মাটির নিচ থেকে বিরল উপাদান সংগ্রহ করে দেয় যে গাছ
খনিতে কষ্ট করে মাটি না খুঁড়ে যদি গাছ লাগালেই দামি ধাতু পাওয়া যেত, তাহলে কেমন হতো! কল্পবিজ্ঞানের মতো শোনালেও বিজ্ঞানীরা ঠিক এমনই এক জাদুকরি ফার্ন গাছের সন্ধান পেয়েছেন। এই গাছের নাম Blechnum orientale।
নিরীহ দেখতে গাছটির পাতার ভেতর লুকিয়ে আছে এক অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। এটি মাটির নিচ থেকে রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট বা বিরল মৃত্তিকা মৌল শুষে নিয়ে নিজের শরীরের ভেতর জমা করে রাখে। শুধু জমিয়েই রাখে না, সেগুলোকে রীতিমতো ক্রিস্টাল বা দানা বানিয়ে ফেলে! বিজ্ঞানীরা এই ক্রিস্টালের নাম দিয়েছেন মোনাজাইট।
আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ব্রডব্যান্ড তার, কিংবা বিশাল উইন্ড টারবাইনেও এই বিরল মৃত্তিকা মৌলগুলো ব্যবহৃত হয়। মোট ১৭ ধরনের এমন ধাতু আছে, যা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি অচল। কিন্তু সমস্যা হলো, মাটি থেকে এগুলো বের করা যেমন কঠিন, তেমনই খরচসাপেক্ষ এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।
এখানেই আসে ফাইটোমাইনিং বা গাছ দিয়ে খনির কাজ করানোর ধারণা। বিজ্ঞানীরা জানতেন, কিছু গাছ মাটি থেকে ধাতু শুষে নিতে পারে। কিন্তু Blechnum orientale যা করে দেখাল, তা ইতিহাসে প্রথম!
এই ফার্ন গাছ মাটির নিচ থেকে রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট বা বিরল মৃত্তিকা মৌল শুষে নিয়ে নিজের শরীরের ভেতর জমা করে রাখে। শুধু জমিয়েই রাখে না, সেগুলোকে রীতিমতো ক্রিস্টাল বা দানা বানিয়ে ফেলে!
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, খনিতে এই ধাতুগুলো তৈরি হতে যেখানে মাটির নিচে প্রচণ্ড তাপ আর চাপের দরকার হয়, এই গাছটি তা সাধারণ তাপমাত্রায় দিব্যি নিজের শরীরের ভেতর তৈরি করে ফেলছে!
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, গাছটি নিওডিমিয়াম, ল্যান্থানাম আর সেরিয়ামের মতো দামি সব উপাদান দিয়ে নিজের টিস্যুর ভেতর সাজিয়ে তোলে এক রাসায়নিক বাগান। কোনো ল্যাবরেটরি ছাড়াই সে প্রাকৃতিকভাবে এই ধাতুগুলোকে ক্রিস্টালে রূপান্তর করছে।
চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ভূ-বিজ্ঞানী লিউকিং হে এবং তাঁর দল এই যুগান্তকারী গবেষণাটি প্রকাশ করেছেন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি জার্নালে।
বিজ্ঞানীরা এখন স্বপ্ন দেখছেন, হয়তো ভবিষ্যতে বড় বড় মেশিনের বদলে আমরা বিশাল ফার্ন বাগান করব। আর সেই বাগান থেকেই পরিবেশের ক্ষতি না করে সংগ্রহ করা যাবে দামি সব খনিজ সম্পদ। টেকনোলজি আর প্রকৃতির এই অদ্ভুত মিতালি হয়তো বদলে দেবে আমাদের গ্রিন এনার্জির ভবিষ্যৎ!