মহাবিশ্বে প্রতিকণার চেয়ে স্বাভাবিক কণা বেশি কেন?

বিগ ব্যাংয়ের পরে যতগুলো বস্তুকণা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক ততগুলো প্রতিকণাও সৃষ্টি হয়েছেসার্ন

বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে আমাদের এই মহাবিশ্বের জন্ম। আর এই মহাবিস্ফোরণের প্রথম তিন মিনিটেই বস্তুকণাগুলোর সৃষ্টি। বস্তুকণা বলতে আমরা ইলেকট্রন, কোয়ার্ক, নিউট্রনো ইত্যাদিকে বুঝি। এর মধ্যে কোয়ার্ক হলো একধরনের মৌলিক কণিকা। এরা হ্যাড্রনদের গঠন উপাদান। হ্যাড্রন মূলত দুধরনের: ব্যারিয়ন ও মেসন। প্রোটন, নিউট্রন, পায়ন হলো হ্যাড্রনের উদাহরণ। প্রোটন ও নিউট্রন হচ্ছে ব্যারিয়ন, আর পায়ন হচ্ছে মেসন।

এসব কণা দিয়েই মূলত মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ গঠিত। কিন্তু মহাবিশ্বে শুধু বস্তুকণাই নেই। আছে প্রতিকণাও। প্রতিকণা আবার কী? ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জযুক্ত। কিন্তু এমন কোনো কণা কি আছে, যার ভর ইলেকট্রনের সমান কিন্তু চার্জ ইলেকট্রনের বিপরীত? অর্থাৎ ধনাত্মক চার্জযুক্ত? এমন কণার নাম পজিট্রন।

পজিট্রনই হলো ইলেকট্রনের প্রতিকণা। তেমনি প্রতি-কোয়ার্ক, প্রতি-নিউট্রনো ইত্যাদি কণারও অস্তিত্ব আছে। তবে প্রকৃতিতে এগুলো মুক্তভাবে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে একটা বড় রহস্য আছে। একই ধরনের কণা ও প্রতিকণা পরস্পরের সংস্পর্শে এলে ধ্বংস হয়ে যায়। থাকে শুধু শক্তি। বিজ্ঞানীরা এখন নিশ্চিত, বিগ ব্যাংয়ের পরে যতগুলো বস্তুকণা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক ততগুলো প্রতিকণাও সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে আমাদের বিশ্বজগতে শুধু বস্তুকণা দিয়ে তৈরি বস্তুই দেখি কেন?

প্রতিকণাগুলো সব গেল কোথায়?

এটা বিজ্ঞানের বড় একটা অমীমাংসিত রহস্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো এক কারণে সব প্রতিকণাই ধ্বংস হয়ে যায়। থাকে শুধু বাস্তব কণা। অজ্ঞাত কারণে প্রতিকণারা বিলীন হয়েছিল বলেই আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হতে পেরেছে। কিন্তু সেই অজ্ঞাত কারণটা আজও অজানাই রয়ে গেছে। জানা সম্ভব হয়নি কীভাবে প্রতিকণারা ধ্বংস হলো কিংবা সেগুলো কোথায় আশ্রয় নিল। তবে বিজ্ঞানীরা কিন্তু বসে নেই। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে মিলবে এই প্রশ্নের সমাধান।

সূত্র: ফিজিকস ওয়ার্ল্ড

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার মার্চ ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।