গ্রামের বাড়ি গেলে সব মামাতো-খালাতো-চাচাতো ভাইবোনেরা একসঙ্গে হই। গল্প করি। অবধারিতভাবেই তাতে উঠে আসে ভূতের গল্প। শোনা যায়, বট গাছের নিচে নাকি ভূত থাকে। রাতে কেউ বট গাছ বা এরকম বড় গাছের নিচে গিয়ে বসলে বা শুলেই হয়েছে। ভূত এসে চেপে ধরে গলা। দমবন্ধ হয়ে আসে। কী ভয়ংকর!
আমার এক বড় খালাতো ভাই এরকম ভয়ংকর সব গল্প শোনান। শুনে অনেকে জড়সড় হয়ে যায়। কিন্তু আসলে কি বট গাছের নিচে ভূত থাকে?
পুরো ঘটনাটি নিতান্ত প্রাকৃতিক। গাছ ঠিক আমাদের মতোই শ্বাস নেয় ও ফেলে। আমরা জানি, মানুষ রাত হোক বা দিন, প্রশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয় অক্সিজেন। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছেড়ে দেয় কার্বন ডাই-অক্সাইড। গাছেদের জন্য বিষয়টা ঠিক এরকম না। একটু ভিন্ন। দিনে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেয় বেশি করে। আর নিশ্বাসের সঙ্গে ছাড়ে অক্সিজেন। কারণ, ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছের এই কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন পড়ে। এটা ব্যবহার করে গাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তথা শক্তি তৈরি করে। তবে রাতের বেলা সালোকসংশ্লেষণ ঘটে না। এ সময় গাছের স্বাভাবিক শ্বসন চলতে থাকে। তাতে প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছেড়ে দেয় বট গাছ বা বড় গাছ।
কেউ যদি রাতের বেলা এরকম বড় গাছের নিচে বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নেয়, এই প্রচুর পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যায় তার শ্বাসনালীতে। ফলে নিশ্বাস আটকে আসে। শরীরে দেখা দেয় অক্সিজেনের ঘাটতি। বিজ্ঞান না জানার কারণে এটিই মুখে মুখে বদলে গেছে। হয়ে উঠেছে বট গাছের অদৃশ্য ভূত।
লেখক: সহসম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা