দ্য ইম্পোস্টার ইজ অ্যামোং আস

অনলাইনে এখন দারুণ জনপ্রিয় অ্যামোং আসসংগৃহীত

ধরুন, নভোযানে চড়ে আপনি দলবলসহ উড়ে চলেছেন মহাকাশে। দলের সবাইকে মহাকাশযানের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাজ দেওয়া হয়েছে। পুরো মহাকাশযান ঘুরে ঘুরে যখন আপনি কাজ করে যাচ্ছেন। হঠাৎই আপনার চোখে পড়ল, দলের একজন পড়ে আছে মেঝেয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই খবর আপনি অন্যদের জানাবার কথা ভাবছিলেন। তখন দলেরই একজন এসে মেরে দিল আপনাকেও। আপনার দল এখন ভীষণ বিপদে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাদের এখন খুঁজে বের করতে হবে, তাদের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা সেই ছদ্মবেশি ঘাতককে।

শুনে খুব ভয়াবহ গল্প কিংবা মুভির প্লট মনে হতে পারে। আজকাল কিন্তু অনেকেই নিজ ইচ্ছায় চলে যাচ্ছে মহাকাশে আর ছদ্মবেশি প্রতারককে শণাক্ত করে নিজের দলকে বাঁচাচ্ছে পরাজয়ের হাত থেকে। কেউ কেউ তো আবার নিজেই ঘাতক হয়ে দলের সকলকে মেরে জয়ী হচ্ছে। ভড়কে যাবেন না। সত্যিই এমনটা ঘটছে না। এ সময়ের সাড়া জাগানো মাল্টিপ্লেয়ার গেম অ্যামোং আস এমনটাই ঘটছে নিয়মিত। ইনারস্লথের তৈরি অ্যামোং আস হল একটি মার্কিন রহস্য ও কল্পবিজ্ঞান ধাঁচের গেম। ২০১৮ সালে মুক্তি পেলেও চলতি বছরের মাঝামাঝিতে গেমটি রাতারাতি জনপ্রিয়তা পায়। ছেলে থেকে বুড়ো সকল বয়সী বন্ধুমহলেই ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

একটি স্পেসশিপ বা মহাকাশযানে ৪-১০ জন সদস্য এলে শুরু হয় গেমটি। এর মধ্যে ১-৩ জন থাকে ইম্পোস্টার বা ছদ্মবেশি ঘাতক এবং বাকিরা সাধারণ ক্রুমেট । ইম্পোস্টারদের প্রধান লক্ষ্য হল কারো কাছে ধরা না পড়ে ক্রিউমেইটদের হত্যা করা এবং মহাকাশযানকে নানাভাবে ক্ষতি করা। অন্যদিকে ক্রুমেটদের দায়িত্ব হল ইম্পোস্টারের হাতে মারা পড়ার আগেই কিছু নির্দিষ্ট টাস্ক সম্পন্ন করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইম্পোস্টারকে শনাক্ত করে নিজেদের বাঁচানো। মহাকাশযানটির রয়েছে তিনটি ম্যাপ- দ্য স্কেল্ড, মিরা হেডকোয়ার্টার এবং পোলাস। রিঅ্যাক্টর, ইঞ্জিন, সিকিউরিটি, অফিস, ইলেকট্রিক্যাল, স্টোরেজসহ কিছু মৌলিক কক্ষ। সবগুলো ম্যাপে থাকলেও প্রতিটি ম্যাপেরই রয়েছে ভিন্ন গঠন এবং কিছু নতুন কক্ষ। সঙ্গে আছে নতুন টাস্কও। খেলা শুরুর আগে একজন হোস্ট সার্ভার তৈরি করে ম্যাপ। তারপর ইম্পোস্টার, ক্রুমেট ও টাস্কের সংখ্যা এবং ধরন, গেমের গতি, সময়সীমা ইত্যাদি ঠিক করে দেয়। এরপর ৪-১০ জন মানুষ নিয়ে শুরু হয় দলের মহাকাশ যাত্রা।

যদি আপনি ক্রুমেট হন

প্রতিটি ক্রুমেটই বিভিন্ন কক্ষে ঘুরে ঘুরে ইঞ্জিনে জ্বালানী দেওয়া, অ্যাস্টেরয়েড শ্যুটসহ তাদের যেসব টাস্কের জন্য নিযুক্ত করা হয় সেগুলো সম্পন্ন করে এবং স্পেসশিপের রক্ষণাবেক্ষণ করে। এসময় যদি কোনো ক্রুমেট কারও লাশ পড়ে থাকতে দেখে তবে সে তা রিপোর্ট করতে পারবে এবং ইম্পোস্টার হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলে বা ইম্পোস্টারকে হাতেনাতে ধরতে পারলে ইমার্জেন্সি মিটিং ডাকতে পারবে। মিটিং বা রিপোর্ট করা হলে ক্রুমেটরা চ্যাটবক্সে সবাই একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। যদি কাউকে ইম্পোস্টার হিসেবে সন্দেহ হয় তবে তাকে ভোট দেবে। ইম্পোস্টাররা সকলকে মেরে ফেলার আগে যদি ক্রুমেটরা একত্রিত হয়ে সব টাস্ক সম্পন্ন করতে পারে বা ইম্পোস্টারকে শনাক্ত করতে পারে তবে তারা জিতে যাবে।

যদি আপনি ইম্পোস্টার হন

অন্যদিকে ক্রুউমেটরা বডি রিপোর্ট করলে কিংবা ইমার্জেন্সি মিটিং ডাকলে ইম্পোস্টারদের বিশ্বাস করাতে হবে যে তারা খুন করেনি। অর্থ্যাৎ গেমটিতে যেহেতু সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ব্যক্তি বাদ হয়ে যায়, সেহেতু নিজের যুক্তিবিদ্যা ও বিতার্কিক গুণ দিয়ে সকলের বিশ্বস্ত হয়ে এবং অন্যদের বিপথে চালিত করে নিজেকে বাঁচাতে হবে। ইম্পোস্টারদের কিছু ফেক টাস্ক দেওয়া হয়, যাতে তারা সহজেই ক্রিমেটদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সুযোগ বুঝে তাদের ঘায়েল করতে পারে। ক্রুমেটদের মারা ছাড়াও ইম্পোস্টাররা রিয়েক্টর মেল্টডাউন, সিকিউরিটি, কমিউনিকেশন সিস্টেম বা অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে মহাকাশযানের করতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অন্য ক্রুমেটরা যদি এসব সমস্যার সমাধান না করতে পারে, তবে ইম্পোস্টাররা জিতে যায়।

মরে গেলে ইম্পোস্টার এবং ক্রুমেটদের কার্যক্ষমতা শেষ হয়ে যায় না। মরার পর তারা ভুত হওয়ার সুযোগ পাবে। ভূত হওয়ার ক্রুমেটরা নিজেদের টাস্ক সম্পন্ন করে এবং ইম্পোস্টাররা সাবোটাজ করে নিজের দলকে জেতাতে সাহায্য করতে পারে।

এখন কথা হলো, এই গেমে ক্রুমেটের ভেতরে ইম্পোস্টার কী করে এল? এছাড়াও গেমে সকলে সেফটি হ্যাজার্ড স্যুট পরে থাকে। সেটাই বা কেন? এসব কেন বা কী এর কোনো সঠিক উত্তর কারো জানা না যায় না। তবে একটা জনপ্রিয় ধারণা হল, স্পেসশিপের মেডিকেল ল্যাব থেকে সংক্রমিত হওয়া একটি রোগ দ্বারাই আক্রান্ত হচ্ছে ক্রুমেটরা। যারা আক্রান্ত হয় তারা ইম্পোস্টার হয়ে অন্যদের ঘায়েল করে এবং অন্যরা রোগ থেকে বাঁচার জন্য সেফটি স্যুট পরে চলাফেরা করে।

সবটা শুনে খুব জটিল মনে হলেও বিশ্বসেরা গেমগুলোর মত কিন্তু এর কোনো অসাধারণ গেইম ডিজাইন নেই। নেই কোনো রিয়েলিস্টিক গ্রাফিক বা হাই রেজ্যুলেশনের দৃশ্যায়ন। দেখে তো অনেকে ভাবতে পারে, এ বুঝি কোনো আনাড়ি ডেভলপারের তৈরি এক সাধারণ একটা গেম। কিন্তু সাধারণ গেমপ্লে নিয়েও অ্যামোং আস এখন বিশ্বসেরা। গেমটি অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস-এর প্লেস্টোরে ফ্রিতে পাওয়া যায়। কিন্তু সকম্পিউটারে খেলতে হলে সেটা পয়সা দিয়ে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

সম্প্রতি গেমটার একটা দুর্বলতাও দেখা দিয়েছে। হুট করে গেমটির ব্যবহারকারী বেড়ে গেছে বহুগুণে, তাই অনেকের সার্ভারে সংযুক্ত হতে সমস্যা হচ্ছে। ডেভেলপররা বর্তমানে গেমটির প্রযুক্তিগত সমস্যা ঠিক করে সকলের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর গেমাররাও অপেক্ষা করছে এর নতুন সংস্করণের জন্য। যতই হোক, একই গেমে কল্পকাহিনী, রহস্য, গোয়েন্দাগিরি, পাজল আর অদ্ভুত টাস্কের স্বাদ কী আর সবসময় পাওয়া যায়?

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, উইকিপিডিয়া