পেন্সিল ও দাগ

‘নদীনালা পথঘাট বাড়ি,

গাছপালা গরু ঘোড়া গাড়ি।

ডালে ডালে ঘুঘু টিয়া, বক

ক্লাশরুমে ব্ল্যাকবোর্ড চক

মাঠে মাঠে গম আর যব—’

পেন্সিল বলে, ‘এই সব

চাইলেই দিতে পারি এঁকে।

মাথা ঘুরে যাবে আঁকা দেখে।’

অমনি সে একপাক ঘুরে

এঁকে দিল চাঁদ পাতা জুড়ে।

এঁকেবেঁকে ঘুরে অবিরত

আঁকল সে নদীনালা—পথও।

ঘষে ঘষে আরও আঁকে রাত

কাত হয়ে আঁকে ফুটপাথ

চিৎ হয়ে আঁকে সাদা মেঘ

বাতাস আর বাতাসের বেগ

লাফ দিয়ে আঁকে কোলাব্যাঙ—

পেট মোটা, এক হালি ঠ্যাঙ

ম্যানহোল আঁকে মাথা কুটে

ইঁদুর আঁকে পাছে পাছে ছুটে।

ইতিউতি ছুটোছুটি করে

ছবি এঁকে খাতা ফ্যালে ভরে।

এ সময়ে দাগ এল এক

কী রকম লাগে তোরা দ্যাখ্‌!

পেন্সিল বলে, ‘এই দাগ!

খাতা ছেড়ে এক্ষুনি ভাগ!

দেখেছিস্‌ কী দারুণ ছবি?

তুই এতে খাপছাড়া হবি।’

দাগ বলে, ‘আমি নই দাগ

দেখিয়ো না অত বেশি রাগ।

আমি থাকি অসীমের দেহে।’

পেন্সিল বলে, ‘তুই কে হে!’

‘রেখা চেন? কাকে বলে জান?

রুলার এনে সোজা দাগ টানো।

এই দাগ দুই পাশে যদি

বয়ে যায় অসীম অবধি

সে-ই হবে একখানি রেখা—

রেখা আঁকা হয়ে গেল শেখা।

বইয়ে তুমি জ্যামিতি যে পড়,

সেখানে সে সবচেয়ে বড়।

তার দুটো বিন্দুকে নাও

মাঝখানে যতটুকু পাও

ওটা আমি—তার ছোট বেবি

নাম আমার রেখাংশ ‘AB’.

আমার আছে প্রান্ত যে দুটি—

পরিচয় এই মোটামুটি।

আমি অতি দরকারি জানি—

সকলেই করে টানাটানি।

কাকে রেখে সেবা দিই কাকে?—

বর্গরা বাহু হতে ডাকে

ত্রিভূজ আর আয়তরা আছে

রম্বস ঘোরে পাছে পাছে

বহুভূজ পেতে চায় বাগে—

তাদের তো বাহু হওয়া লাগে।

ব্যাস, কোণ, পরিসীমা, জ্যা-কে

সেবা দিতে হয় একে একে।

মাঝে মাঝে হওয়া লাগে গোলও—

কথাটা কি বিশ্বাস হলো?

বৃত্তের পরিধি যে আঁক

সেটা আমি—শুধু জেনে রাখো।

বিড়াল আঁক, কুকুর আঁক—ঘেউ

গাছপালা নদীনালা ঢেউ—

রেখাংশে হয় সবই আঁকা

তফাৎ হলো সোজা আর বাঁকা।

যা কিছুই আঁক খাতা ভরে

ছুটে ছুটে হুটোপুটি করে

এই কথা ভুলে যেয়ো নাকো

সবখানে আমাকেই আঁকো।’