নক্ষত্রের হাঁড়ির খবর

স্যার আইজ্যাক নিউটন সূর্যের সাদা আলোকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে চালিয়ে দেখেছিলেন, সাদা আলো ভেঙে সাতটি রঙের বর্ণালি তৈরি করে। রংধনুর মতো সাত রঙের বর্ণালি। নিউটনের প্রিজম পরীক্ষাটিই আরেকবার করেছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হাইড ওয়ালস্টোন। তবে আরেকটু ভালোভাবে। তিনি লক্ষ করেন, সাত রঙের বর্ণালির মধ্যে কিছু কালো রেখা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টাকে পাত্তা দেননি ওয়ালস্টোন। ভেবেছিলেন প্রিজমের হয়তো সমস্যা আছে। অথবা হয়তো ত্রুটি আছে তাঁর পরীক্ষাপদ্ধতিতেই। ঘটনাটা ১৮০২ সালের। এর কিছুকাল পরে জার্মান পদার্থবিদ জোসেফ ভন ফ্রনহোফার দেখেন একই দৃশ্য। তিনি বিষয়টিকে হালকাভাবে নেননি; বরং বর্ণালির ভেতরে এই অনাকাঙ্ক্ষিত কালো রেখাগুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করেন।

ফ্রনহোফার নিশ্চিত হলেন এই কালো রেখা সূর্যালোকের বর্ণালিরই অংশ। তিনি সৌর বর্ণালিতে মোট ৫৭৪টি কালো রেখা খুঁজে পেয়েছিলেন। পরে তাঁর নামে সৌর বর্ণালির এই রেখাগুলোর নাম হয়ে যায় ফ্রনহোফার বর্ণালি। ফ্রনহোফার শুধু কালো রেখাগুলো দেখেই দায়িত্ব শেষ করেননি। রেখাগুলোর অবস্থান ঠিক কোন কোন জায়গায়, সেগুলোও আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। সৌর বর্ণালিতে হলুদের এলাকায় দুটো স্পষ্ট কালো রেখা দেখা যায়। এই দুটো রেখার নাম দেন ডার্ক লাইন বা ডি-লাইন। এই ডি-লাইনের ব্যাখ্যা চান তিনি। শুধু সৌর বর্ণালিতে তাঁর মন ভরল না। স্পিরিট ল্যাম্পের সাদা আলোর বর্ণালিবীক্ষণ করে দেখলেন। দেখলেন ল্যাম্পের আলোও বর্ণালি তৈরি করে। আরও দেখলেন, সৌর বর্ণালিতে ডি-লাইন যেখানে থাকে, ল্যাম্পের আলোর বর্ণালিতে ডি-লাইনের অবস্থান ঠিক সেখানেই। এরপর তিনি বর্ণালি বিশ্লেষণ করলেন বুধ গ্রহ আর সিরিয়াস (লুব্ধক) নক্ষত্রমণ্ডলী থেকে আসা আলোকরশ্মিরও। ফল একই—প্রতিটির ডি-লাইনের অবস্থান একই জায়গায়।

ফ্রনহোফার ডি-লাইনের কারণ বের করতে পারতেন কি না, কে জানে। ১৮২৬ সালে মৃত্যু এসে থামিয়ে দেয় তাঁর সব গবেষণা। ফ্রনহোফারের পর বর্ণালি বিজ্ঞানে প্রাণ সৃষ্টি হয়। এর মূলে দুই জার্মান গবেষক গুস্তাভ কার্শফ আর রবার্ট উইলহেম বুনসেন। দুজনই হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। বুনসেনও রসায়নে পরিচিত নাম। তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছে বুনসেন শিখা আর বুনসেন ল্যাম্পের।

দুই বিজ্ঞানী বর্ণালি নিয়ে গবেষণা করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। তাঁরা একটা কাপড়কে ভিজিয়ে নেন খাবার লবণ মেশানো পানিতে। তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। বর্ণালি বিশ্লেষণ করেন সেই আগুন থেকে পাওয়া আলোর। দেখেন, সেই বর্ণালির সঙ্গে সৌর বর্ণালির মিল নেই বললেই চলে। বর্ণালি থেকে উধাও হয়ে গেছে ছয়টা রং। একমাত্র হলুদ রং টিকে আছে। ডি-লাইনের কাছাকাছি অবস্থান সেটার। এ থেকেই তাঁরা ধরে নিলেন হলুদ রেখাটি জন্ম লবণের (NaCl) কারণে। লবণের তো দুটি উপাদান। সোডিয়াম আর ক্লোরাইড। কোনটা থেকে এই হলুদ বর্ণটা আসছে? হয় সোডিয়াম অথবা ক্লোরিন থেকে।

