করোনা শনাক্ত করবে স্মার্ট মাস্ক

করোনাভাইরাসের প্রতীকী ছবি

করোনা শনাক্ত করার চলতি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিটি বেশ সময় সাপেক্ষ এবং জটিল। প্রথমে লাইন ধরে নাক ও গলার সোয়াব দিতে হবে। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর করোনা শনাক্ত করা যাবে। সাধারণত এক দিন বা তার বেশি সময় লাগে। প্রবাসী কর্মী বা অন্যদের করোনা পরীক্ষার সনদ নিতে হিমশিম খেতে হয়। এত সময় লাগার একটি কারণ অবশ্য বেশি প্রার্থী। কিন্তু যদি এমন কোনো প্রক্রিয়া থাকত যে ঘরে বসে নিজে পরীক্ষা করেই খুব কম সময়ের মধ্যে করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ, তা জানা যাবে, তাহলে কত ভালোই না হতো!

সম্প্রতি গবেষকেরা সে রকমই একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। ওষুধের দোকান থেকে বায়োসেন্সরযুক্ত একটি স্মার্ট মাস্ক কিনে মুখে পরে ৯০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া যাবে এবং এটা প্রচলিত পরীক্ষার সমমানের ফলাফল দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ওয়াইইস ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা মাস্কের কাপড়ে সিনথেটিক বায়োলজি রি–অ্যাকশন দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত করে কোভিড–১৯ ভাইরাসের প্যাথোজেন শনাক্ত করার পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেছেন। গবেষকেরা মানসম্পন্ন মাস্কের সঙ্গে বায়োসেন্সরগুলো এমনভাবে যুক্ত করেছেন যে নিশ্বাসের মধ্যে সার্স–কোভ২ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। একটি বোতাম টিপে করোনা শনাক্তকরণের ব্যবস্থাটি চালু করতে হয়। ৯০ মিনিটের মধ্যে ফলাফল এসে যায় এবং সেটা মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরির পরীক্ষার সঙ্গে তুলনীয়। এই আবিষ্কারের বিষয়টি নেচার বায়োটেকনোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।

কসমস ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে ২ জুলাই ২০২১ এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বায়োসেন্সর কীভাবে কাজ করে, তার বিবরণ সেখানে রয়েছে। তবে স্মার্ট মাস্কের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর বায়োসেন্সরগুলো একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে এটা কাজ করতে পারে না। কিন্তু এর দাম হবে কম। হয়তো ১–২ ডলার বা ২০০–২৫০ টাকা। এর গ্রাহক চাহিদা অনেক বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়।

যদি স্মার্ট মাস্ক বাজারে আসে, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।

করোনার টিকার মেয়াদ?
করোনাভাইরাসের বিষয়ে আমাদের জানা–বোঝার এখনো অনেক কিছু বাকি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য জানছি। আমরা প্রথমে জেনেছি অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। পরে জানলাম, চার নয়, আট সপ্তাহ পর নিলেই ভালো। এমনকি ১২ সপ্তাহের ব্যবধানেও চলে। এখন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে জানা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ৪৫ সপ্তাহের ব্যবধান থাকলে তা করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাসের বেশি সময়ের ব্যবধানে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হলে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, হয়তো প্রতিবছরই করোনার টিকা নিতে হবে। করোনার গতি–প্রকৃতির ওপর বিশেষজ্ঞরা বিশেষ নজর দিচ্ছেন। আমাদের সতর্কতা একান্ত দরকার।

গ্রামেও করোনা?
একসময় আমরা বলেছি, গ্রামে করোনা নেই। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গ্রামের মানুষও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা। করোনাভাইরাস গ্রাম–শহর বা ধনী–গরিব বোঝে না। সতর্ক না থাকলে একজন করোনা রোগী আশপাশের ১০ জনকে সহজেই আক্রান্ত করতে পারে। এ কথা মনে রেখে বাসার বাইরে সবার মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলা একান্ত প্রয়োজন। আর টিকা নেওয়া তো অবশ্যই দরকার। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সারা দেশের মানুষ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।


* আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]