করোনার অ্যান্টিবডি হলে কি পূর্ণ প্রতিরোধক্ষমতা জন্মায়?

করোনাভাইরাস

ঢাকায় ৭১ ও চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের দেহে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে। ২২ জুন ২০২১ আইসিডিডিআরবির প্রকাশিত তথ্যে এই পরিসংখ্যান জানা গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি নির্বাচিত বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।

আমরা ধরে নিতে পারি যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষ, ঢাকায় তো দুই–তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আসল তাৎপর্য কী? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর অর্থ হলো, এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ফলে হয়তো ইতিমধ্যেই আরও অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং হবেন। এটা আশঙ্কার দিক।

অনেকে হয়তো বলবেন, অ্যান্টিবডি যখন হয়েছে, তার মানে বড় সংখ্যক মানুষের একবার করোনা হয়ে গেছে। হয়তো উপসর্গ তেমন প্রকাশ পায়নি বা মৃদু প্রকাশ ছিল। হয়তো সর্দি–কাশি ও সামান্য জ্বর উপেক্ষা করেই অনেকে দৈনন্দিন কাজ করে গেছেন। সংক্রমণ তীব্র না হওয়ায় হাসপাতালে যাননি। তিনি যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেটা বুঝতেই পারেননি। এটা মন্দের ভালো!

এটা সত্য হলে কেউ আবার ভাবতে পারেন, তাহলে তো ধরে নেওয়া যায় ঢাকায় অন্তত ‘হার্ড ইমিউনিটি’ হতে যাচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলেন, না, ৭০–৮০ ভাগ মানুষকে টিকা না দেওয়া হলে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ হবে না। কারণ, করোনার সংক্রমণ হয়ে থাকলেও সৃষ্ট অ্যান্টিবডি করোনার নতুন নতুন ধরন বা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায় না। অথবা করোনার সংক্রমণ হয়তো তীব্র ছিল না বলে অ্যান্টিবডির রোগ প্রতিরোধক্ষমতার গভীরতা কম। এসব কারণে একই ব্যক্তির একাধিকবার করোনা হতে পারে, সে উদাহরণ তো আমাদের সামনে আছে। ফলে দ্রুত সবার টিকা নেওয়া ও বাসার বাইরে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

আমাদের দেশে টিকার ঘাটতি আছে। হয়তো সবাইকে টিকা দিতে আরও অনেক সময় লাগবে। এই সময়ে মাস্ক পরার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। আর সেই সঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা ৮০–৯০ ভাগ কমানো সম্ভব বলে স্বাস্থ্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

করোনা ও কোভিড ধরনের অন্য সংক্রমণ

এটা ঠিক যে বস্তিবাসী, নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষের মধ্যে করোনার তীব্র সংক্রমণ সাধারণত কম। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে তাঁদের করোনা হলেও লক্ষণ প্রায় থাকেই না বা থাকলেও তা মৃদু। সামান্য ঠান্ডাজ্বরে তাঁরা স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে প্রচলিত ধারায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ট্যাবলেট কিনে খান ও তাঁদের কাজ অব্যাহত রাখেন। নাহলে আয়–উপার্জন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আইসিডিডিআরবির সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের মধ্যে কম মাত্রার সংক্রমণ ঘটে। উদয়াস্ত পরিশ্রমে তাঁদের করোনায় সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

আর একটি বিষয়ও বিবেচনায় আনা যায়। সম্প্রতি মেডিকেল নিউজ টুডে সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত ‘কুড ইন্টারঅ্যাকশন উইথ আদার ভাইরাসেস স্টপ সারস–কোভ–টু রেপ্লিকেশন?’ নিবন্ধে বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে জানিয়েছে, শ্বাসতন্ত্রের কোনো ভাইরাস ইনফেকশন আগে হয়ে থাকলে কোভিডের সংক্রমণ প্রভাবিত হয়। এ ধরনের একটি কথা কয়েক মাস আগে প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল বলেছিলেন। তাঁর কথাটি ছিল, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ প্রায়ই সর্দি–কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হন এবং ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডারের পরামর্শে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে সুস্থ হয়ে যান। পরে তাঁদের অনেকের করোনা ঝুঁকি কমে যায়। তিনি বলেন, একই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সাধারণত আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

কঠোর লকডাউন

দেশে ১ জুলাই ২০২১ থেকে আবার ৭ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন চলবে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক কালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু সবাইকে এই লকডাউন মেনে চলতে হবে। এটা সবার স্বার্থে দরকার। তবে লকডাউনের সময় কাউকে যেন না খেয়ে থাকতে না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সরকার এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।

* আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]