শিশু মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে। গর্ভ জায়গাটি পৃথিবীর মতো নয়। সেখানে উষ্ণ, তরল পরিবেশ থাকে শিশুর চারপাশে।

শিশুর জন্ম হলো, আর অমনি গলা ফাটিয়ে চিৎকার—কান্না। কোনো কারণে না কাঁদলে ডাক্তার শিশুকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিঠে হালকা চাপড় দেন বা মালিশ করে দেন। কান্নার শব্দ না শোনা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। যখনই কান্নার শব্দ শোনা যায়, আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় চারপাশের সবার মধ্যে। টিভি বা সিনেমায় এ দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু শিশুর জন্মের সঙ্গে কান্নার সম্পর্ক কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মের পরপরই কাঁদা বাচ্চার সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কান্না শুনে বোঝা যায়, শিশু ঠিকমতো ফুসফুস ব্যবহার করে শ্বাস নিচ্ছে। কোনো অসুবিধা নেই। এর মানে এই না যে কোনো শিশু কান্না না করলেই মহাবিপদ। শিশুর জন্মের সঙ্গে কান্নার সম্পর্কটা কী, তা বুঝতে হলে জন্মের একটু আগে থেকে শুরু করতে হবে।

শিশু মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে। গর্ভ জায়গাটি পৃথিবীর মতো নয়। সেখানে উষ্ণ, তরল পরিবেশ থাকে শিশুর চারপাশে। খাবার বা বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিয়েও নিজের কোনো ভাবনা নেই তার। নেই অক্সিজেনের জন্য কোনো চিন্তা। সবই সে পায় মায়ের শরীর থেকে।

গর্ভে শিশুর আলাদা করে শ্বাস নেওয়ার জন্য কোনো কাজ করতে হয় না। শিশুর নবগঠিত ফুসফুস তখন থাকে তরলে পূর্ণ। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।

মায়ের গর্ভে শিশুর দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন আসে প্লাসেন্টা বা অমরা ও নাড়ির মাধ্যমে। আমরা এই অমরাকে সাধারণত গর্ভফুল হিসাবে চিনি। এটি গর্ভাশয়ের ভেতরেই থাকে। এখান থেকেই মায়ের দেহে তৈরি হয় ডিম্বক। বিশেষ এই অঙ্গটি মায়ের দেহ থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত ফিল্টার করে নাড়ির মাধ্যমে শিশুর দেহে পাঠায়।

অর্থাৎ গর্ভে শিশুর আলাদা করে শ্বাস নেওয়ার জন্য কোনো কাজ করতে হয় না। শিশুর নবগঠিত ফুসফুস তখন থাকে তরলে পূর্ণ। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করেই শিশুটি নিজেকে আবিষ্কার করে ঠান্ডা, শুষ্ক ও উজ্জ্বল পরিবেশে। এই পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রথমবারের মতো তার শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। স্বাভাবিক জন্মের সময় শিশু একটা চাপের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসে। ফলে ফুসফুসে থাকা তরল বেরিয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই। খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে প্রথমবারের মতো শ্বাস নেয়। এই শ্বাস নেওয়ার সময়েই ফুঁপিয়ে বা কেঁদে ওঠে শিশু। এই কান্না শুনে খুশি হয়ে ওঠেন সবাই। কারণ, কান্নার অর্থ শিশুটি ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে। এজন্য আর বাড়তি চেষ্টার দরকার নেই। কান্নার পেছনে নতুন পরিবেশ ও শরীরে নতুন পরিবর্তন নিয়ে বাচ্চার অনুভূতিও কাজ করে। 

তবে সব নবজাতক কিন্তু কাঁদে না। শিশু না কাঁদলে তা দুশ্চিন্তার বিষয়, সত্যি। তবে সব ক্ষেত্রে নয়।

আরও পড়ুন

আমাদের জিহ্বা কী দিয়ে তৈরি?

অনেকসময় নবজাতক একেবারেই কাঁদে না। বিশেষ করে যেসব শিশু পানিতে জন্মগ্রহণ করে। ইংরেজিতে এ ধরনের জন্মগ্রহণকে বলা হয় ওয়াটার বার্থ।

জন্মের পর শিশুর কান্না না করার বেশ কিছু কারণ আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভে শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে অনেক সময় জন্মের পর স্বাভাবিকভাবে কাঁদতে পারে না। আবার জন্মের পর কান্না না করা শিশুর দুর্বল হৃৎপিণ্ডের লক্ষণও হতে পারে। 

অনেকসময় শিশুর কাঁদতে দেরি হয়। সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশু স্বাভাবিক জন্মের মতো প্রয়োজনীয় চাপ অনুভব করে না। কারণ, এ সময় মায়ের পেট অপারেশন করে কাটা হয়। ডাক্তার গর্ভ থেকে সোজা শিশুটিকে তুলে নেন। পরে আবার সেলাই করে দেওয়া হয় পেটের কাটা অংশটি। ফলে শিশুর ফুসফুসে থাকা তরলটুকু বের হয় না। তখন শিশুকে শ্বাস নিতে সাহায্য করেন ডাক্তাররা।

আবার অনেকসময় নবজাতক একেবারেই কাঁদে না। বিশেষ করে যেসব শিশু পানিতে জন্মগ্রহণ করে। ইংরেজিতে এ ধরনের জন্মগ্রহণকে বলা হয় ওয়াটার বার্থ। এক্ষেত্রে জন্মের সময় শিশুর ও মাঝের চারপাশে থাকে উষ্ণ পানি। ফলে, শিশু বুঝতেই পারে না তার জন্ম হয়ে গেছে। কারণ, পৃথিবীতে জন্মের পর সে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস বা পরিবেশের পরিবর্তন অনুভব করে না। মায়ের কোলে থেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া শুরু করে। ফলে কান্না ছাড়াই শুরু হয় তার পৃথিবীতে নতুন পথচলা।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: দ্য কনভারসেশন, উইকিপিডিয়া