কোন পদার্থ থেকে আসছে—সেটা সহজেই বের করে ফেলা যায়। দুই বিজ্ঞানী সেটাই করলেন। তাঁরা আরও দুবার পরীক্ষাটি করলেন। একবার সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) মেশানো কাপড় পুড়িয়ে। আরেকবার কাপড় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে (HCl) ভিজিয়ে, সেই কাপড় পুড়িয়ে তার আগুন থেকে পরীক্ষা করা হলো। বিজ্ঞানীরা দেখলেন হাইড্রোক্লোরিকের পরীক্ষায় হলুদ রঙের বর্ণালি আর পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের পরীক্ষায় হলুদ রং আবার পাওয়া গেল। আর তাতে পাওয়া গেল ডি-লাইন। কার্শফ আর বুনসেন নিশ্চিত হলেন বর্ণালির হলুদ রঙের অংশে ডি-লাইনের উত্স সোডিয়াম মৌল। তখনো পরমাণুর আকার-আয়তন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু রসায়নে পরমাণু নামের মৌলিক কণার অস্তিত্ব অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই দুই বিজ্ঞানী নিশ্চিত হলেন হলুদ বর্ণালি তৈরি করে সোডিয়াম পরমাণু।

এই একটা পরীক্ষা খুলে দিল বিজ্ঞানের নতুন দুয়ার। বর্ণালি বিশ্লেষণের ওপর একটা গবেষণাপত্র লেখেন কার্শফ। ১৮৫৯ সালে। মাত্র দুই পৃষ্ঠা কলেবরের সেই প্রবন্ধটিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল বর্ণালির কিছু বৈশিষ্ট্য। তাতে বলা হয়, প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুই বর্ণালি তৈরি করতে পারে। কিন্তু কারও বর্ণালির সঙ্গে অন্য কোনো মৌলের বর্ণালি হুবহু মেলে না। কিছুটা মিল হয়তো থাকতে পারে। তবে পুরোপুরি কখনো নয়। বর্ণালি বিশ্লেষণ করে জানা সম্ভব তাঁর ভেতরে কী কী মৌলিক উপাদান আছে।

আমরা জানি, সূর্যের ভেতর কী কী মৌল আছে, কোনটা পুড়ছে, এসব সম্ভব হয়েছে সূর্যের আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণ করে। দূর নক্ষত্র, নীহারিকা, গ্যালাক্সি ইত্যাদির নাড়ির খবর আমরা পাই বর্ণালির বিশ্লেষণ থেকে। সেই প্রবন্ধে সূর্যের কেন্দ্র ও বহিঃস্থস্তর সম্পর্কেও কিছু ধারণা দিলেন কার্শফ। আর নিশ্চিত করে একটা কথা বললেন, সূর্যের ভেতরে আছে সোডিয়াম মৌল। ডি-লাইনের জন্মও হয় সোডিয়ামের কারণে।

১৮ আগস্ট ১৮৬৮ সাল। সূর্যগ্রহণ সমাগত। ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে জনসেন চাইলেন সূর্যগ্রহণের দিনই সৌর বর্ণালির চুলচেরা পরীক্ষা হোক। কিন্তু সে বছর ফ্রান্সে বা ইউরোপে বসে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সম্ভব ছিল না। জনসেন ফ্রান্স থেকে পাড়ি দিলেন সুদূর ভারতবর্ষে। সেখানে বসেই চলল সৌর বর্ণালির বিশ্লেষণ। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করলেন ডি-লাইনের কাছাকাছি আরও কিছু বর্ণালি রেখা দেখা যায়। যেগুলোর কথা আগের কোনো বিজ্ঞানীই বলে যাননি। ভাবনায় পড়ে যান জনসেন। তখন এগিয়ে আসেন দুই ব্রিটিশ রসায়নবিদ জোসেফ নরম্যান লকইয়ার ও এডওয়ার্ড ফ্রাঙ্কল্যান্ড। সে বছরই ২০ অক্টোবর তিনি ঘোষণা দিলেন সৌর বর্ণালিতে এই নতুন রেখার উত্স একধরনের মৌলিক গ্যাস। গ্রিক সূর্য দেবতা হেলিওসের নাম অনুসারে সেই গ্যাসের নামকরণ করা হলো হিলিয়াম। বিজ্ঞানীরা ধরেই নিলেন হিলিয়াম পৃথিবীতে থাকা সম্ভব নয়। ১৮৯৫ সালে বদলে গেল ধারণা। আরেক ব্রিটিশ রসায়নবিজ্ঞানী উইলিয়াম র্যামজে খনিজ ইউরেনিয়ামের একটা যৌগ পরীক্ষা করছিলেন। যৌগ থেকে পাওয়া সোডিয়াম বর্ণালি পরীক্ষা করতে গিয়ে তার পাশেই পেয়ে গেলেন নতুন একধরনের বর্ণালি। সেটার বৈশিষ্ট্য জনসেন আর লকইয়ারের হিলিয়াম বর্ণালির মতোই। র্যামজে সেই নমুনা পাঠালেন লকইয়ারের কাছে। লকইয়ার নিশ্চিত করলেন র্যামজের পাঠানো নমুনায় হিলিয়াম গ্যাস রয়েছে।

