বিজ্ঞান জাদুঘরে উন্মুক্ত হলো এফ ৬ বিমান

ছবি : আবদুল গাফফার

বিমানটি পড়ে ছিল অবহেলায়। অথচ এর পেছনে রয়েছে পাঁচ দশকের ইতিহাস। এক কালের আকাশের মহাপরাক্রমশালী বিমানটি ধুকছিল বাংলাদেশ বিজ্ঞান জাদুঘরে। সেই বিমানটিকেই নতুন করে সচল করে সোমবার দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত করল বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। বিমান উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। আরও ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি ও প্রথম আলোর হেড অব ইয়ুথ প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইভেন্ট মুনির হাসান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান
ছবি : আবদুল গাফফার

দুপুর বারোটা নাগাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বিমানটি উন্মুক্ত করেন। এর আগে মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী শিশু-কিশোরদের মধ্যে আয়োজিত কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও বিমান উন্মুক্তকরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। তিনি প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মুজিব বর্ষে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে হৃদয় দিয়ে কাজ করা। নটা-পাঁচটা কাজ করাটাই সব নয়। মন-প্রাণ ঢেলে দিয়ে কয়েক ঘণ্টার কাজ করাও অনেক ফলপ্রসু হতে পারে।’

এরপর প্রথম আলোর হেড অব ইয়ুথ প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইভেন্ট মুনির হাসান বলেন, ‌‌‌‌‌‍‘এদেশের শিশু কিশোরদের মধ্যে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাঁদের মুকুটে নতুন পালক যোগ করল এফ ৬ বিমানটি। ভবিষ্যতে যাঁরা অ্যারোনেটিক সায়েন্সের পড়তে চায়, তাদের জন্য হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দেবে এই বিমানটি।’

বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন বিজ্ঞান জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী
ছবি : আবদুল গাফফার

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বিষয়ক কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রণকারী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানব সভ্যতার প্রতিটা সংকটেই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। আজ এই করোনা সংকটেও বিজ্ঞানের ওপরই ভরসা রাখতে হবে আমাদের।’ প্রতিযোগীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‌‘তোমাদের হাতেই নির্ভর করছে দেশের ভবিষ্যত। দেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হলে তোমাদের বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়া জরুরি।’

বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ শেষে মাননীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বিজ্ঞান জাদুঘরের ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর দর্পন'-এর তৃতীয় সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর এফ ৬ বিমান সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

এফ ৬ বিমানটি আংশিক সচল করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনয়র তানজীয়া রশীদ
ছবি : আবদুল গাফফার

উল্লেখ্য, এফ ৬ বিমান এক সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহীনীর যুদ্ধ বিমান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পরে কৃষিক্ষেতে কীটনাশক ও মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর কাজেও ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর দীর্ঘদিন এটা অকেজো হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞান জাদুঘরের মহাপরিচালক বিমানটি মোটমুটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেন। তরুণ অ্যারোনেটিক ইঞ্জিনিয়ার তানজিয়া রশীদের তত্ত্বাবধনে বিমানটি সচল করা হয়েছে। ভবিষ্যত অ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে-কলমে শেখার জন্য বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।