জীবজগতে টিকে থেকে বংশবিস্তার করা ব্যাকটেরিয়ার সহজাত জৈবিক নীতি। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, টিকে থাকার প্রয়োজনে ব্যাকটেরিয়া নিজের সঙ্গী ব্যাকটেরিয়াকে হত্যার মতো নিষ্ঠুর পথও বেছে নেয়।
ব্যাকটেরিয়া সাধারণত আশপাশের পরিবেশ থেকে পুষ্টি শুষে নেয়। কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া একে অপরকে হত্যা করে টিকে থাকে। তবে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে একটি নতুন চিত্র সামনে এসেছে। দেখা গেছে, চরম সংকটে পড়লে নিরীহ ব্যাকটেরিয়াও হিংস্র হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অণুজীববিজ্ঞানী গ্লেন ডি’সুজার মতে, ‘ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকার জন্য সচেতনভাবেই নিজস্ব প্রজাতিকে হত্যা করে।’
ডি’সুজা ও তাঁর গবেষক দল ব্যাকটেরিয়ার একটি বিশেষ পদ্ধতির ওপর আলোকপাত করেছেন। এই পদ্ধতির নাম টাইপ সিক্স সিক্রেশন সিস্টেম বা সংক্ষেপে T6SS। এই পদ্ধতি ছোট হারপুনের মতো কাজ করে। এর মাধ্যমে একটি ব্যাকটেরিয়া অন্য ব্যাকটেরিয়ার কোষে ও অণুজীবে সুচালো বিষাক্ত অস্ত্র ছুঁড়ে দেয়। এতে লক্ষ্যবস্তুর ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়৷
এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা অণুজীবদের খাদ্যচক্রের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পারেন। এটি ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারেও সাহায্য করতে পারে। সহায়ক হতে পারে নতুন ওষুধ ডিজাইনেও।
এর আগে, বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো ব্যাক্টেরিয়া T6SS শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাকটেরিয়াদের মেরে নিজেদের জন্য স্থান তৈরির কাজে ব্যবহার করে৷ কিন্তু টাইমল্যাপস ইমেজিং ও নানা জেনেটিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা চমকে দেয়ার মতো ব্যাপার আবিষ্কার করেছেন। পুষ্টির ঘাটতি হলে ব্যাক্টেরিয়া আশপাশের অন্য ব্যাকটেরিয়াদের ওপর আক্রমণ করে। তারা শিকারের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। আক্রান্ত ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে মারা যায়৷ তখন হামলাকারী ব্যাকটেরিয়া তাদের দেহ থেকে পুষ্টি শুষে নেয়। এই আচরণটি দুর্ঘটনাজনিত নয়, বরং ভীষণভাবে পরিকল্পিত। ডি’সুজার মতে, ‘এটি কেবল পরীক্ষাগারে নয় বরং সমুদ্র থেকে শুরু করে মানুষের অন্ত্র—সবখানেই ঘটছে।’
এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা অণুজীবদের খাদ্যচক্রের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পারেন। এটি ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারেও সাহায্য করতে পারে। সহায়ক হতে পারে নতুন ওষুধ ডিজাইনেও।
শুধু যে মানুষের শরীরের ব্যাকটেরিয়া আছে বলেই এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। বরং পৃথিবীর কার্বন চক্র নিয়ন্ত্রণে অনেক সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এদের মধ্যে কেছু ব্যাকটেরিয়া T6SS ব্যবহার করে শৈবাল ভেঙে কার্বন পুনর্ব্যবহারকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করছে কি না, তাও জানা যাবে। ফলে পুরো গ্রহের ইকোসিস্টেমে কী প্রভাব পড়ছে, তা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে এসব ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে। পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়া কতটা বুদ্ধিদীপ্ত ও অভিযোজনে পারদর্শী, তা এই গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।