নিম্নচাপে গ্যাসের ভেতর দিয়ে বিদ্যুত্ প্রবাহিত করলে গ্যাসের অণু-পরমাণুগুলো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এসব উত্তেজিত পরমাণু বিকিরণ নিঃসরণ করে। তবে এ ধরনের বিকিরণ সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে না। তাই এ ধরনের বর্ণালিতে বিচ্ছিন্ন রেখা দেখা দেয়। একটা মৌলিক পদার্থের সবগুলো পরমাণুই একই ধরনের রেখা বর্ণালি তৈরি করে না। আবার একটা মৌলের পরমাণু একটা রঙের বর্ণালি তৈরি করবে তা কিন্তু নয়। একটা পরমাণু একাধিক রঙের বর্ণালি তৈরি করতে পারে। যেমন হাইড্রোজেন পরমাণু চারটি বর্ণালি রেখা তৈরি করে। তবে এটা ঠিক, এক মৌলের বর্ণালির সঙ্গে অন্য মৌলের বর্ণালি হুবহু মেলে না। কয়েকটা রেখা হয়তো মিলতে পারে।

জোহান জ্যাকব বামার ছিলেন সুইজ্যারল্যান্ডের নামকরা গণিতবিদ। তিনি গণিত পড়াতেন একটা স্কুলে। আবার ছিলেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষকও। এক সহকর্মী তাঁকে হাইড্রোজেন পরমাণুর চারটি বর্ণালি রেখার খোঁজ দেন। উত্তেজিত হাইড্রোজেন পরমাণু যে বিকিরণ নিঃসরণ করে তা থেকেই তৈরি হয় এই চারটি বর্ণালি রেখা। লাল, সবুজ, নীল ও বেগুনি। ১৮৫০ সালে এই রেখা আবিষ্কার করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স জোনস অ্যাংস্ট্রম।

আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের খুব ক্ষুদ্র এককের নাম অ্যাংস্ট্রম। সেটা ওই বিজ্ঞানীর নামানুসারেই। তো অ্যাংস্ট্রম হাইড্রোজেন বর্ণালির চারটি রেখার তরঙ্গদৈর্ঘ্যও মাপতে সক্ষম হলেন। তিনি হাইড্রোজেন বর্ণালি চারটি বর্ণেরই নামকরণ করলেন। লাল বর্ণের রেখাটির নাম দিলেন Ha, সবুজ রেখাটির Hb, নীল রেখাটির Hg এবং বেগুনি রেখাটির নাম দিলেন Hδ। এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পেলেন যথাক্রমে ৬৫৬.৩, ৪৮৬.১, ৪৩৪.১ ও ৪১০.২ ন্যানোমিটার।

এত কিছু করলেন অ্যাংস্ট্রম কিন্তু এই রেখাগুলোর জন্য কোনো গাণিতিক সমীকরণ তৈরি করে যেতে পারেননি। বন্ধুর কথা শুনে সেই কাজে হাত লাগালেন বামার। গাণিতিক সূত্র তৈরি করলেন এদের জন্য। সেই সূত্রের সাহায্যে ফের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের করলেন রেখাগুলোর। আশ্চর্যের বিষয়, চারটি রেখার জন্য অ্যাংস্ট্রম যে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য পেয়েছিলেন, বামার সেই সেই মানই পেলেন। একচুলও এদিক-ওদিক হলো না। তারপর থেকে ওই রেখাগুলোর সাধারণ নাম হয়ে গেল বামার সিরিজ।

বামারের সমীকরণের অদলে তৈরি হলো আরও কয়েকটি সিরিজ। সুইডিশ বিজ্ঞানী জোহান রবার্ট রিডবাগ, জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিখ প্যাশেন, মার্কিন পদার্থবিদ থিওডর লাইম্যান, ফ্রেডেরিখ ব্রাকেট ও হারম্যান ফান্ড। তাঁদের প্রতেক্যের নামের দ্বিতীয় অংশ দিয়ে নামকরণ করা হলো প্রতিটি সিরিজের।

