ওরা তিন বাহু

অলংকরণ: রাকিব
অলংকরণ: রাকিব

আঁকল রামিন পিচঢালা পথ, ইটের দালানবাড়ি,

ব্রেক কষে সেই বাড়ির গেটে থামিয়ে দিল গাড়ি।

গাড়ি থেকে যাত্রী কজন করছে ওঠানামা,

গায়ে তাঁদের সবুজ হলুদ হরেক রকম জামা।

জামায় আবার পকেট আছে, পকেট তবে ফাঁকা—

ছুটির দিনে সকাল থেকেই চলছে ছবি আঁকা।

হচ্ছে না আজ পড়াশোনা, অঙ্ক কষাকষি,

অবসরে আঁকলে ছবি হয় না কোনো দোষই।

সাত দিনে হয় সপ্তাহ, তার ছয় দিনই তো পড়ি,

বইগুলো আজ মেঝের পরে খাক না গড়াগড়ি।

দখিন হাওয়া বেড়াচ্ছে আজ এঘর ওঘর ঘুরে,

বইয়ের পাতা জানালা দিয়ে এই বুঝি যায় উড়ে।

পাটিগণিত বীজগণিতে হিজিবিজি লেখা,

খোলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে যাচ্ছে ওদের দেখা।

রশ্মি রেখা তল সমকোণ—দিচ্ছে তারাও উঁকি,

বাতাস পেয়ে বৃত্ত ত্রিভুজ করছে ঠোকাঠুকি।

রামিন খুবই ব্যস্ত আছে, তাকাচ্ছে না তবে,

যাত্রীগুলোর পকেট ফাঁকা—কলম দিতে হবে।

ভদ্রলোকের বুকপকেটে কলমই তো থাকে,

একটি ত্রিভুজ দিচ্ছে উঁকি বইয়ের পাতার ফাঁকে।

দাঁড়া! দাঁড়া! বলল রামিন ত্রিভুজটাকে দেখে,

বারে বারে উঁকি দিলে তোকেও দেব এঁকে।

পারলে আঁকো—অবাক ব্যাপার—ত্রিভুজ বলে ওঠে,

উল্টাপাল্টা চ্যালেঞ্জ পেয়ে রামিন গেল চটে—

জানিস আমি আঁকতে পারি টিরেক্স থেরোপড,

স্যালাম্যান্ডার অ্যানাকোন্ডা ড্রাগন তিমি কড?

মিঠুর মতো মিঠুকে আঁকি, মীনার মতো মীনা,

তুই কিনা বলিস তোকে আঁকতে পারি কি না!

জানিস ওরা জ্যান্ত প্রাণী—মেজাজ ভারি কড়া?

আঁকতে গেলেই শুরু করে কেবল নড়াচড়া।

উড়ে বেড়ায় ফ্লায়িং সসার—তা-ও এঁকেছি কত।

আঁকল রামিন একটি ত্রিভুজ ওই ত্রিভুজের মতো।

নিজের ছবি দেখে ত্রিভুজ খুশি হলো সে কী!

বলল তবে মুচকি হেসে, আবার আঁকো দেখি।

এবার তবে শর্ত আছে, শর্ত আগে শোনো—

তিন বাহু তার থাকবে ঠিকই, তিন দিকে তিন কোণও,

দুটি বাহুর সমষ্টি তার তৃতীয় বাহু থেকে

ক্ষুদ্রতর—এমন একটি ত্রিভুজ দেখাও এঁকে।

বলল রামিন, ‘আঁকছি আমি—এই যে দিলাম দাগ।

এটা তোর ওই বড় বাহু—লাগ ভেলকি লাগ!

আর দুই বাহুর দৈর্ঘ্য দিলাম এই বাহুটার কম।

আঁকতে গিয়ে সে দুই বাহু যায় বুঝি ওর দম।

মিলছে না কোণ কোনোমতেই, যাচ্ছে ছিঁড়ে খাতা,

বাহুর কাছে বাহু এসে ঠেকাচ্ছে না মাথা।

মনে হচ্ছে বাহুগুলো মিঠুর মতোই জ্যাতা,

গায়ের জোরে আঁকতে গেলে পাচ্ছে গায়ে ব্যথা।

হাসল ত্রিভুজ, বলল, সকল চেষ্টা যাবে বৃথা,

ত্রিভুজ কত নিয়ম মানে—তুমি জানো কি তা?

জানো আমার তিন কোণে যে তিন সমকোণ হয়?

কোনো দিনও কম হবে না, বেশিও হবার নয়।

একটি বাহু বাড়লে বাড়ে আরেক বাহু তাতে,

তিনটা কোণই বাড়ে কমে বিশেষ অনুপাতে।

সেদিন থেকেই করছে রামিন ত্রিভুজ আঁকাআঁকি,

ত্রিভুজকে আর নীরস ভেবে দিচ্ছে না সে ফাঁকি।

বাড়ায় কমায় বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য একে একে,

কোণগুলো কোন অনুপাতে বাড়ে কমে দেখে।

ইতিমধ্যে বের করছে ট্যান ও কসের মান,

তিন বাহু তিন কোণের মাঝে পেয়েছে সে প্রাণ।

* লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার মে ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন