আমাদের পেটে গুড়গুড় শব্দ হয় কেন

অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে শরীর মনে করিয়ে দেয় তার খাবারের দরকার। তখন আবার পেট জোরে শব্দ করে জানিয়ে দেয়, এবার খেতে বসুন। কিন্তু কেন আমাদের পেট এমন আওয়াজ করে? পেটে এই আওয়াজ কী শুধু ক্ষুধার কারণেই হয়, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক টিফানি ওয়েয়ার বলেন, ‘পেটের এমন শব্দ করা খুব সাধারণ ব্যাপার। পেটে যে গুড়গুড় শব্দ হয়, তা পেরিস্টালসিস নামে এক প্রক্রিয়ার কারণে হয়।’

আমরা যখন খাবার খাই, তখন সেগুলো নানা ধরনের এনজাইমের প্রভাবে ভেঙে সরল খাদ্য উপাদান হিসেবে শোষিত হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন অন্ত্রের নালীগুলো একসঙ্গে সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। ইংরেজিতে একে বলে পেরিস্টালসিস। এর মাধ্যমেই খাবার প্রক্রিয়া হয়ে মুখগহ্বর থেকে ধীরে ধীরে আমাদের মলদ্বারে পৌঁছায়। ক্রমাগত পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমেই হজমতন্ত্রের ভেতরের উপাদানগুলো—খাবার, তরল, গ্যাস—এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এগিয়ে যায়। পেটে যে গুড়গুড় আওয়াজ হয়, তা এই পেরিস্টালসিসের সময় গ্যাস ও তরলের নড়াচড়ার কারণেই হয়।

আরও পড়ুন

পেটে এই গুড়গুড় শব্দকে বোরবোরিগমিও বলা হয়। শুধু খালি পেটে নয়, ভরা পেটেও এমন শব্দ হতে পারে। অধ্যাপক টিফানি এ সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষুধা লাগলে বা পেট ভরা থাকলেও পেটে গুড়গুড় শব্দ হতে পারে। কারণ, কিছু হরমোন আমাদের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজম ও পেরিস্টালসিস প্রক্রিয়া শুরু হয়।’

পেটে খাবারের না থাকলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সংকুচিত হতে শুরু করে। এতে পাকস্থলী বা অন্ত্রে জমে থাকা অতিরিক্ত তরল, কঠিন পদার্থ অথবা জীবাণুমুক্ত অবশিষ্ট পরিষ্কার করার জন্য কাজ করে।

খাবার খাওয়ার পরপর এই হজম প্রক্রিয়া বেশি সক্রিয় থাকে। পেটে প্রতি মিনিটে প্রায় তিনটি ঢেউয়ের মতো নড়াচড়া হয় এবং ছোট অন্ত্রে প্রায় ১২টি এমন ঢেউ হয়। খাবার যখন হজমতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তা ভালোভাবে মেশানোর জন্য এবং সহজে হজম করার জন্য নড়াচাড়া করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন খাবার তরল এবং গ্যাসের মিশ্রণে শব্দ তৈরি হয়, যা আমরা পেটের ডাক বা গুড়গুড় শব্দ হিসেবে শুনি।

অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, এত নড়াচড়া হলে আমরা টের পাই না কেন। আসলে, আমাদের হজমতন্ত্রের ভেতরের এই পেশিগুলোর নড়াচড়া সাধারণত আমরা টের পাই না। কারণ, যখন পেট ও অন্ত্রে খাবার বা তরল থাকে তখন সেগুলো ভেতরের শব্দগুলোকে চাপা দিয়ে রাখে। কিন্তু যখন হজমতন্ত্র খালি থাকে, তখন এই নড়াচড়াগুলো অনেক বেশি শব্দ করে। এ কারণেই যখন কেউ ক্ষুধার্ত থাকে, তখন পেটের এই আওয়াজগুলো স্পষ্ট শোনা যায়। আর তাই আমরা সাধারণত পেটের এই ডাককে ক্ষুধার সঙ্গেই জড়িয়ে ফেলি।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের মতে, যখন পেট কয়েক ঘণ্টা খালি থাকে, তখন এটি ঘ্রেলিন নামে একটি হরমোন নিঃসরণ করতে শুরু করে। এই হরমোন মস্তিষ্কে পৌঁছালে ক্ষুধার অনুভূতি জাগে এবং পরিপাকতন্ত্রে পেরিস্টালসিসকে উদ্দীপিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রেরের পেনসিলভানিয়ার লেক এরি কলেজ অফ অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিনের ফিজিওলজির অধ্যাপক মার্ক এ. ডব্লিউ. অ্যান্ড্রুজ জানান, ‘পেটে খাবারের না থাকলে পাকস্থলী ও অন্ত্র সংকুচিত হতে শুরু করে। এতে পাকস্থলী বা অন্ত্রে জমে থাকা অতিরিক্ত তরল, কঠিন পদার্থ অথবা জীবাণুমুক্ত অবশিষ্ট পরিষ্কার করার জন্য কাজ করে।’

আমরা যখন খাবার খাই, তখন সেগুলো নানা ধরনের এনজাইমের প্রভাবে ভেঙে সরল খাদ্য উপাদান হিসেবে শোষিত হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন অন্ত্রের নালীগুলো একসঙ্গে সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে।

এই পেরিস্টালসিস পরিপাকনালী খাবারে পূর্ণ থাকলে অন্য সময়ের থেকে অনেক ধীরগতিতে হয়। কারণ, এটি প্রতি ২০ মিনিটে মাত্র একবার ঘটে। তবে, যেহেতু এই সময়ে পরিপাকনালীতে কঠিন পদার্থের চেয়ে বাতাস বেশি থাকে, তাই পরিপাকনালী খালি থাকলে প্রায়শই জোরে আওয়াজ শোনা যায়।

মাঝেমধ্যে পেটের গুড়গুড় শব্দ আসলে হজমের সমস্যার কারণে হয়। খাবার যদি ঠিকমতো হজম না হয়, তাহলে পেটে অনেক গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাসই পেটের ভেতরের নড়াচড়ার শব্দকে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, ডায়রিয়া হলে অন্ত্র খুব দ্রুত নড়াচড়া করে নিজেকে পরিষ্কার করতে চায়। এই দ্রুত নড়াচড়ার কারণেও পেটে অনেক শব্দ হতে পারে। তবে, পেটের এই গুড়গুড় শব্দ আমাদের হজমতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজ করার একটি সাধারণ ব্যাপার মাত্র।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: লাইভ সায়েন্স, সায়েন্টিফিক আমেরিকান, হেলথ লাইন

আরও পড়ুন