১৯২৩ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সিসিলিয়া পাইন ফাটালেন নতুন বোমা। তিনি বললেন, গোটা সূর্যই মূলত হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম দিয়ে পরিপূর্ণ। আরও কিছু মৌল আছে, কিন্তু সেসবের পরিমাণ অতি নগণ্য। এ জন্য তিনি নিলস বোরের পরমাণু মডেলের উদাহরণ টানেন। বোর বলছিলেন, ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে লাফ দিয়ে যখন আরেকটি শক্তিস্তরে যায় তখন যে শক্তি শোষণ অথবা নিঃসরণ করে তার মান প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইনের কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে বের করা যায়। সেটা E=hv । এখানে v হলো যে শক্তি নিঃসৃত বা বিকিরিত হয়, তার কম্পাঙ্ক। তিনি বলেছিলেন শক্তিস্তরগুলো শক্তি নির্দিষ্ট ও বিচ্ছিন্নমানের। আবার পরমাণুর থেকে নিঃসৃত বর্ণালিও বিচ্ছিন্ন। বামার সিরিজেই সেই বিচ্ছিন্ন রেখাগুলো পাওয়া গিয়েছিল। বোর ভাবলেন, নিশ্চয়ই বামার সিরিজের বর্ণালির সঙ্গে তাঁর পরমাণুর মডেলের শক্তিস্তরের শক্তির একটা যোগসূত্র আছে। বোর সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন। এবং পেয়েও গেলেন। ইলেকট্রন যখন উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্নশক্তিস্তরে যায় তখন শক্তি হিসেবে একটা নির্দিষ্ট শক্তির ফোটন নিঃসরণ করে। আবার যখন নিম্নশক্তিস্তর থেকে উচ্চশক্তিস্তরে যায় তখন ইলেকট্রন একটা নির্দিষ্ট শক্তির ফোটন নিঃসরণ করে। সেই ফোটনের শক্তি কতটুকু হবে সেটা নির্ভর করবে ফোটন কোন কক্ষপথ থেকে কোন কক্ষপথে লাফ দিচ্ছে তার ওপর। কিন্তু কোনো একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে ফোটন যখন অবস্থান করে তখন কোনো ফোটন শোষণ বা বিকিরণ করে না। আর সেই বিকিরণই মূলত বর্ণালি তৈরি করে।

পাইনের কথাতেও ছিল বোর মডেলের সুর। তিনি বললেন, নক্ষত্র আসলে বিরাট তাপশক্তির আধার। উচ্চতাপমাত্রার কারণে নক্ষত্রের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো আয়নিত হচ্ছে। আয়নিত হওয়া মানে পরমাণুগুলোর হয় ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত হওয়া। এর ফলে পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনগুলোর কক্ষপথ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। আর তার ফলেই বিকিরিত হচ্ছে উজ্জ্বল আলো। আর সেই আলোই তৈরি করছে নাক্ষত্রিক বর্ণালি। প্যাইন নাক্ষত্রিক বর্ণালির বহু ডেটা নিয়ে পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি তথ্যগুলো সমন্বয় করে লিখলেন তাঁর থিসিস পেপার। তাঁর পরামর্শক হার্লো শ্যাপলি। প্যানির পেপারটি শ্যাপলি পাঠালেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ নরিশ রাসেলের কাছে। রাসেল সেটা পড়ে জানিয়ে দিলেন, সূর্য বা নক্ষত্রের উপাদান সম্পর্কে প্যানির ধারণা ভুল। তবে ডক্টরেট ডিগ্রি থেকে বঞ্চিত হলেন না প্যানি।

এরপর সিসিলিয়া পাইন একটা বই লিখলেন। নাম স্টেলার অ্যাটমোস্ফিয়ার। বইটি অনুপ্রাণিত করল জার্মান জ্যোতির্বিদ আলবার্ট আনসৌল্ডকে। তিনি বইয়ের সূত্র ধরে সূর্যরশ্মির বণার্লিবীক্ষণ করলেন। নিশ্চিত হলেন, সৌর বর্ণালির হাইড্রোজেন রেখা যে শক্তির ইঙ্গিত করে, তাতে প্রতিটা বর্ণালির জন্য প্রায় এক মিলিয়ন হাইড্রোজেন পরমাণু থাকার কথা সূর্যের ভেতরে। আমরা তো সূর্যালোকের খুব সামান্য অংশ পরীক্ষা করে হাইড্রোজেনের রেখা পাই। তাতেই যদি এই পরিমাণ হাইড্রোজেনের কথা বলে, তাহলে গোটা সূর্যের হিসাবে সেটার পরিমাণ কত হবে ভাবা যায়! শিগগিরই আইরিশ জ্যোতির্বিদ ম্যাক ক্রেয়া আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন পাইন আর আনসৌল্ডের ফলাফল অভ্রান্ত। বিজ্ঞানীরা মানতে বাধ্য হলেন, সূর্যসহ সব নক্ষত্রের মূল উপাদান হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম।

লেখক: সাংবাদিক

সূত্র: বিবিসি ফোকাস

লেখাটি ২০১৭ সালে