শ্রোডিঙ্গারের জেব্রা

তিনজন বিজ্ঞানী বৈকালিক ভ্রমণে বের হয়েছেন। একজন প্রাণিবিজ্ঞানী, একজন পদার্থবিজ্ঞানী আর একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তাঁরা হাঁটতে হাঁটতে একটা জঙ্গলের ধারে এলেন। হঠাত্ প্রাণিবিজ্ঞানী কিছু একটা দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন:

আরে দেখো দেখো।

কী দেখব?

আরে একটা সাদা জেব্রা দেখতে পাচ্ছ না?

হ্যাঁ, এখন পাচ্ছি। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে! অন্যরা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন।

আরে কী আশ্চর্য, দেখছ না জেব্রাটা সাদা। তার গায়ে কালো ডোরাকাটা নেই। এর মানে বুঝতে পারছ? এই প্রজাতির মধ্যে কোনো জটিল মিউটেশনের কারণে এমনটা হয়েছে। এটা একটা ভয়ানক আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের জন্য আমরা কিন্তু বিখ্যাত হয়ে যেতে পারি।

পদার্থবিজ্ঞানী বললেন, ‘জেব্রাটার এই পাশে সাদা তাতে কী? অন্য পাশে ডোরাকাটা হতে পারে! ফিফটি ফিফটি চান্স। শ্রোডিঙ্গারের বিড়ালের মতো আরকি। এ ক্ষেত্রে এটা অবশ্য শ্রোডিঙ্গারের জেব্রা। বলে নিজের রসিকতায় হো হো করে হাসলেন পদার্থবিজ্ঞানী।

প্রাণিবিজ্ঞানী তাঁর এই মহান আবিষ্কারের সমর্থনের আশায় কম্পিউটার বিজ্ঞানীর দিকে তাকালেন। ‘তুমি কী ভাবছ?’

কম্পিউটার বিজ্ঞানী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘পৃথিবীতে সাদা জেব্রা রেয়ার অবশ্যই। তা ছাড়া সবুজ জঙ্গলের ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা সাদা জেব্রা চরে বেড়াচ্ছে, দৃশ্যটা অসাধারণ। তবে খুব সম্ভব এটা কোনো হাই রেজল্যুশনের স্ক্রিন সেভার হবে!’

এ সময় রঙ্গমঞ্চে চতুর্থ একজনের আবির্ভাব ঘটল। তিনি অবশ্য তাঁদের মতো কোনো বিজ্ঞানী নন। তিনি এসে বললেন, আপনারা কেউ একটা সাদা ঘোড়া দেখেছেন? আমার পালা ঘোড়াটা কোথায় যে গেল, সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না।

গল্পটা এখানে শেষ হলেই ভালো হতো। কিন্তু ফেরার পথে তাঁরা একটা হরিণ দেখতে পেলেন। প্রাণিবিজ্ঞানী এবার আর আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করলেন না। পদার্থবিজ্ঞানী টিপ্পনী কাটলেন, ‘ওহে তুমি নিশ্চয়ই বলবে না এটার গায়ে সাদা ফুটকি নেই বলে এটা কোনো জটিল মিউটেশনের ফল!’

না তা বলছি না, তবে আমি নিশ্চিত, এটার উল্টো পাশে সাদা ফুটকি আছে। গম্ভীর হয়ে বললেন প্রাণিবিজ্ঞানী।

কী আবোলতাবোল বলছ?

চলো, বরং ওপাশটা আমরা সরেজমিনে দেখি না হয়। অবশ্য হরিণটা যদি না ভয় পেয়ে সরে যায়।

বেশ চলো।

হরিণটা অবশ্য সরল না। আর ওরা ওপাশে গিয়ে দেখল, সত্যিই হরিণটার অন্য পাশের গা সাদা ফুটকিতে ভরা। প্রাণিবিজ্ঞানী খুব একটা অবাক হলেন না। পদার্থবিজ্ঞানী আশ্চর্য হয়ে তাকালেন কম্পিউটার বিজ্ঞানীর দিকে। কম্পিউটার বিজ্ঞানী কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, ‘আগেরটা স্ক্রিন সেভার ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত স্ত্রিন সেভার, তবে দুটো স্ক্রিন সেভার...একটা অ্যাপেল ম্যাকিনটশ, অন্যটা আইবিএম...!

লেখক: কার্টুনিস্ট

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার মে সংখ্যায় প্রকাশিত