কত বছর বাঁচবেন, তা নির্ভর করে আপনি কোন দেশে আছেন তার ওপর

আপনার আয়ু শরীরের চেয়ে বেশি নির্ভর করে আপনি পৃথিবীর কোন দেশে বাস করছেন, তার ওপরছবি: গেটি ইমেজ

২০২৫ সালে আমরা কী নিয়ে গর্ব করি? আমাদের হাতে আছে কৃত্রিম, মরণব্যাধি রুখে দেওয়ার মতো ভ্যাকসিন আর অবিশ্বাস্য সব আধুনিক মেডিসিন। এত কিছুর পর মনে হতেই পারে, ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা তো এখন ডালভাত!

কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি কত দিন বাঁচবেন, তা আপনার শরীরের চেয়ে বেশি নির্ভর করছে আপনি পৃথিবীর কোন দেশে বাস করছেন তার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। তারা বলছে, আধুনিক যুগেও ৭০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যাওয়ার ঝুঁকি পৃথিবীর সব জায়গায় এক নয়। 

২০১৯ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর দেশগুলোতে ৭০ বছরের আগে মারা যাওয়ার হার মাত্র ১২ শতাংশ। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠটা ভয়াবহ। সাব-সাহারান আফ্রিকায়  ৭০ বছরের আগে মারা যাওয়ার হার ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ বেঁচে থাকা আর না থাকার সম্ভাবনা এখানে অনেকটা টস করার মতো।

আমাদের পাশের দেশ ভারতে এই হার ৩৭ শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়েও যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ২২ শতাংশ। তবে কানাডা ও পশ্চিম ইউরোপের মানুষ আছে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। তাদের ঝুঁকি মাত্র ১৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন
২০১৯ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর দেশগুলোতে ৭০ বছরের আগে মারা যাওয়ার হার মাত্র ১২ শতাংশ। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠটা ভয়াবহ।

গবেষণার প্রধান লেখক ওমর কার্লসন বলছেন, ‘আমরা জানতাম বৈষম্য থাকবে। কিন্তু মৃত্যুর হারের এই আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি।’ 

তবে দীর্ঘায়ুর দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলে আজও এক নম্বরে আছে জাপান। ১৯০০ সালেও জাপানে ৭০-এর আগে মৃত্যুর হার ছিল ৫৭ শতাংশ। আর এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ শতাংশে। জাপান দেখিয়ে দিয়েছে, সঠিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকলে মৃত্যুকে কীভাবে দূরে ঠেলে রাখা যায়।

এই গবেষণার সবচেয়ে বড় টুইস্ট হলো চীন এবং আমেরিকা। গত কয়েক দশকে চীন অসাধ্য সাধন করেছে। ১৯৭০ সালেও তারা স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বের সেরা দেশগুলোর চেয়ে প্রায় ১০০ বছর পিছিয়ে ছিল। কিন্তু জনস্বাস্থ্য অভিযান, প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে তারা সেই ব্যবধান কমিয়ে এনেছে। চীন এখন দ্রুতগতিতে দীর্ঘায়ুর দিকে এগোচ্ছে।

অন্যদিকে আমেরিকার গল্পটা উল্টো। তারা চিকিৎসার পেছনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে। অথচ ফলাফলে তারা যেন লবডঙ্কা! ১৯৭০ সালে আমেরিকা বিশ্বের সেরা অবস্থান থেকে ২৯ বছর পিছিয়ে ছিল। ২০১৯ সালে সেই গ্যাপ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ বছরে! 

এর কারণ কী? গবেষকরা বলছেন, ভয়াবহ স্বাস্থ্যসেবা বৈষম্য, অতিরিক্ত খরচ, ড্রাগ ওভারডোজ, বন্দুক সহিংসতা এবং আত্মহত্যা আমেরিকাকে পেছনের দিকে টেনে ধরেছে।

আরও পড়ুন
১৯০০ সালে জাপানে ৭০-এর আগে মৃত্যুর হার ছিল ৫৭ শতাংশ। আর এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২ শতাংশে। জাপান দেখিয়ে দিয়েছে, সঠিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকলে মৃত্যুকে কীভাবে দূরে ঠেলে রাখা যায়।

পৃথিবীর একেক প্রান্তে মৃত্যুর দূত একেক রূপে আসে। আফ্রিকায় এখনো মানুষ মারা যাচ্ছে সংক্রামক রোগ, প্রসবকালীন জটিলতা এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে মৃত্যুর বড় কারণ অ্যালকোহল বা মদ্যপান এবং আত্মহত্যা। ভারত ও মধ্য এশিয়ায় হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলো কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ। 

ছবি: ইন্টারঅ্যাক্ট ফর হেলথ

গবেষকেরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, শুধু ল্যাবরেটরিতে বসে ক্যানসার বা জেনেটিক থেরাপির মতো হাই-টেক চিকিৎসা আবিষ্কার করলেই হবে না। ডিউক গ্লোবাল হেলথ রিসার্চার ওসন্ডু ওগবুওজির মতে, ‘অকালমৃত্যু ঠেকানোর সব সরঞ্জাম আমাদের হাতে আছে। আসল চ্যালেঞ্জ হলো, এই সুবিধাগুলো আমরা কতটা দ্রুত এবং কতটা ন্যায্যভাবে পৃথিবীর সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি।’ 

লেখক: ফ্রন্টেন্ড ডেভলপার, সফটভেঞ্চ

সূত্র: ডিউক ইউনিভার্সিটি, ফিউচারিটি ডটঅর্গ ও জেএএমএ হেলথ ফোরাম

আরও পড়ুন