জীবনের রহস্যভেদ করা জেমস ওয়াটসন আর বেঁচে নেই
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যারা সবকিছু বদলে দেন। জেমস ওয়াটসন ঠিক তেমনই একজন ছিলেন। তিনিই আমাদের প্রথমবার চিনিয়েছিলেন, ‘জীবন’ দেখতে কেমন। ডিএনএর প্যাঁচানো সিড়ির মতো দেখতে গঠনের অন্যতম আবিষ্কারক, জেমস ডিউই ওয়াটসন ৯৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
জেমস ওয়াটসনের গল্পটা শুরু থেকেই ছিল বিস্ময়কর। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫১ সালে তিনি ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। সেখানেই দেখা হয় ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে।
এই দুই তরুণ গবেষক তখন বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ধাঁধাটির সমাধানে নেমেছিলেন—আমাদের বংশগতির তথ্য বা ডিএনএ ঠিক কীসের মধ্যে বা কীভাবে সাজানো থাকে?
১৯৫৩ সালে ওয়াটসন এবং ক্রিক নেচার জার্নালে তাদের যুগান্তকারী গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন। তাঁরা দেখালেন, ডিএনএ দেখতে একটি প্যাঁচানো সিঁড়ির মতো। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানের এক নতুন যুগের সূচনা করে। এই এক আবিষ্কারই আমাদের দেখিয়ে দিল, কীভাবে বংশগতির তথ্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে হুবহু কপি হয়।
এই আবিষ্কারের জন্য ওয়াটসন, ক্রিক এবং মরিস উইলকিনসকে ১৯৬২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
কিন্তু এই গল্পের একজন আড়ালের নায়িকা ছিলেন। তাঁর কথা সেই বিখ্যাত গবেষণাপত্রে উল্লেখই ছিল না। তিনি হলেন রসায়নবিদ রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন। ওয়াটসন আর ক্রিকের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি মূলত দাঁড়িয়ে ছিল রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের তোলা এক্স-রে ডিফ্র্যাকশন ডেটা বা ছবির ওপর। তার সেই ছবিগুলোই ছিল আসল চাবিকাঠি। কিন্তু ফ্র্যাঙ্কলিন তাঁর এই অবদানের জন্য সঠিক স্বীকৃতি পান অনেক পরে। ওয়াটসন নিজেও ফ্র্যাঙ্কলিনের অবদানকে খাটো করে দেখানোর জন্য সারাজীবন সমালোচিত হয়েছেন।
নোবেল জয়ের পর ওয়াটসনের খ্যাতি আরও বাড়ে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর হন এবং নিজের পরিশ্রমে একে জেনেটিক্স গবেষণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করেন।
এমনকি তিনি বিখ্যাত হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের প্রধান হিসেবেও দুই বছর কাজ করেছেন। তবে জিনের পেটেন্ট করার চেষ্টার প্রতিবাদে তিনি সেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
এত কিছুর পরেও ওয়াটসন নিজেকে নিয়ে কী মনে করতেন? তাঁর সেরা কাজ কি ছিল? ২০০৭ সালে তিনি নিউ সায়েন্টিস্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এক অদ্ভুত কথা। তিনি মনে করতেন, তাঁর লেখা বইগুলোই ছিল তাঁর জীবনের সেরা কাজ। তাঁর লেখা অন্যতম সেরা বই দ্য ডাবল হেলিক্স।
তাঁর যুক্তি ছিল, ‘ডাবল হেলিক্সের গঠন আজ হোক বা কাল, কেউ না কেউ ঠিকই আবিষ্কার করত। আমি হয়তো কাজটা একটু তাড়াতাড়ি করেছি। কিন্তু ফ্রান্সিস ক্রিক কখনোই দ্য ডাবল হেলিক্স লিখতেন না, বা অন্য বিজ্ঞানীরাও না।’
তিনি আশা করতেন, তাঁর লেখা পড়ে তরুণরা বিজ্ঞানে আসতে উৎসাহিত হবে।
