ডুবুরিরা অক্সিজেনের সঙ্গে নিষ্ক্রিয় গ্যাস মেশান কেন

সিলিন্ডারে অক্সিজেনের সঙ্গে কিছু নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামও মেশানো থাকেছবি: সংগৃহীত

গভীর পানিতে ডুবুরিরা কেন অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে যান, আশা করি সেটা সবারই জানা। কিন্তু জানেন কি—সিলিন্ডারে অক্সিজেনের সঙ্গে কিছু নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়ামও মেশানো থাকে। প্রশ্ন হলো, কেন? কেন মেশানো হয় হিলিয়াম?

এর উত্তর জানার আগে জানতে হবে নিষ্ক্রিয় গ্যাস কী। যেসব গ্যাস সাধারণ অবস্থায় কোনো মৌলের সঙ্গে যৌগ গঠন করে না, এমনকি কোনো মৌল বা যৌগের সঙ্গে বিক্রিয়াই করে না, সেগুলোই নিষ্ক্রিয় গ্যাস। নিষ্ক্রিয় গ্যাস ৬টি। হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন, ক্রিপ্টন, জেনন ও রেডন। এ ছাড়াও ওগানেসন নামে একটি মৌল উদ্ভাবিত হয়েছে। এর পারমাণবিক সংখ্যা ১১৮। এই ওগানেসনও নিষ্ক্রিয় গ্যাসের গ্রুপেই পড়ে। তবে আসলেই এটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস কি না, বিজ্ঞানীরা এখনো তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এমনকি মৌলটি আদৌ গ্যাস কি না, এ নিয়েও আছে দ্বিধা। তবে তাত্ত্বিকভাবে মৌলটি অন্য কোনো মৌলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় জড়ায় না।

হিলিয়াম বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং বাতাসের চেয়ে হালকা একটি গ্যাস। ১৮৬৯ সালে এক সূর্যগ্রহণের সময় ফরাসি জোতির্বিদ পিয়েরে জ্যানসেন সৌর করোনার বর্ণালীতে গ্যাসটির অস্তিত্ব আবিস্কার করেন। তবে পৃথিবীতে হিলিয়াম শনাক্ত করা হয় এ ঘটনার ২৭ বছর পর। আসলে কোনো মৌল বা যৌগের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না বলেই বিজ্ঞানীদের এ গ্যাস শনাক্ত করতে এত দেরি।

বেলুন ফোলাতে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

যাহোক, পরীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণে ডুবুরিদের জৈবিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়। আবার সাধারণ বাতাস দিয়ে পানির নিচে শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন ছাড়াও পানির চাপে বায়ুর আরেক উপাদান নাইট্রোজেন রক্তে মিশে যায়। কিন্তু সমুদ্রতল থেকে পানির ওপরে ওঠার পর কমে যায় চাপ। এতে শিরার ভেতরের রক্ত থেকে নাইট্রোজেন বুদবুদ আকারে বের হতে থাকে। যা ডুবুরির জন্য কষ্টকর।

কিন্তু নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিলিয়াম কারও সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। রক্তে এর দ্রবণীয়তাও কম। তাই অক্সিজেনের সঙ্গে হিলিয়াম গ্যাস মেশালে এ ধরনের সমস্যা হয় না। সে জন্য ডুবুরিদের সিলিন্ডারে অক্সিজেনের সঙ্গে কিছুটা হিলিয়াম মেশানো হয়। এ ছাড়া চিকিৎসা ও মহাকাশ ভ্রমণেও হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন