শীতে ঠোঁট ফাটে কেন

শীতে ঠোঁট ফেটে যায়ছবি : প্রতীকী ছবি

শীত এলেই ঠোঁট ফেটে যায়। ফাটা ঠোঁটে না হাসা যায় ঠিক করে, না খাওয়াদাওয়া করা যায় ইচ্ছেমতো। কী ঝামেলা! বাঁচতে অনেকে একটু পরপর ভ্যাসলিন বা লিপবাম দেন। কার ভালো লাগে এসব? শীতকাল পছন্দ হলেও তাই শীতের এসব ‘সাইড এফেক্ট’ আমাদের বিরক্ত করে। কিন্তু ঘটনাটা কী?

যুক্তরাজ্যের বুপা হেলথ ক্লিনিকের সহযোগী ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর লুক পাওয়েল। তাঁর ভাষ্যেই শোনা যাক। ‘আপনার মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁটের চামড়ার ওপরের সুরক্ষা আবরণী অনেক পাতলা। ফলে এ অংশটা সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে।’

মানে, শুকিয়ে যায়। কেন? বিষয়টার সঙ্গে বাতাসের আদ্রতা জড়িত। শীতকালে বাতাসের আদ্রতা, অর্থাৎ জলীয় বাষ্পের পরিমাণ গরম কালের অনেক কমে যায়। ফলে বাতাস শুষ্ক থাকে। সে জন্য শীতের বাতাসের জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতাও বেড়ে যায় অনেক। তাই ত্বক হোক আর ভেজা কাপড় হোক—এগুলো থেকে বাতাস সহজে ও দ্রুত পানি শোষণ করে নেয়।

আপনার মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁটের চামড়ার ওপরের সুরক্ষা আবরণী অনেক পাতলা। ফলে এ অংশটা সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে
—লুক পাওয়েল, সহযোগী ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর, বুপা হেলথ ক্লিনিক, যুক্তরাজ্য

ঠোঁটের ওপরের যে উঁচু রেখার মতো অংশটা ঠোঁটের টিস্যুগুলোকে মুখের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে, ইংরেজিতে তার নাম ‘ভার্মিলিওন বর্ডার’। এতে শুধু তিন থেকে পাঁচটি টিস্যুর স্তর থাকে। কোনোরকম হেয়ার ফলিকল (ত্বকের যে অংশ থেকে চুল গজায়) থাকে না। হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এই হেয়ার ফলিকল থাকে বলেই রোম হয়। ঠোঁটের ওপরেও থাকে, তাই গোঁফ হয়। কিন্তু ঠোঁটে এই ফলিকল ও ঘামগ্রন্থি থাকে না।

লুক পাওয়েলের ভাষ্যে, ‘আপনার মুখের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঠোঁটের ত্বকের স্তরগুলো সর্বোচ্চ ছয় ভাগ পাতলা হতে পারে। তা ছাড়া এতে তেলগ্রন্থিও খুব বেশি থাকে না দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায়।’

ফলে শীতের শুষ্কতর বাতাসে ঠোঁট দ্রুত ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। ফেটে যেতে পারে, এমনকি রক্তও বেরোতে পারে ফেটে গিয়ে।

অনেকে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নেন লালা দিয়ে। কিন্তু এর ফলে ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। কীভাবে?

ঠোঁটের ওপরের প্রাকৃতিক তৈলাক্ত সুরক্ষা আবরণী ভেঙে ফেলে লালার এসব বিপাকীয় এনজাইম। দীর্ঘদিন এমন করলে ঠোঁটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে
আরও পড়ুন

লালায় অ্যামাইলেজ ও লাইপেজের মতো বিপাকীয় এনজাইম থাকে। অ্যামাইলেজ স্টার্চকে ভেঙে চিনিতে রূপান্তর করে। এদিকে লাইপেজ তেল বা চর্বিকে ভেঙে ফেলে। ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে চেটে লালা দিয়ে ভিজিয়ে নিলে, ঠোঁটের ওপরের প্রাকৃতিক তৈলাক্ত সুরক্ষা আবরণী ভেঙে ফেলে লালার এসব বিপাকীয় এনজাইম। দীর্ঘদিন এমন করলে ঠোঁটের ত্বক ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।

শুষ্ক ঠোঁট শুধু সামান্য সমস্যা নয়। অ্যাক্টা ক্লিনিকা ক্রোয়েটিকা জার্নালে ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, এতে ঠোঁটে স্ট্যাফিলোকক্কাস অরাসের (Staphylococcus aureus) মতো ব্যাকটেরিয়া কিংবা ক্যান্ডিডা অ্যালবিকানসের (Candida albicans) মতো ঈস্টের (একধরনের ছত্রাক) আক্রমণে প্রদাহ হতে পারে।

অর্থাৎ শুষ্ক ঠোঁট বেশি ফাটলে, ভ্যাসলিন বা লিপবাম দিয়েও কাজ না হলে, রক্ত বেরোলে বা জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, উইকিপিডিয়া, অ্যাক্টা ক্লিনিকা ক্রোয়েটিকা জার্নাল