কুকুর কত দিন বাঁচে?

প্রাণী হিসেবে অনেকেরই কুকুর বেশ পছন্দ। সেটা পোষা হোক বা রাস্তার। ছোটখাটো এই প্রাণীটির বিশ্বস্ততা প্রবাদতুল্য। মানুষের সংস্পর্শে আসা প্রাণীদের মধ্যে কুকুরের চেয়ে বেশি বিশ্বস্ত প্রাণী খুব একটা দেখা যায় না। প্রয়োজনে জীবন দিতেও পিছপা হয় না। তা ছাড়া কুকুরের ঘ্রাণশক্তিও বেশ ভালো। তাই মানুষের আগেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। বিপদে আগে থেকে সতর্ক করে দেয়। এরকম নানা কারণে হাজার বছর ধরে কুকুর পুষছে মানুষ। শিকার, অপরাধ শনাক্ত করা বা সঙ্গ দেওয়ার মতো কাজে এখনও কুকুর মানুষের নিত্য সঙ্গী।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ জাতের কুকুর আছে। জাতভেদে কুকুরের আচরণ যেমন কিছুটা ভিন্ন হয়, তেমনি আকারেও হয় ছোটবড়। প্রশ্ন হলো, জাতভেদে কি কুকুরের আয়ু ভিন্ন হয়? কুকুর মূলত কতদিন বাঁচে?

নানাজাতের কুকুরের জীবনকালের গড় নির্ণয় করলে করলে দেখা যায়, এগুলোর আয়ু ১০ থেকে ১৩ বছরের মতো। তবে জাতসহ আরও কিছু বিষয়ভেদে এটা অনেক কম-বেশি হতে পারে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক কুকুর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘ব্লুয়ি’কে। অস্ট্রেলিয়ান ক্যাটল প্রজাতির এই কুকুর বেঁচে ছিল প্রায় সাড়ে ২৯ বছর।

কুকুরের জীবনকাল নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। বর্তমানেও যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি গবেষণা চলমান। এর নাম ‘দ্য ডগ এজিং প্রজেক্ট’। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন, জিন, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং পরিবেশ কুকুরের বয়সবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় কেমন প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন

এ গবেষণা বলছে, কুকুরের বেঁচে থাকার ‘গড়’ বয়স ১৫ থেকে একটু বেশি। গবেষণা যেহেতু, একটি সঠিকভাবে বলা প্রয়োজন। এখানে ‘গড়’ মানে, মধ্যক। গড় তিনভাবে হিসাব করা যায়। এক, এভারেজ বা মিন বা গড়; দুই, মিডিয়ান বা মধ্যক এবং তিন, মোড বা প্রচুরক। সহজ করে বললে, যে সংখ্যাগুলো নিয়ে হিসাব করা হচ্ছে, তাদের ঠিক মধ্যিখানের মানটিকে বলা হয় মধ্যক। তবে অনেকক্ষেত্রেই গড় ও মধ্যক এক হয় না। তা ছাড়া গড়মান নির্ণয়ের আরও নানা পদ্ধতি আছে। তবে বাংলায় এগুলোকে সাধারণত এক কথায় ‘গড়’-ই বলা হয়।

কুকুর

লিঙ্গ, অর্থাৎ স্ত্রী-পুরুষ ভেদে কুকুরের জীবনকাল কিছুটা ভিন্ন হয়। আকারে ছোট প্রজাতির কুকুরগুলো তুলনামূলক বেশি বাঁচে। সবকিছুরই অবশ্য ব্যাতিক্রম আছে। যেমন ফ্রেঞ্চ ম্যাস্টিফ। তুলনামূলক ছোটজাতের কুকুর। গড় জীবনকাল ৫ থেকে ৬ বছর। কুকুরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম বাঁচে বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

কুকুরের আয়ুষ্কাল তো জানা গেল। এবার এগুলোর আয়ু কীভাবে কাজ করে, সেটা একটু জানা যাক। বিষয়টা বেশ অদ্ভুত। কুকুরের বয়স মানুষের মতো একই হারে বাড়ে না। মানুষ ১৫ বছরে যতখানি বাড়ে, কুকুর জীবনের প্রথম এক বছরেই সে পরিমাণ বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ মানুষের বৃদ্ধির সঙ্গে তুলনা করলে, কুকুরের প্রথম বছরটিকে বলা যায় মানুষের ১৫ বছরের সমান। এই প্রথম বছরেই কুকুর জৈবিকভাবে প্রায় ১৫ বছরের মতো বেড়ে ওঠে, পরিপক্ব হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কুকুরের বয়স প্রায় নিখুঁতভাবে বের করার একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। কুকুরের আসল বয়স বের করার জন্য স্বাভাবিক বয়সের প্রকৃত লগারিদমকে (Natural logarithm) ১৬ দিয়ে গুণ করতে হবে। এরপর গুণফলের সঙ্গে যোগ করতে হবে ৩১।

ধরা যাক, একটি কুকুর আমাদের হিসেবে ১০ বছর আগে জন্ম নিয়েছে। সেই কুকুরের জৈবিক বয়স বের করতে চাইলে, ১০-এর প্রকৃত লগারিদম (Natural Logarithm), অর্থাৎ প্রায় ২.৩-কে ১৬ দিয়ে গুণ করতে হবে। এরপর গুণফলের সঙ্গে ৩১ যোগ করলে পাওয়া যাবে প্রায় ৬৮ বছর। (২.৩×১৬)+৩১=৬৮। তার মানে, আমাদের হিসেবে এই কুকুরের বয়স ১০ হওয়ার কথা থাকলেও জৈবিক পরিপক্কতার দিক থেকে এর বয়স পেরিয়ে গেছে প্রায় ৬ দশক।

লেখক: শিক্ষার্থী, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস