ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা

১৯০১ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক আর আইনস্টাইন মিলে কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্ম দিয়েছিলেন, তার ওপর ব্যাপক কাজ করেন নীলস বোর। কিন্তু কোয়ান্টা তত্ত্ব ব্যবহার করে তৈরি বোরের পরমাণু মডেলে ইলেকট্রনের গতিপথ নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। সেই ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য হাইজেনবার্গের হাতেই জন্ম হয় ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যার। সঙ্গে সঙ্গে কোয়ান্টাম তত্ত্ব এক লাফে কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় উত্তীর্ণ হয়। হাইজেনবার্গ বিখ্যাত হয়ে আছেন অনিশ্চয়তা তত্ত্বের জন্য। কিন্তু তাঁর হাতে ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যার জন্ম না হলে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রতিষ্ঠা হতে আরও কত বছর লাগত কে জানে? বিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর জন্মদিনে বিজ্ঞানচিন্তার পক্ষ থেকে রইল শ্রদ্ধা। সঙ্গে তার ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যার বিস্তারিত কাহিনি আলোচনা করা হলো।

ইলেকট্রন এক কক্ষপথ থেকে আরেক কক্ষপথে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ইলেকট্রন কী করে, কোথায় থাকে?

এ প্রশ্নের জবাব দ্য ব্রগলির আবির্ভাবের পরেও কেউ দিতে পারেনি। ব্রগলি যখন বোরের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবছেন, তখন আরেক তরুণ বিজ্ঞানীও নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেগুলোর জবাব খুঁজে ফিরছেন। বিশেষ করে, ইলেকট্রন চার্জিত কণা হয়েও কেন ম্যাক্সয়েলের বিদ্যুৎচুম্বকীয় তত্ত্ব মানে না, সেটা নিয়ে বেশি ভাবছেন সেই জার্মান যুবক। নাম তাঁর ওয়ার্নার কার্ল হাইজেনবার্গ। জার্মান উচ্চারণে যার নাম ভার্নার হাইজেনবার্গ।

১৯২৫ সাল। হাইজেনবার্গের বয়স তখন মাত্র ২৪। সেই বয়সে তিনি মনপ্রাণ সঁপে দিয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্বে। হঠাৎ তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্ন তাঁর শিক্ষক। তিনি হাইজেনবার্গকে পরামর্শ দিলেন কিছুদিনের জন্য হাওয়া বদলের। গুরুর পরামর্শ মেনে তিনি চলে গেলেন উত্তর মহাসাগরের এক দ্বীপে। কিন্তু মন যাঁর বোরের পারমাণবিক মডেলে মজেছে, তিনি তা থেকে রেহাই পাবেন কী করে! তাঁর মাথায় ওই একই চিন্তা—ব্যাটা নচ্ছার ইলেকট্রন, কেন সে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে? কী এমন এমন গুণ ইলেকট্রনের যে, কোয়ান্টাম লাফের সময় তার চেহারা-সুরত কেমন, সেটা জানতে দেবে না?

হাইজেনবার্গ দ্বীপে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াননি। খাতা-কলম আর মগজের কারবারও করেছেন। অঙ্ক কষেছেন। ভাবনা-চিন্তা আর অঙ্কের খেলা করতে করতে হাইজেনবার্গের একসময় মনে হলো, কেয়ান্টাম লাফের সময় ইলেকট্রনের চরিত্র খুঁজতে যাওয়াটাই ভুল। আসলে প্রশ্নটির কোনো অর্থই নেই।

গোলাকার পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর শেষ কোথায়? এ প্রশ্ন অবান্তর। তেমনি অবান্তর কোয়ন্টাম এক শক্তিস্তর থেকে কোয়ন্টাম লাফ দিয়ে আরেক শক্তিস্তরে পৌঁছুনোর মধ্যবর্তী সময়ে ইলেকট্রন কোথায় থাকে, সে প্রশ্নটিও। হাইজেনবার্গের মাথায় এলো ইলেকট্রনের গতিপথ বলে কিছু নেই। ইলেকট্রন শুধু এক অবস্থান থেকে আরেক অবস্থানে দেখা যায়। এর মধ্যবর্তী কোনো স্থান এদের নেই। আসলে ইলেকট্রনের গতিপথ আঁকা বা কল্পনা করা যায় না। শুধু অবস্থানগুলো চিহ্নিত করা যায়। এ বিষয়টাকে তুলনা করা যেতে পারে দাবার কোট আর গুটিগুলোর সাথে। দাবার যেকোনো গুটিকে নিয়ম মেনে একটা নির্দিষ্ট ঘরে নেওয়া যেতে পারে। তবে এক ঘর থেকে নেওয়া হবে কোন পথে সেটার সাথে দাবা খেলার কোনো সম্পর্কই নেই। অর্থাৎ প্রতিপক্ষ আর বিচারকরা দেখবেন দাবার গুটিটা কোন ঘর থেকে কোন ঘরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নেওয়ার সময় সেটা গড়িয়ে নেওয়া হলো, নাকি কোটের ওপর দিয় ঘষটে নেওয়া হলো, নাকি হাত দিয়ে উঠিয়ে সেই ঘরে রাখা হলো—এগুলোর দিকে কেউ দৃষ্টি দেন না। এগুলোর সাথে দাবা খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই প্রতিপক্ষ, রেফারি বা দর্শক কেউ এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না। হাইজেনবার্গ ভাবলেন, ইলেকট্রনের শক্তিস্তর বদলের সময়ও একই ব্যাপার ঘটে। কোয়ান্টাম শর্ত মেনে ইলেকট্রন ঠিক ঠিক কক্ষপথে যাচ্ছে কিনা সেটাই আসলে বিজ্ঞানীদের মাথা ঘামানোর বিষয়। এক শক্তিস্তর থেকে আরেক শক্তিস্তরে পৌঁছানোর মধ্যবর্তী সময়ে ইলেকট্রন কী করল, তা জানার কোনো দরকার নেই।

ধরা যাক, ইলেকট্রন শক্তি শোষণ করে প্রথম শক্তিস্তর থেকে তৃতীয় শক্তিস্তরে যাবে। কিন্তু মাঝখানের অননুমোদিত কক্ষপথগুলোতে ইলেকট্রন থাকতে পারে না। তাই সেইসব কক্ষপথে ইলেকট্রন দেখা যাওয়ার কথা নয়। যদি দেখা যেত, তাহলে সেটা কোয়ান্টাম শর্ত লঙ্ঘন করত। শর্ত লঙ্ঘন হলে তো হুমকির মুখে পড়ত খোদ তত্ত্বটিই। সুতরাং মাঝখানের কোনো জায়গায় তার দেখা যাওয়ার কথা নয়। অবশ্য প্রথম ও তৃতীয় শক্তিস্তরের মাঝে একটা কোয়ান্টাম শর্ত পূরণ করা অনুমোদিত কক্ষপথও আছে। সেটা হলো দ্বিতীয় কক্ষপথ। সেই কক্ষপথগুতে কি একঝলক ইলেকট্রনকে দেখা যাওয়ার কথা নয়?

ইলেকট্রনের কক্ষপথগুলো এক সমতলে থাকে না। প্রথম থেকে তৃতীয় কক্ষপথে যাওয়ার সময় ইলেকট্রনের সামনে দ্বিতীয় কক্ষপথটি নাও পড়তে পারে। কিন্তু যদি পড়ে?

তাহলেও সম্ভব নয়, ওই ইলেকট্রনকে দ্বিতীয় কক্ষপথে দেখতে পাওয়া। কারণ ইলেকট্রন একটা নির্দিষ্ট শক্তি বা কম্পাঙ্কের আলো শোষণ করে তাঁর কক্ষপথ থেকে কোয়ান্টাম লাফ দেয়। সেই নির্দিষ্ট শক্তির আলো ঠিক করে দেয় ইলেকট্রনের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে। সেই কক্ষপথেই ইলেকট্রন সরাসরি পৌঁছে যাবে। এর মধ্যবর্তী কোনো জায়গা বা কোনো অনুমোদিত কক্ষপথেও সে দেখা দিতে পারবে না। তাহলে কোয়ান্টাম শক্তি শোষণের নীতি লঙ্ঘন হবে। তাই ইলেকট্রনের শুধু কোয়ান্টাম লাফের আগে আর পরের অবস্থানই শনাক্ত করা যাবে, সেই অবস্থান দুটোতে ইলেকট্রন দেখা দেবে, কিন্তু মধ্যবর্তী কোনো জায়গায় ইলেকট্রন থাকতে পারবে না।

