের পরীক্ষায় উৎরে যায় এক্স-রশ্মি। বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিলেন, আলো আসলে তরঙ্গ। কিন্তু এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব ছোট। তাই সমস্যা হলো, ডাবল স্লিটের পরীক্ষায় খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যত কম হবে, ডাবল স্লিটের পরীক্ষায় দুটি ছিদ্রের মধ্যে দূরত্ব তত কম হতে হবে, নইলে ব্যতিচার নকশা তত অনুজ্জ্বল হবে। সুতরাং সাধারণ ডাবল স্লিটের পরীক্ষায় এক্স-রশ্মির ইন্টারফারেন্স পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়া মুশকিল। তখন এক্স-রে তরঙ্গবাদীরা অন্য চিন্তা করলেন। কাচের প্লেটের ওপর পাশাপাশি দুটো আঁচড় কেটে তৈরি করলেন অপবর্তন গ্রেটিং। এর সাহায্যে অনেক ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘের আলোরও ব্যাতিচার ঘটানো যায়। আমরা আগেই দেখেছি, একেক রকম ধাতু থেকে একেক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এক্স-রে নির্গত হয়। যেগুলো মোটামুটি বড় তরঙ্গ দৈর্ঘের, তাদের নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যেসব এক্স-রের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র, সেগুলোর ক্ষেত্রে অপবর্তন গ্রেটিংয়েও ভালো কাজ হয় না। তখন অপবর্তন গ্রেটিংয়ের কীভাবে দুই ছিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমানো যায়, তা নিয়ে চলে বিস্তর গবেষণা, এমন কোনো ক্ষুদ্র ব্যবস্থা কি তৈরি করা যায়?
জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স ভন লু তখন নতুন পথ বাতলে দিলেন। বললেন, কাচের প্লেটের ওপরেই অপবর্তন গ্রেটিং তৈরি করতে হবে তার কোনো মানে নেই। বরং আমরা সহজ পথ খুঁজতে পারি। আর সেই সহজ পথটা তৈরি হয়েই আছে।
কী সেই পথ?
সেগুলো হলো বিভিন্ন পদার্থের স্ফটিক, যাকে বেশিরভাগ মানুষ ক্রিস্টাল বলে চেনে। একটা বস্তু কখন ক্রিস্টাল তৈরি করে? যখন বস্তুর ভেতর অণুগুলো একটা নির্দিষ্ট সজ্জায় থাকে। অর্থাৎ বস্তুর সবগুলো অণুর মধ্যে বন্ধন একই রকম। যেদিক দিক থেকেই দেখুন, অণুগুলোর সজ্জা একইরকম দেখবেন। তরল পানিতে একটা অণুর সঙ্গে আরেকটা অণুর বন্ধন সুষম নয়। একেক জায়গায় একেক রকম। কিন্তু বরফের ভেতর পানির অণুগুলোর মধ্যে বন্ধন একেবারে সুষম। তাই বরফখণ্ডগুলো একেকটা ক্রিস্টাল বা স্ফটিক। ক্রিস্টালের ভেতর পরমাণুগুলো সজ্জিত থাকে স্তরে স্তরে। দুটি স্তরের মধ্যে তাই খুব সূক্ষ্ম ফাঁক থাকে। এজন্যই ক্রিস্টালগুলোর ঘনত্ব তুলনামূলক কম থাকে।
এই যে দুই স্তর মধ্যে যে সূক্ষ্ম ফাঁক, এগুলোকে অপবর্তন গ্রেটিংয়ের আঁচড়ের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ভেতর দিয়ে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে আলোক রশ্মি। ক্রিস্টালের ভেতর দুটি স্তরের দূরত্ব খুবই কম। তাই ম্যাক্স ভন লু বললেন, সহজেই অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এক্স-রের ব্যতিচার ঘটনা যেতে পারে। এখানে দুটি স্তরের মধ্যে দূরত্ব একটি অণু বা পরমাণুর সমান।
ক্রিস্টাল নয়, এমন স্বচ্ছ বস্তুর মধ্যে অণু বা পরমাণুর সজ্জা সুষম হয় না, এলোমেলো। তাই এদের মধ্য দিয়ে যাদি এক্স-রে পাঠানো হয়, তহলে এক্স-রেও সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এলোমেলোভাবে চলবে। ক্রিস্টাল থেকে বেরিয়ে একটা নকশাও তৈরি করবে পর্দার ওপর। সেই নকশাটা হবে গোলাকৃতির- এর মাঝখানটা হবে অন্ধকার একটা ছোট্ট বৃত্তের মতো। বৃত্তের বাইরের দিকটা ক্রমেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে। কিন্তু কিন্তু টমাস ইয়ং যেমন ব্যতিচার নকশা পেয়েছিলেন, তেমনটা পাওয়া যাবে না। ইয়ংয়ের নকশায় দেয়ালের ওপর যতটুকু জায়গাজুড়ে নকশা তৈরি হয়, তার সব জায়গায় একটার পর একটা অন্ধকার ও উজ্জ্বল বিন্দু বা রেখা পাওয়া যায় সুষমভাবে।
লু বললেন, সত্যিকারের ক্রিস্টালের মধ্য দিয়ে যখন এক্স-রে যাবে, তখন সেগুলো সুনির্দিষ্ট পথে যাবে। দুটি স্তরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এক্স-রশ্মি ক্রিস্টাল থেকে বের হওয়ার পর কোনো দেওয়ালের ওপর পড়ে, তাহলে এরা সত্যি সত্যি একটা ব্যাতিচার নকশা তৈরি করবে। সেটা ইয়ংয়ের নকশার মতো।
সে না হয় হলো, এক্স-রে তো দৃশ্যমান আলোকরশ্মি নয়, তাহলে সে দেয়াল বা পর্দার ওপর ব্যতিচার নকশা তৈরি করবে কীভাবে? আর যদি করেও সেটা আমরা দেখতে পাব তো?
