রেলগাড়ি দুটি কত দূরত্বে ছিল?

গণিতে কিছু কৌশল কাজে লাগিয়ে আপনি কোনো একটি সংখ্যা বের করে ফেলতে পারেন। যেমন ধরুন, আমি বন্ধুকে বললাম, ‘তুমি যে সংখ্যাটি বের করতে বলবে, আমি তৎক্ষণাৎ বের করে দেব।’ তার মানে? বন্ধু একটু অবাক হলেন। আমি বললাম, ‘মানে হলো, তুমি বলবে এই সংখ্যাটি চাই, আমি সেটা তোমাকে ধরিয়ে দেব। কোন সংখ্যাটি তুমি চাইছ বলো।’ বন্ধু বললেন, ‘আচ্ছা আমি চাই ৩।’ এবার আমার পালা। বললাম, ‘তুমি মনে মনে যেকোনো একটি সংখ্যা ধরো। আমাকে জানাবে না। তোমার মনেই গোপন রাখো।’ বন্ধু বললেন, ‘আচ্ছা, বেশ। ধরলাম। এখন কি তুমি এই সংখ্যাটাকেই ৩ বানিয়ে ছাড়বে?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, ঠিক তা–ই। তোমার মনের সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করো।’

বন্ধু নিরাসক্তভাবে বললেন, ‘বেশ, করলাম দ্বিগুণ, এবার?’ ‘যোগ করো ৯, বিয়োগ করো ৩। এরপর ২ দিয়ে ভাগ করো।’ ‘করলাম, কিন্তু ৩ কোথায়?’ আমি বললাম, ‘এই তো হয়ে গেছে, শুধু তুমি প্রথমে মনে মনে যে সংখ্যাটি ধরেছিলে, সেটা বাদ দিয়ে দাও। দেখো তো কী পেয়েছ?’ বন্ধু তো অবাক। তাঁর হাতে এখন রয়েছে ৩। মাথা ঘুরে গেছে বন্ধুর।

বললেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? আমি ধরলাম ১১, আর তাকে তুমি ঠিক ৩ বানিয়ে ছাড়লে?’ বললাম, ‘এই তো গণিতের খেলা। ধরেছ ১১, আমি কিন্তু জানি না। প্রথমে দ্বিগুণ করে ৯ যোগ ও ৩ বিয়োগ করলে। হলো ২৮। এরপর ২ দিয়ে ভাগ করে হলো ১৪। এবার প্রথমে যে ১১ ধরেছ, সেটা বিয়োগ করলে থাকল ৩। কি, পেয়েছ তো তোমার সেই পছন্দের সংখ্যা ৩?’

এখন আপনার বন্ধু নড়েচড়ে বসলেন। বলল, ‘ঠিক আছে, আমি ৩ চাই না, ৫ চাই। দাও এনে আমাকে ৫।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, আবার আগের মতো কোনো একটি সংখ্যা মনে মনে ধরো, আমাকে যেন বলবে না।’ বন্ধু বললেন, ‘ধরেছি, এবার কী করতে হবে?’ বললাম, ‘যে সংখ্যাটি ধরেছ, তার পরের সংখ্যাটি যোগ করো। এরপর যোগ করো ৯ এবং ২ দিয়ে ভাগ করো। এখন তুমি যে সংখ্যাটি মনে মনে ধরেছ, সেটা বিয়োগ করো। ব্যস, হলো। পেয়েছ তো তোমার প্রিয় সংখ্যা ৫?’ বন্ধু তো অবাক। এটা কীভাবে হয়? বন্ধু ভাবছেন, তিনি ধরলেন ১৫ আর ফিরে পেলেন ৫?

আসলে এখানে কোনো জাদুমন্ত্র নেই। ধরা যাক, প্রথমে আমার বন্ধু যে সংখ্যা ধরেছেন, সেটা ‘ক’। এখন পরপর সূত্র অনুযায়ী পরের সংখ্যাটি যোগ করলেন। হলো (ক + ক + ১) = (২ক + ১)। এর সঙ্গে ৯ যোগ করে ২ দিয়ে ভাগ করলেন। সংখ্যাটি দাঁড়াল (২ক + ১০)/২ = (ক + ৫)। এখন তিনি প্রথমে যে সংখ্যা ধরেছিলেন, সেই ‘ক’ বিয়োগ করলেন। হাতে থাকবে ৫। অর্থাৎ, প্রথমে যে সংখ্যাই ধরা হোক না কেন, সূত্র অনুযায়ী যোগ–বিয়োগ–গুণ–ভাগ করলে শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতে ৫–ই থাকবে।

এবার আসছি মূল প্রশ্নে

দুটি রেলগাড়ি একই রেললাইন ধরে পরস্পর বিপরীত দিক থেকে ঘড়ি ধরে একই সময়ে রওনা হলো। প্রথম রেলগাড়িটি চলছে ঘণ্টায় ৬০ কিমি বেগে, অপরটি ঘণ্টায় ৪০ কিমি বেগে। এক ঘণ্টা চলার পর রেলগাড়ি দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটল। প্রশ্ন উঠল, এ রকম ভয়াবহ সংঘর্ষের জন্য দায়ী কে? কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরস্পর বিপরীত দিক থেকে রওনা দেওয়ার সময় রেলগাড়ি দুটির মধ্যে দূরত্ব কত ছিল, বলুন তো?

গত রোববার প্রকাশিত প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্নটি ছিল এ রকম: দুই অঙ্কের একটি সংখ্যা তার অঙ্ক দুটির যোগফলের ৪ গুণ। এ রকম ন্যূনতম ও বৃহত্তম সংখ্যা দুটি কত?
উত্তর
ন্যূনতম সংখ্যা ১২। এর অঙ্কগুলোর যোগফল = ৩ এবং (৩ x ৪) = ১২। বৃহত্তম সংখ্যা ৪৮। এর অঙ্কগুলোর যোগফল = ১২ এবং (১২×x ৪) = ৪৮

কীভাবে উত্তর বের করলাম

আমরা বীজগণিতের নিয়ম ব্যবহার করে সহজেই উত্তর বের করতে পারি। মনে করি, সংখ্যাটি (কখ)। এর মান = (১০ক + খ)। শর্ত অনুযায়ী (১০ক + খ) = ৪(ক + খ)। সুতরাং (৬ক) = (৩খ)। অথবা, বলতে পারি খ = (২ক)। অর্থাৎ সংখ্যাটির এককের ঘরের অঙ্কটি দশকের ঘরের অঙ্কটির দ্বিগুণ। সুতরাং ন্যূনতম সংখ্যাটি হবে ১২ এবং বৃহত্তম সংখ্যাটি হবে ৪৮। কারণ, এর চেয়ে বড় সংখ্যাটি তিন অঙ্কে চলে যাবে। মাঝে অবশ্য ২৪ ও ৩৬–এই সংখ্যা দুটি থাকবে, যাদের অঙ্ক দুটির যোগফলের চার গুণ।

উত্তর আমার ই–মেইলে পাঠাতে পারেন। সঠিক উত্তর আগামী রোববার এই কলামে ছাপা হবে।

লেখক: আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক। [email protected]