করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ কি নিতেই হবে

প্রতীকী ছবি

এককথায় উত্তর হলো—হ্যাঁ, অবশ্যই। টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার সময় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর রক্তে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল অনেক বেড়ে যায়। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়া তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এ কথা গত ডিসেম্বরেই ফাইজারের প্রধান নির্বাহী উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ না করলে সেটা মারাত্মক ভুল হবে।

গবেষকেরা দেখেছেন, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের পর রক্তে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা কয়েক মাস পর কমে যায়। অবশ্য টি-সেল দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকে, কিন্তু এদের সংখ্যা কম বলে করোনা সংক্রমণরোধে যথেষ্ট সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না। এ জন্য ফাইজার, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা প্রভৃতি ধরনের টিকার দ্বিতীয় ডোজ অবশ্যই দরকার। এর ফলে রক্তের অ্যান্টিবডি ও টি-সেল উজ্জীবিত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।


এখন প্রশ্ন উঠছে, প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের পরও যেখানে অনেকের করোনা হচ্ছে, সেখানে দ্বিতীয় ডোজ কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে? আসলে এখানে একটা বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রথমত টিকা নেওয়ার পর এক-দুই সপ্তাহের আগে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা সৃষ্টি হয় না। এই সময়কালের মধ্যে কারও সংক্রমণ ঘটলে হয়তো তিনি করোনা পজিটিভ হতে পারেন। আবার এটাও বুঝতে হবে যে কারও হৃদযন্ত্র, ফুসফুস বা কিডনির সমস্যা থাকলে, ডায়াবেটিস থাকলে বা কারও বয়স বেশি হলে হয়তো টিকা গ্রহণের পর তাঁর শরীরে অন্যদের মতো যথেষ্ট পরিমাণে সুরক্ষা তৈরি না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। তবে করোনা হলেও তাঁরা টিকার কিছু সুফল পাবেন। যেমন তাঁদের রোগের তীব্রতা সাধারণত কম হয় এবং দ্রুতই তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এমনকি তাঁদের অনেকের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ারও দরকার হয় না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় নিজ উদ্যোগে আইসোলেশনে থেকে এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ খেয়ে সুস্থ হতে পারেন। তবে সব সময় তাঁদের রক্তের অক্সিজেন-মাত্রা পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। অক্সিজেনের মাত্রা যদি ৯৫-এর নিচে নেমে যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। তাই হাতের কাছে পালস অক্সিমিটার রাখা দরকার। স্বল্প মূল্যে এই যন্ত্র পাওয়া যায়।

টিকার মজুত নিশ্চিত করা

এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ লাখ প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া শুরু করার কথা। প্রয়োজনীয় টিকার ডোজ সরকারের মজুত আছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। কারণ, এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে প্রায় ৫০ লাখ ডোজ টিকা মজুত আছে এবং আরও একটি চালান আসার কথা। তাহলে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া নিশ্চিত। পরবর্তী ধাপে আবার নতুন করে অন্যদের প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শুরু করতে হবে।
এই হিসাবটা ঠিক রাখা জরুরি। কারণ, সারা বিশ্বেই এখন টিকার চাহিদা বাড়ছে। এই তো তিন-চার দিন আগে ইইউ ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ১ কোটি ডোজ টিকা আমদানি করতে চেয়েছে। বাংলাদেশের সুবিধা হলো, ভারতের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ক্রয়ের একটি চুক্তি অনেক আগেই করে রাখা হয়েছে। সুতরাং আপাতত টিকার সংকট হবে না। তবে আরও টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা দরকার।

জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ

দেশে করোনার সংক্রমণ হার বেড়েই চলেছে। এটা আশঙ্কাজনক। গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে একবার চূড়ায় ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে কমে প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আমাদের জনসচেতনতার অভাবে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এখন তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তিনটি দায়িত্ব এখন সবার। প্রথমত, ঘরের বাইরে সবার বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা। এবং যেন সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে রাখা হয়, তা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, ১৮ বছরের বেশি সবাইকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা। এবং তৃতীয়ত সব ধরনের অতিরিক্ত জনসমাগম বন্ধ করা। তা ছাড়া কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ করে নিতে হবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সবার সচেতনতা দরকার।


* আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]