ইয়ংয়ের পরীক্ষার মতো সাধারণ দেয়াল বা পর্দা নিয়ে পরীক্ষা করলে ফল পাওয়া যাবে না। কিন্তু সাধারণ পর্দার বদলে যদি ফটোগ্রাফিক প্লেট ব্যবহার করা হয়, যে সব প্লেট হাড় ভাঙা, কিংবা বুক বা পেটের ভেতরের রোগ নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাতে অবশ্যই ব্যতিচার প্যাটার্ন ফুটিয়ে তোলা যাবে।
ম্যাক্স ভন লু নিজেই একটা পরীক্ষা করেন। ১৯১২ সালে। জিংক সালফাইডের ক্রিস্টালের ভেতর দিয়ে চালনা করেন এক্স রশ্মি। সত্যি যেমনটা অনুমান করেছিলেন লু, ফটোগ্রাফিক প্লেটে ইয়ংয়ের ডাবল স্লিট পরীক্ষার মতোই পাওয়া গেল ব্যতিচার নকশা। এক্স-রে ক্রিস্টালগ্রাফির বিশাল এক দুনিয়া উন্মোচিত হলো বিজ্ঞানীদের সামনে, ঠিক যেন আলিবাবার গুহার মতো করে।
বিজ্ঞানীরা শতভাগ নিশ্চিত হলেন, এক্স-রশ্মি সত্যি সত্যিই একধরনের আলোক রশ্মি। অর্থাৎ এক্স-রে তরঙ্গ এবং সাধারণ আলোক রশ্মির মতো অনুপ্রস্থ তরঙ্গ।
এই বিশাল অবদানের জন্য নোবেল কমিটি অবশ্য স্বীকৃতি দিতে দেরি করেনি। ১৯১৪ সালেই নোবেল দেওয়া হলো লু কে।
ম্যাক্স ভন লুর দেখানো পথে হাঁটলেন আরও দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী হেনরি ব্র্যাগ ও তাঁর পুত্র লরেন্স ব্র্যাগ। পিতা-পুত্র আদাজল খেয়ে লেগে পড়েন এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফিতে। তাঁরা দেখালেন, লু ক্রিস্টালের মধ্য দিয়ে এক্স-রে প্রবাহিত করে যেমন এর ব্যতিচার নকশা তৈরিতে সক্ষম হয়েছিলেন, একই পদ্ধতিতে এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যও নির্ণয় করা সম্ভব। এর জন্য অবশ্য একটা শর্ত জুড়ে দেন দুই ব্র্যাগ। বললেন, এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এ পদ্ধতি নির্ণয় করা সম্ভব, যদি ক্রিস্টালের যে দুই স্তরের মধ্য দিয়ে এক্স-রে চালনা করা হচ্ছে, সেই দুই স্তরের মধ্যবর্তী দূরত্ব নির্ণয় করা যায়।
লু যে বছর জিংক সালফাইডের মধ্য দিয়ে এক্স-রে প্রবাহিত করে অপবর্তন নকশা তৈরি করেছিলেন, তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯১৩ সালে দুই ব্র্যাগ এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য নির্ণয় করে দেখালেন। তাঁরা দেখালেন, অ্যান্টিক্যাথোডের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে এক্স-রের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ৫০ হাজার ভাগের এক ভাগ থেকে ৫০ ভাগের এক ভাগ হয়। স্বীকৃতিও মিলল শিগগির, ১৯১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন হেনরি আর লরেন্স ব্র্যাগ।
লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা