দুই ভাইয়ের বয়স কত?

গণিতে সংখ্যার খেলা দারুণ চলে। যেমন, আমি চাইলে আপনার মনের কিছু গোপন তথ্য বের করে আনতে পারি। ধরা যাক, আপনাকে বললাম ১ থেকে ৯ এর মধ্যে যেকোনো একটি সংখ্যা মনে মনে ধরুন। এটা আপনার, মনে করুন, ফেসবুকের পাসওয়ার্ডের মতো। আমাকে তো বলবেনই না, এমনকি আপনার ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধুকেও না। কিন্তু তারপরও তো পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়ে যায়, তাই না? কিছু প্রশ্ন করে করে এ ধরনের গোপন তথ্য ফাঁস করা যায়। যাক, আসুন এবার আপনার কথায়। আপনি যে সংখ্যাটি ধরেছেন, তাকে ২ দিয়ে গুণ করুন। এরপর গুণ করুন ৫ দিয়ে।

বিয়োগ করুন ৫। এবার শেষ ধাপ, যোগ করুন ৭। কী, সব ঠিকঠাক? তাহলে আমি বলছি, যে সংখ্যাটি আপনি এখন পেয়েছেন, তার প্রথম অঙ্কটি আপনি মনে মনে ধরেছিলেন, আর দ্বিতীয় অংশটি স্রেফ ২। কি, ঠিক কি না? আপনার চোখ কপালে উঠে গেছে। অবাক হয়ে বললেন, ‘অ্যাঁ, তুই জানলি কীভাবে যে আমি প্রথমে ৮ ধরেছিলাম? ব্যস, হয়ে গেল। আপনার পাসওয়ার্ড আমি জেনে ফেললাম। এমনভাবে জানলাম যে আপনি বুঝতেও পারলেন না। এখানে সংখ্যার কেরামতি। দেখুন, কীভাবে এটা হয়।

আপনি ধরেছেন ৮। একে প্রথমে ২ ও এরপর ৫ দিয়ে গুণ করুন। হলো (৮x২x৫) = ৮০। এবার ৫ বিয়োগ করুন ও ৭ যোগ করুন। (৮০ – ৫ + ৭) = ৮২। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু আপনি হতবাক হয়ে যে–ই না স্বীকার করলেন যে আপনি ৮ ধরেছিলেন, তখনই আপনার মনের গোপন তথ্যটা ফাঁস হয়ে গেল। আপনার অজান্তেই। আসলে যেভাবে যোগ-বিয়োগ করা হয়েছে, তাতে সব সময়ই আপনি যে সংখ্যা ধরেছেন, তারপর ২ যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত ফল আসবে। কিন্তু আপনি যদি স্বীকার না করেন, তাহলে অবশ্য গোপন তথ্যটা সহজে ফাঁস হবে না।

মনে করি, আপনি প্রথমে ধরেছেন ‘ক’। ২ ও ৫ দিয়ে গুণ করে হয়েছে (১০ক)। এবার ৫ বিয়োগ ও ৭ যোগ করলে হবে (১০ক + ২)। ব্যস, হয়ে গেল। ক–এর মান ১ থেকে ৯, যেটাই হোক না কেন, ফল হবে সেই একই। ২ ধরলে ২২, ৩ ধরলে ৩২...৭ ধরলে ৭২। সব ফাঁস। আপনি হতবাক!

গণিতের একটা মজার হিসাব দেখুন। সাধারণত আমরা এ ধরনের সংখ্যার খেলা দেখে খুব অবাক হই। তবে এর পেছনে তেমন কোনো রহস্য নেই। গণিতের নিয়মকানুনের মধ্যেই সব ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন ধরুন, আপনাকে বললাম তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা লিখুন। শুধু একটাই শর্ত, অঙ্ক তিনটি পৃথক হতে হবে, একই অঙ্ক দুবার লেখা যাবে না। এবার সংখ্যাটা উল্টিয়ে লিখুন। অর্থাৎ এককের ঘরের বা একদম শেষের অঙ্কটি নিয়ে আসুন প্রথম ঘরে বা শতকের ঘরে। মাঝখানের অঙ্কটি একই জায়গায় থেকে যাবে।

দুটি সংখ্যার পার্থক্য বের করুন, মানে বড় সংখ্যাটি থেকে ছোটটি বিয়োগ করুন। নতুন একটি সংখ্যা পেলেন। এবার আসল খেলা। এই সর্বশেষ সংখ্যার অঙ্কগুলোর যোগফল বের করুন। সব সময়ই যোগফল হবে ১৮। কী, বিশ্বাস হয় না? বেশ, লিখলাম তিন অঙ্কের একটি সংখ্যা ৫৩৮। উল্টিয়ে লিখলাম ৮৩৫। পার্থক্য = (৮৩৫ – ৫৩৮) = ২৯৭। এর অঙ্কগুলোর যোগফল = (২ + ৯ + ৭) = ১৮।

