যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানার একটি ক্যাম্পগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্ক করেছিলেন বিজ্ঞানী ফ্রেড র্যামসডেল। তিনি রকি পর্বতমালার বুকে ক্যাম্পিং ও হাইকিং করে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর স্ত্রী লরা ও’নিল চিৎকার করে উঠলেন।
র্যামসডেল প্রথমে ভাবলেন, তাঁর স্ত্রী হয়তো কোনো হিংস্র গ্রিজলি ভালুক দেখে ভয় পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে তাঁরা যেখানে ক্যাম্পিং করেছিলেন, সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। অনেকক্ষণ পর লরার ফোনে নেটওয়ার্ক আসে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনে একের পর এক খুশির বার্তা ঢুকতে শুরু করে।
লরা চিৎকার করে র্যামসডেলকে বললেন, ‘তুমি তো নোবেল পুরস্কার জিতে গেছ!’ র্যামসডেলের ফোন তখনও এয়ারপ্লেন মোডে ছিল। তিনি জবাব দিলেন, ‘না, আমি জিতিনি।’ কিন্তু তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘আমার ফোনে ২০০টা মেসেজ এসেছে। সবাই বলছে তুমিই জিতেছ!’
তাঁরা নোবেল কমিটির সেই গুরুত্বপূর্ণ ফোন কলটি পাননি। সুইডেনের স্থানীয় সময় ভোর ২টায় তাঁকে পুরস্কারের বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্ধু বা পরিবারের অভিনন্দনের বার্তা তাঁর কাছে পৌঁছায়নি। ফোনে নেটওয়ার্ক থাকলে তিনি জানতে পারতেন, ইমিউন সিস্টেম গবেষণার জন্য তিনি আরও দুই বিজ্ঞানীর সঙ্গে যৌথভাবে ২০২৫ সালের চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন।
৬৪ বছর বয়সী র্যামসডেল ছুটিতে ফোন বা ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসেন। তিনি মন্টানার একটি হোটেল থেকে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি ভাবিনি যে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল আসতে পারে। নোবেল পুরস্কার জেতার কথা আমার মাথায়ই ছিল না।'
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের কাছে এই ক্যাম্পিং ছিল তাঁদের তিন সপ্তাহের ছুটির প্রায় শেষ পর্যায়। র্যামসডেল ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের দুটি পোষা কুকুরকে নিয়ে গত মাসে সিয়াটল থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
কাজের জগতে, ডক্টর র্যামসডেলের গবেষণা অটোইমিউন রোগ, যেমন বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস এবং ক্রোন’স ডিজিজের চিকিৎসায় উন্নতি এনেছে। আর কাজের বাইরে তিনি ভালোবাসেন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। তিনি বলেন, ‘আমি পাহাড়ে যতটা সম্ভব সময় কাটাই।’
কাজের জগতে র্যামসডেলের গবেষণা আর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ও ক্রোন’স ডিজিজের মতো অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা উন্নত করতে সাহায্য করেছে। আর কাজের বাইরে তিনি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে ভালোবাসেন। বেশিরভাগ সময় তিনি পাহাড়ে কাটান।
সোমবার রাতে মন্টানার লিভিংস্টোন শহরের একটি হোটেলে পৌঁছান র্যামসডেল। সেখানে তিনি নোবেল অ্যাসেম্বলির সেক্রেটারি-জেনারেল টমাস পার্লম্যানের সঙ্গে কথা বলেন। প্রথম ফোন কলের প্রায় ২০ ঘণ্টা পর তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। পার্লম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্বে আছেন। কিন্তু কোনো পুরস্কার বিজয়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে এর আগে তাঁকে এত বেগ পেতে হয়নি।’
র্যামসডেল ক্যাম্পগ্রাউন্ড থেকেই পার্লম্যানকে ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তখন সুইডেনে রাত ১১টা বাজে। তাই পার্লম্যান ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে পরেরদিন সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ছয়টায় তাঁদের কথা হয়।
৭ অক্টোবর র্যামসডেলের পরিকল্পনা ছিল বাকি ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া। এরপর তিনি মন্টানার হোয়াইটফিশ শহরের কাছে তাঁর বাড়িতে পৌঁছাবেন। তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। আমাদের গবেষণার এই স্বীকৃতিতে আমি অত্যন্ত খুশি। আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে এই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছি।’