সন্ধ্যা লাগল কী ব্যস, শুরু হয়ে গেল তাদের তাণ্ডব! কানের কাছে গুনগুন করে গান গেয়ে রীতিমতো শুরু হয় রক্ত খাওয়ার উৎসব। হাতে-পায়ে-মুখে যেখানে সুযোগ পায়, সেখানে বসেই ভোজ শুরু করে এই রক্তচোষারা। শুধু রক্ত খেলে না হয় কিছুটা সহ্য করা যেত, কিন্তু রক্ত খেতে গিয়ে আবার ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকাসহ ভয়ংকর কিছু রোগের জীবাণুও তারা আমাদের দেহে ঢুকিয়ে দেয়। তাতে প্রতিবছরই ভুগছে অসংখ্য মানুষ, মরছেও শত শত। এসব আর কাহাতক সহ্য করা যায়!
ঠিক ধরছেন, রক্তচোষা ড্রাকুলা নয়, বলছিলাম আমাদের নিত্যসঙ্গী মশাদের কথা। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেকেই নিজে চড়-চাপ্পড় মারতেও বাধ্য হচ্ছি আমরা। আর সেটা করতে গিয়ে চরম বিরক্তিতে কে না ভেবেছে যে পৃথিবী থেকে সব মশা যদি মেরে-কেটে সাফ করে ফেলা যেত! মশার বংশ যদি নির্বংশ করা যেত! আহা! তাহলে পৃথিবীটা না জানি কত সুন্দর হতো! স্বর্গ এসে দাঁড়াত তখন আমাদের দুয়ারে! তাই না?
কিছু গাছের পরাগায়নে মশার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর মধ্যে রয়েছে অর্কিডসহ আরও কিছু ফুল। এসব ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মশারা এক ফুলের পরাগরেণু আরেক ফুলে ছড়িয়ে দেয়।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কী জানেন, জীববিজ্ঞানীরা বলছেন ঠিক উল্টো কথা। আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতির জন্য মশাও দরকারি। তাঁদের ভাষ্যমতে, মশাহীন পৃথিবী কল্পনায় অনেক সুন্দর হলেও বাস্তবে তা নয়। বরং মশা না থাকলে পৃথিবীর অনেক ক্ষতি হতো। হয়তো ভাবছেন, তা কেন?
প্রথমত, আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমের জন্য সব জীবই অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে মশার ভূমিকাও ফেলনা নয়। জীববিজ্ঞানীদের হিসেবে, পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে। তবে সব মশা মানুষ বা জীবজন্তুর রক্ত খায় না। জ্বালাতনও করে না। কিছু মশা স্রেফ গাছ বা ফলের রস, ফুলের মধু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে। আবার এদের মধ্যে সব মশা নয়, মাত্র ৪০০ প্রজাতি ম্যালেরিয়ার মতো ভয়ংকর কিছু রোগের জীবাণু বহন করে। এরাই মানুষসহ অন্যান্য প্রাণিদেহে ছড়িয়ে দেয় জীবাণুগুলো।
জীববিজ্ঞানীরা বলেন, তা সত্ত্বেও খাদ্যশৃঙ্খলে মশাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু মাছ, পাখি, বাদুড়, ব্যাঙসহ আরও কিছু প্রাণী মশাকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন মশার লার্ভা খায় মাছের মতো কিছু জলজ প্রাণী। আর পূর্ণবয়স্ক মশা খায় পাখি, বাদুড়, ফড়িং, মাকড়শার মতো প্রাণীরা। এভাবে এসব প্রাণী নিজের ক্ষুধা মেটায়, প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। তাই মশা যদি না থাকত, তাহলে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ত। তাতে অনেক প্রজাতির মাছ, পাখি, বাদুড় ও ব্যাঙ হয় পুষ্টিহীনতায় ভুগত, নয়ত তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেত।
আমাদের পরিবেশ-প্রকৃতির জন্য মশাও দরকারি। তাঁদের ভাষ্যমতে, মশাহীন পৃথিবী কল্পনায় অনেক সুন্দর হলেও বাস্তবে তা নয়। বরং মশা না থাকলে পৃথিবীর অনেক ক্ষতি হতো।
দ্বিতীয়ত, কিছু গাছের পরাগায়নে মশার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর মধ্যে রয়েছে অর্কিডসহ আরও কিছু ফুল। এসব ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মশারা এক ফুলের পরাগরেণু আরেক ফুলে ছড়িয়ে দেয়। ফলে এসব গাছের বংশ রক্ষা হয়। এভাবে এসব গাছের প্রজাতি যুগের পর যুগ টিকে আছে বহাল তবিয়তে। তাই মশা না থাকলে এসব গাছ হয়তো অনেক আগেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেত। এভাবে বাস্তুতন্ত্র এবং খাদ্যশৃঙ্খলে ভূমিকা রেখে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখছে মশারা।
কাজেই পৃথিবীকে মশামুক্ত করা মোটেও ভালো কথা নয়। বাস্তবসম্মতও নয়। তাই বলে, আপনার গায়ে-পায়ে এই মুহূর্তে যে মশাটা বসে আরামসে রক্ত খাচ্ছে, সেটাকে চড় দিয়ে মেরে ফেলতে দ্বিধা করবেন না।