এর ব্যাখ্যা খুব সহজ। লক্ষ করলে দেখবেন, যেকোনো তিন অঙ্কের সংখ্যাকে উল্টিয়ে লিখে বড় সংখ্যাটি থেকে ছোট সংখ্যাটি বিয়োগ করলে সব সময় মাঝখানের অঙ্কটি ৯ এবং দু পাশের অঙ্ক দুটি যোগ করলে পাব ৯। সুতরাং বিয়োগফলের অঙ্কগুলো যোগ করলে সব সময়ই হবে ১৮।

অন্যভাবে বলা যায়, যদি সংখ্যাটি ‘কখগ’ হয়, যার মান (১০০ক + ১০খ + গ), তাহলে এর বিপরীত সংখ্যাটি হবে ‘গখক’, যার মান (১০০গ + ১০খ + ক)। বিয়োগফল হবে ৯৯ (ক – গ)। এখন (ক – গ) এর মান যদি ১ হয়, তাহলে বিয়োগফল = ৯৯ = ০৯৯। এর অঙ্ক তিনটির যোগফল = ১৮। যদি (ক – গ) = ২ হয়, তাহলে বিয়োগফল = ১৯৮। এর অঙ্ক তিনটির যোগফল = ১৮। এভাবে সব ক্ষেত্রেই যোগফল হবে ১৮।

এ সপ্তাহের ধাঁধা

সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বয়স বলতে চাইছি। দু বছর আগে আমার বয়স ছিল আমার ভাইয়ের বয়সের চার গুণ। চার বছর পর আমার বয়স হবে আমার ভাইয়ের বয়সের দ্বিগুণ। এখন বলুন তো আমার ও ভাইয়ের বয়স কত!

ধাঁধার উত্তর আমার ই–মেইলে পাঠাতে পারেন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার।
গত রোববার ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত ধাঁধার উত্তর

ধাঁধাটি ছিল এ রকম: আমার কাছে যতসংখ্যক চকলেট, সেই সংখ্যার ঠিক বিপরীতসংখ্যক চকলেট রয়েছে আমার বন্ধুর কাছে। অর্থাৎ আমার চকলেটের সংখ্যা যদি হয় ‘কখ’ তাহলে বন্ধুর চকলেটের সংখ্যা ‘খক’। এই সংখ্যা দুটির পার্থক্য যে সংখ্যাটি, তার এককের ঘরে রয়েছে ৩। বলুন তো আমার কাছে ন্যূনতম কয়টি চকলেট রয়েছে?

উত্তর:
আমার চকলেটের সংখ্যা ১৮। বন্ধুর চকলেটের সংখ্যা ৮১। এ দুটি সংখ্যার পার্থক্য (৮১ – ১৮) = ৬৩, যার এককের ঘরের অঙ্কটি ৩।

কীভাবে উত্তর বের করলাম

প্রথমে চিন্তা করব, যেহেতু চকলেটের সংখ্যা এমন হতে হবে যেন তার বিপরীত সংখ্যার পার্থক্য যে সংখ্যাটি, তার এককের ঘরে থাকতে হবে ৩, তাই দুজনের চকলেটের সংখ্যার পার্থক্য ১৩, ২৩, ৩৩, ৪৩, ৫৩, ৬৩, ৭৩, ৮৩ অথবা ৯৩। এখন আমার চকলেটের সংখ্যা ১০, ১১, ১২ . . . ১৯ পর্যন্ত একে একে ধরে হিসাব করে দেখতে হবে এই শর্ত পূরণ করে কি না। যদি আমার চকলেটের সংখ্যা ১৮ হয়, তাহলে হিসাব মিলে যায়। কারণ, সে ক্ষেত্রে বন্ধুর চকলেটের সংখ্যা ৮১ এবং এ দুটি সংখ্যার পার্থক্য = (৮১–১৮) = ৬৩, যার এককের ঘরের অঙ্কটি ৩। এখানে লক্ষণীয়, আমার চকলেটের সংখ্যা যদি ২৯ হয়, তাহলেও শর্ত মিলে যায়, কারণ (৯২ – ২৯) = ৬৩। কিন্তু শর্তে বলা হয়েছে আমার চকলেটের সংখ্যা ন্যূনতম হতে হবে। তাই সঠিক উত্তর হলো, আমার চকলেট ১৮টি ও বন্ধুর ৮১টি। দুটি সংখ্যার পার্থক্য = (৮১ – ১৮) = ৬৩।

*আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন ‘বিজ্ঞানচিন্তা’র সম্পাদক
[email protected]