আঙুলের ছাপ বা চেহারার মতোই অন্যন্য মানুষের কন্ঠস্বর। ফোনের অপরপ্রান্তে চেনা মানুষের গলার স্বর শুনে মানুষটিকে চিনতে পারি এ কারণেই। আমাদের ফোনে গুগল এসিস্টেন্ট বা সিরি-র মতো ভয়েস এসিস্টেন্ট প্রযুক্তি থাকে, সেটা আলাদা আলাদা মানুষের কন্ঠস্বর মনে রাখতে পারে।
তবে আঙুলের ছাপ বা চেহারা থেকে নির্দিষ্ট মানুষকে শনাক্ত করা যেমন সহজ, কন্ঠস্বরের বেলায় তেমন নয়। এজন্য বায়ো ইনফরমেটিক্স-এ এখনও কন্ঠস্বরের ব্যবহার তেমন দেখা যায় না। কন্ঠস্বরের অনন্যতা শনাক্ত একটু জটিল হলেও, এটা যে সব মানুষের আলাদা, তাতে বিজ্ঞানীদের কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কেন কন্ঠস্বর আলাদা হয়?
তবে আঙুলের ছাপ বা চেহারা থেকে নির্দিষ্ট মানুষকে শনাক্ত করা যেমন সহজ, কন্ঠস্বরের বেলায় তেমন নয়। এজন্য বায়ো ইনফরমেটিক্স-এ এখনও কন্ঠস্বরের ব্যবহার তেমন দেখা যায় না।
আমাদের স্বর তৈরি করার জন্য বেশ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করে। শুরুটা হয় ফুসফুস থেকে। ফুসফুস থেকে প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীতে যে বায়ুপ্রবাহ তৈরি হয়, তা ল্যারিংসে বা স্বরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। এ সময় পেশির মাধ্যমে ভোকাল কর্ড নিয়ন্ত্রণ করে আমরা শব্দ তৈরি করি।
ভোকাল কর্ড স্বরযন্ত্রের ভেতরে পাতলা পর্দার মতো একটি অংশ। এর ওপর দিয়ে যখন বাতাস প্রবাহিত হয়, তখন ভোকাল কর্ডে কম্পনের সৃষ্টি হয়। কিছু প্রক্রিয়ার পর এই কম্পনকে আমরা শব্দ হিসেবে শুনি। কম্পনের কম্পাঙ্ক যত বেশি হবে, স্বর তত তীক্ষ্ম হবে। ভোকাল কর্ডে উৎপন্ন কম্পন বাতাসের সঙ্গে কন্ঠনালী, নাক ও মুখ পার হয়ে অবশেষে বাইরে আসে। তখন আমরা কম্পনটাকে শুনি শব্দ হিসেবে।
শব্দ তৈরির মূল কারিগরের ভূমিকা পালন করে ভোকাল কর্ড। তাই ভোকাল কর্ডের গঠন ও এর কম্পনের ওপরে মূলত কন্ঠস্বরের অনন্যতা নির্ভর করে। আর ভোকাল কর্ডের গঠন নির্ভর করে ডিএনএ-র ওপর। প্রতিটা মানুষের ডিএনএ যেহেতু ভিন্ন, তাই ভোকাল কর্ডের গঠনও পুরোপুরি এক হয় না। প্রতিটা মানুষের ভোকাল কর্ডের স্বাভাবিক কম্পনে কিছুটা ভিন্নতা থাকে এ কারণে।
তবে কন্ঠস্বর অনন্য হওয়ার পেছনে ভোকাল কর্ডের পাশাপাশি কন্ঠনালী, নাক ও মুখের গঠনও কিছুটা ভূমিকা রাখে। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিটা মানুষের কন্ঠস্বর হয় অনন্য।
অন্যান্য অঙ্গের মতোই ভোকাল কর্ডের গঠন বা আকার কিন্তু এক থাকে না সবসময়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর আকারে পরিবর্তন আসে। লিঙ্গভেদেও ভোকাল কর্ডের গঠন ভিন্ন হয়। শিশুদের ভোকাল কর্ড অনেক পাতলা থাকে। এ কারণে কম্পন বেশি হয়। অর্থাৎ স্বরের তীক্ষ্মতা বেশি হয়। টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের ভোকাল কর্ড সাধারণত লম্বা ও পুরু হয়। ফলে, কন্ঠস্বর হয় ভারী ও গম্ভীর। নারীদের বেলায় ভোকাল কর্ডের পুরুত্বের পরিবর্তন হয় না বললেই চলে। এজন্য নারী ও শিশুদের কন্ঠস্বরের মধ্য মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
আবার সাময়িক কোনো কারণেও ভোকাল কর্ডের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হতে পারে। যেমন ঠান্ডা লাগলে ভাইরাসের সংক্রমণে ভোকাল কর্ড অনেকসময় ফুলে যায়, ফলে স্বর ভারী হয়। আবার অনেক সময় চিৎকারের ফলে পেশিতে টান পড়ে, ভোকাল কর্ড ঠিকমতো কম্পিত হয় না। স্বর ভেঙে যায়। এছাড়া আবেগের কারণেও পেশি ঠিকমতো কাজ করে না, গলার স্বর তখন বদলে যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।