ভাইরাস শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস। আজ দেখা যাক, ভাইরাস শব্দটি কী করে আমাদের হলো?

তামাকগাছ একটি রোগে আক্রান্ত হলে তাদের পাতা বিবর্ণ হয়ে মরে যায়। এতে পাতাতে দাগ পড়ে, দেখে মনে হয়, যেন পাতায় মোজাইকের নকশা বোনা হয়েছে। তাই তামাকগাছের এ রোগকে বলে টোবাকো মোজাইক ডিজিজ।

ফরাসি বিজ্ঞানী পাস্তুরের কারণে তখন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, সব রোগের পেছনেই কোনো না কোনো জীবাণু দায়ী। তাই রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি ইভানোভস্কি এ রোগের জীবাণু খুঁজে বের করার চেষ্টা চালালেন। দেখা গেল, রোগাক্রান্ত গাছের পাতার রস কোনো সুস্থ গাছে লাগলে সেটিও অসুস্থ হয়। ইভানোভস্কি ভাবলেন, খুবই ক্ষুদ্র ছিদ্রঅলা (ছিদ্রগুলো শুধু মাইক্রোস্কোপেই দেখা সম্ভব) কোনো কিছুর মধ্য দিয়ে এ রস চালনা করা হলে ক্ষুদ্র জীবাণুগুলো তাতে আটকে যেতে পারে। তাতে ছিদ্রের মধ্য দিয়ে জীবাণুহীন রস যেতে পারবে। কিন্তু সেই রসে তামাকগাছে কোনো রোগ সৃষ্টি হবে না বলেই মনে করলেন তিনি।

ইভানোভস্কি ১৮৯২ সালে রোগাক্রান্ত তামাক পাতার রস ছাঁকতে খুবই ক্ষুদ্র ছিদ্রঅলা বিশেষ ধরনের চীনামাটির ছাঁকনি ব্যবহার করলেন। তার হিসাবে, সবচেয়ে ছোট জীবাণুও এই ছাঁকনিতে আটকে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। তার ছাঁকা সেই রস সুস্থ তামাকগাছে লাগানোর পর সেগুলোও রোগাক্রান্ত হল। ইভানোভস্কি কঠিন এক সত্যের মুখোমুখি হলেন। তিনি অবাক হয়ে ভাবলেন, জীবাণু কী এতই ছোট হতে পারে যে তারা চীনামাটির এত ক্ষুদ্র ছাঁকনির ছিদ্রপথ গলে বেরিয়ে যেতে পারে! কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। সে কারণে হঠাত্ এই গবেষণা বন্ধ করে দিলেন তিনি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

এর ছয় বছর পর ডাচ উদ্ভিদবিদ মার্তিনাস উইলহেম বেইয়ারিঙ্ক প্রায় একই পরীক্ষা করলেন। ফলাফলও পেলেন একই রকম। তবে তিনি সত্যটা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। তামাকের মোজাইক রোগের জীবাণু এতই ছোট যে সেগুলো ছাঁকনির ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যায়—সেটি মেনে নিলেন তিনি। তিনি ভাবলেন, জীবাণুগুলো সম্ভবত পানির সবচেয়ে ছোট কণার চেয়ে সামান্যই বড় হবে। এ কারণেই পানির কণা বা অণু যে পথে যেতে পারে সেদিক দিয়ে জীবাণুগুলোও যেতে পারে।

গাছের বিষাক্ত রস বোঝাতে ল্যাটিনে ভাইরাস (virus) শব্দটি ব্যবহার করা হতো, যার অর্থ বিষ বা বিষাক্ত রস। রোগাক্রান্ত তামাক পাতার রস কোনো সুস্থ তামাকগাছের জন্য বিষাক্ত বলে মনে হয়েছিল বেইয়ারিঙ্কের কাছে। তাই তিনি এর নাম দিলেন ভাইরাস। এরপর অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর জন্য শব্দটি ব্যবহার হতে লাগল।