মাস্ক-ফর্মুলা: তিনটি শর্তের দুটি মেনে চলুন

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে সব রাজ্য ১৮ বছর এবং এর বেশি বয়সের সবাইকে দ্রুত করোনার টিকা দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। যদিও আমরা জানি, কোনো টিকাই পূর্ণ সুরক্ষা দেয় না এবং দুবার টিকা নেওয়ার পরও কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু এঁদের সংখ্যা কম। আর তাঁদের সংক্রমণের তীব্রতাও কম। ফলে তাঁদের দেশের অনেক স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হচ্ছে, দোকানপাট খোলা, যাতায়াত বাড়ছে। কিন্তু সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে। তাই বাইরে বের হলে তাঁদের অধিকাংশ রাজ্যে প্রায় সবাই মাস্ক পরেন।

কিন্তু মাস্ক পরে সারাক্ষণ থাকা বেশ কঠিন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি গবেষকেরা মাস্ক পরার একটি সাধারণ সূত্র বা ফর্মুলার কথা বলছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, ফর্মুলাটি হলো, (২: ৩) অথবা  ‘তিনের মধ্যে দুই’। তিনটি শর্তের মধ্যে দুটি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ২২ এপ্রিল ২০২১, তারা পারকার-পোপ এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত নিবন্ধ লিখেছেন।

মূল কথাটি হলো, আমরা তিনটি শর্ত মনে রাখব: বাইরে খোলামেলা জনবিরল পরিবেশ, আশপাশের ব্যক্তিদের থেকে পর্যাপ্ত দূরত্ব এবং মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা। এর যেকোনো দুটি শর্ত পূরণ হলে তৃতীয়টি না মানলেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম থাকবে। যেমন আমি চার দিক খোলা একটি পার্কে গেলাম। অবাধে বাতাস চলাচল করছে। আশপাশে মানুষজন তেমন নেই বা থাকলেও অন্তত স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন, তাহলে সেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা কম। এই অবস্থায় মাস্ক পরে থাকলে তো খুবই ভালো, তবে অসুবিধা হলে মাস্ক খুলে পকেটে রাখা যায়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যদি কেউ কাছে এসে পড়েন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরতে হবে।

অন্যদিকে, প্রথম দুটির একটি—যেমন খোলামেলা পরিবেশ যদি না থাকে, অথবা সেটা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব যদি বজায় না থাকে, তাহলে তৃতীয় শর্তটি অবশ্যই মানতে হবে। অর্থাৎ, সেখানে মাস্ক পরে থাকতে হবে। তা না হলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে।

অর্থাৎ, আমরা যদি বাইরের খোলামেলা পরিবেশে চলাফেরা করি এবং ভিড় এড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলি, তাহলে সারাক্ষণ মাস্ক না পরলেও সংক্রমণের আশঙ্কা কম। কিন্তু সঙ্গে অবশ্যই মাস্ক রাখতে হবে; কারণ, যেকোনো সময় পরিবেশ বদলে যেতে পারে এবং সে সময় চট করে মাস্ক পরে নিতে হবে।

এখানে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে খোলামেলা স্থান খুবই কম। হয়তো গ্রামে আছে। শহরে জনঘনত্ব খুব বেশি। তাই শহরে বাসার বাইরে সব সময় মাস্ক পরে থাকাই ভালো। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে বাসায় থাকলেও ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে, যেন অবাধে বাতাস চলাচল করতে পারে। বন্ধ ঘরে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।

(২: ৩) ফর্মুলাটি আমাদের দেশে কতটা খাটবে বলা মুশকিল। কারণ, এখানে মানুষ লকডাউনও মানতে চায় না, স্বাস্থ্যবিধিও না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা, কেনাকাটার কথা বলা হয় বটে, কিন্তু কাজের বেলায় ফক্কা! তাই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় যে বিধিমালা খাটে, আমাদের দেশে তা হুবহু কার্যকর না করে আগে দেশীয় পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

ঘুমে সমস্যা?

করোনা অতিমারির কারণে অনেকের ঘুমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মূলত দুশ্চিন্তা, আয়-উপার্জনের অনিশ্চয়তা, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়, চিকিৎসা সংকট প্রভৃতি কারণে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু প্রতিদিন অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম দরকার। বিশেষভাবে এই করোনার সময়। কারণ, পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। ঘুমের সমস্যা কাটানোর জন্য মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিনে একটানা বেশিক্ষণ কাজ না করাই ভালো। অনেক সময় ঘুম না এলেও চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে দেহ প্রায় সমান বিশ্রাম পায়। এতে কিছু সুফল পাওয়া যায়। বেশি সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

লকডাউনের সুফল

গত কয়েক দিন করোনা সংক্রমণের হার কমছে, সেই সঙ্গে মৃত্যুহারও। লকডাউনের সুফল বলা যেতে পারে। যদিও লকডাউন সে অর্থে পুরোপুরি কঠোরভাবে পালিত হয়নি, কিন্তু তারপরও জনসমাগম ছিল কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। এরপর ঈদের সময় মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবেন। সে সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। না হলে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করবে হয়তো। সেটা হবে আত্মঘাতী। আমাদের যেমন আয় উপার্জনের সুযোগ রাখতে হবে, তেমনি আবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জীবন ও জীবিকার সঠিক সমন্বয়ের ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। এটা সম্ভব সব সময় মাস্কের সঠিক ব্যবহার, ভিড়ের মধ্যে অথবা জানালা-দরজা বন্ধ ঘরে বেশিক্ষণ না থাকা এবং কিছুক্ষণ পরপর সাবানপানিতে হাত ধোয়া। তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]