দুই

১৯২২ সালের জুন মাস। গটিংগেন বিশ্ববিদ্যালের বোরকে আমন্ত্রণ জানান আপেক্ষিক তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ডেভিড হিলবার্ট। ১২ জুন থেকে ২২ জুন- টানা বক্তৃতা দেন বোর। বক্তৃতার বিষয় ছিল বোর মডেলের বিশদ বিবরণ। গটিংগেনের সব পদার্থবিদ, গবেষক, ছাত্র সেই বক্তৃতার মূল শ্রোতা। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন সমারফেল্ড। তাঁর দুজন ছাত্রকে নিয়ে। দুই ছাত্র হলেন ভবিষ্যতের দুই বিখ্যাত কোয়ান্টাম তত্ত্ববিদ—উলফগ্যাং পাউলি আর ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। বোরের বক্তৃতা দুজনের মনে রেখাপাত করে। কিন্তু বোরকে প্রশ্ন করতেও ছাড়েননি হাইজেনবার্গ। কিন্তু বোরের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর তখন ছিল না। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গিয়েই পরবর্তীতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জন্ম দেন হাইজেনবার্গ।

১৯২০ সালে হাইজেনবার্গ সমারফেল্ডের অধীনে পিএইচডি করতে আসেন। এবং পরমাণুর অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। হাইজেনবার্গ চেষ্টা করেছিলেন বিষম জিম্যান ইফেক্ট ব্যাখ্যা করার। সেটা করতে গিয়ে অর্ধপূর্ণ কোয়ান্টাম সংখ্যা ব্যবহার করে বসেন তিনি। অর্ধপূর্ণ কোয়ান্টাম সংখ্যা কোয়ান্টাম তত্ত্বের নীতি বিরোধী। সুতরাং সমারফেল্ড সেটা খারিজ করে দিলেন।

ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য হাইজেনবার্গকে একটা বিষয় নির্বাচন করে দিয়েছিলেন সমারফেল্ড। সেটা তরল গতিবিদ্যার সমস্যা। সেটার সমাধান হাইজেনবার্গ করেন একেবারে নিজস্ব পদ্ধতি। সেটা ১৯২৩ সালের ঘটনা। কিন্তু কম্পিউটার আবিষ্কারের আগে সেটা ঠিক কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে কম্পিউটার আবিষ্কারের পর ১৯৫২ সালে বিজ্ঞানীরা সেই ফলাফলটা যাচাই করে দেখেন—হাইজেনবার্গ শতভাগ ঠিক ছিলেন।

১৯২৩ সালে হাইজেনবার্গ গটিংগেনে চলে যান। ম্যাক্স বর্নের কাছে গবেষণা করতে। ১৯২৫ সালের এপ্রিলে তিনি গটিংগেনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তখনই তিনি হাইড্রোজেন বর্ণালীর তীব্রতা গণনা শুরু করেন। কিন্তু অচিরেই বুঝলেন, প্রচলিত গণিত দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। আসলে বোর মডেলের ত্রুটিটা তো ছিলই। আবার বোর মডেল গড়েই উঠেছে হাইড্রোজেন পরমাণুর ওপর ভিত্তি করে। হাইড্রোজেন পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করতে যাওয়া মানে অবধারিতভাবে সেখানে হাইড্রোজেন বর্ণালী চলে আসে। এজন্যই বোধহয় হাইড্রোজেন বর্ণালীর তীব্রতা গণনা করতে চেয়েছিলেন হাইজেনবার্গ।

ইলেকট্রন যখন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে কোয়ান্টাম লাফ দেয় তখনই আলোকরশ্মি বিকিরণ করে। ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে যায়, কিন্তু এক অবস্থান থেকে আরেক অবস্থানে যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে সে কী করে তার খোঁজ পাওয়া যায় না। কিন্তু লাফ দেওয়ার আগের এবং পরের অবস্থান বের করা যায় সহজেই।

ইলেকট্রনের গতিপথের তুলনামূলক চিত্র
বিজ্ঞানচিন্তা

সাধারণ একটা বস্তুর কথা বলি। ধরা যাক, বস্তুটি A বিন্দু থেকে সোজাপথে B বিন্দুতে যাবে। A থেকে B পর্যন্ত বস্তুটির জন্য একটা সরলরেখা আঁকা যায়। সরলরেখা মানে অনেকগুলো বিন্দু পর পর বসিয়ে একটা লম্বা সোজা রেখা। A থেকে B বিন্দুতে যাওয়ার সময় বস্তুটি AB সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু স্পর্শ করে যাবে। তাই প্রতিটি বিন্দুতে সরলরেখার একটা করে অবস্থান পাওয়া যাবে। ভেক্টর জ্যামিতির হিসেবে বস্তুটির দুটি অবস্থান উভয়দিক থেকে গুণ করলে সমান ফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ—AB = BA। বস্তুটি যদি সরলরেখায় না গিয়ে বক্রপথে যায়, তবুও আমরা AB = BA লিখতে পারব। পথ বাঁকা হলে বস্তুটি চলার পথে AB বক্ররেখার প্রতিটা বিন্দু স্পর্শ করে যায়। একটা নির্দিষ্ট সময়ে বস্তুটি ওই বক্ররেখার যেকোনো একটা বিন্দুতে অবস্থান করবে।

তবে এই হিসাব ইলেকট্রনের ক্ষেত্রে চলবে না। ইলেকট্রন A থেকে B-তে কোন পথে যায়, সে হিসাব কষা যায় না। কারণ ইলেকট্রনের পথটি সরলরেখা না বক্ররেখা, তা কেউ বলতে পারে না। মোটকথা ইলেকট্রনের A থেকে B-তে যাওয়ার পথে আর কোনো বিন্দুতে অবস্থান করে না। শুধু A ও B অবস্থানকেই হিসাবে আনতে হবে। অন্যকোনো অবস্থানের হিসাব আনলে চলবে না। AB = BA হবে না তখন। ইলেকট্রনের জন্য A ও B আলাদা আলাদা কোয়ান্টাম সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল। এদেরকে সাধারণ বীজগাণিতিক কিংবা জ্যামিতিক নিয়মে গুণ করা যায় না।

এমন গণিতের কথা আগে আগে কেউ শোনেনি। তাই হাইজেনবার্গের এই সমীকরণ দেখে ভড়কে গেল অনেকে। হাইজেনবার্গ নিজেও একটা উদাহরণ খুঁজছিলেন। সেই উদাহরণ যেন এই গণিতের সাহায্যে দেওয়া যায়। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, বিষম ছন্দিত স্পন্দক (সরল ছন্দিত দোলক নয়) গতির সমীকরণ তাঁর এই নতুন গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।

এরপরই পরই হাইজেনবার্গ অসুস্থ হয়ে পড়েন আর বর্নের পরামর্শে দ্বীপে যান অবকাশ যাপনে। সেখানে থাকতেই দুটি সম্যসার সমাধান পান হাইজেনবার্গ। বোরের কোয়ান্টাম তত্ত্বের সকল শর্ত যাতে তাঁর গণিতের সাহায্যে লেখা যায়, সেই পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। আর নতুন গণিতের সাহায্যে শক্তির সংরক্ষণশীলতা যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তার একটা গাণিতিক পদ্ধতিও আবিষ্কার করলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন কোয়ান্টাম তত্ত্ব এগিয়ে গেল কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পথে।

লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: কোয়ান্টাম জগৎ/হায়দার আকবর খান রনো

স্পিনজার ডট কম ও ব্রিটানিকা ডট কম