যে কারণে আর কোনো প্রাণীর সঙ্গে মিল নেই অক্টোপাসের

অক্টোপাস অত্যান্ত বুদ্ধিমানমিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

আট পা, নীল রক্ত, তিন হৃৎপিণ্ড। শব্দগুলো শুনতে অদ্ভুত লাগলেও পৃথিবীতে এমন রহস্যময় প্রাণী রয়েছে যেগুলোর সঙ্গে এই বিশেষণগুলো মিলে যায়। গভীর সমুদ্রে বিচরণশীল এই প্রাণীর নাম অক্টোপাস। দেখতে যেমন অদ্ভুত, আচরণও তেমন বিস্ময়কর। রহস্যময় এই প্রাণী সম্পর্কে আরও কিছু মজার তথ্য জানা যাক।

১. অক্টোপাস অত্যান্ত বুদ্ধিমান 

অক্টোপাস খুবই বুদ্ধিমান প্রাণী। এরা পরিচিত জায়গা, বস্তু, এমনকি মানুষকেও মনে রাখতে পারে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিশেষ কিছু প্রজাতির অক্টোপাস সমাধান করতে পারে পাজল। এমনকি জার বা বৈয়ামের ঢাকনা খুলেও খাবার বের করে খেতে পারে।

অক্টোপাসের শরীরে কোনো হাড় নেই
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি

২. কিছু অক্টোপাসের ওজন ২০০ কেজির বেশি

সাধারণত অক্টোপাসের আকৃতি খুব ছোট। এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৪.৫ ফুট হয়। ওজন হতে পারে প্রায় ১০ কেজি। তবে জায়ান্ট প্যাসিফিক অক্টোপাস সাধারণ অক্টোপাসের চেয়ে অনেক বড় হয়। এই প্রজাতির অক্টোপাস লম্বায় প্রায় ৩০ ফুট এবং ভরে প্রায় ২৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এদেরকে ডলফিনি অক্টোপাসও বলা হয়। সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরে এ প্রজাতির অক্টোপাস দেখা যায়।

৩. অক্টোপাসের শরীরে কোনো হাড় নেই

অক্টোপাসের শরীরে হার নেই বলে শরীর খুবই নমনীয় হয়। ফলে এরা শরীরকে যেকোনো আকারে সংকুচিত করতে পারে। এমনকি  খুব সরু ফাঁক দিয়েও চলে যেতে পারে অনায়াসে।

আরও পড়ুন

৪. নিজেকে বাঁচাতে অক্টোপাস কালি ছুড়ে মারে

অক্টোপাসের আত্মরক্ষার কৌশল বেশ অদ্ভুত। এরা কালি ছুঁড়ে নিজেদের রক্ষা করে। কোনো শত্রু অক্টোপাসকে আক্রমণ করলে এরা কালো কালি ছুঁড়ে মারে। এতে শত্রু বিভ্রান্ত হয়। শত্রুর ঘ্রাণশক্তিও কিছুক্ষণের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। এই সুযোগে অক্টোপাসটি পালিয়ে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে বেশি বিপদে পরলে এরা নিজের বাহু কেটে ফেলে। কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসের মধ্যে কাটা বাহু আবার নতুন করে গজায়। পুনরায় গজানো নতুন বাহুটি আগের মতোই শক্তিশালী ও কার্যকর হয়।

৫. অক্টোপাস রাতে শিকার করে

অক্টোপাসকে নিশাচর প্রাণীও বলা হয়। কারণ, দিনে এরা সাধারণত  সমুদ্রের নিচে গুহা বা পাথরের খাঁজে লুকিয়ে থাকে। শিকার করে রাতে। চলাফেরার জন্য এদের ইন্দ্রিয়গুলো তীক্ষ্ম ও সজাগ থাকে। এদের দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তিও বেশ প্রবল।

ডিম পাড়ার কয়েক মাসের মধ্পযে মারা যায় অক্টোপাস
মিডজার্নির সাহায্যে তৈরি
আরও পড়ুন

৬. ডিম পেড়ে মারা যায় অক্টোপাস

অক্টোপাসের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত। প্রজাতিভেদে অক্টোপাসগুলো ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে জায়ান্ট প্যাসিফিক প্রজাতির অক্টোপাসগুলো প্রায় ৩-৫ বছরের মতো বাঁচে। অক্টোপাসের জীবনকাল এদের বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। পুরুষ অক্টোপাস স্ত্রী অক্টোপাসের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কিছু মাসের মধ্যে মারা যায়। আর স্ত্রী অক্টোপাস মারা যায় ডিম ফোটার কয়েক মাসের মাধ্যে। সাধারণত প্রজননের পর স্ত্রী অক্টোপাসের পরিপাকতন্ত্র অকার্যকর হয়ে যায়। একারণেই ওদের মৃত্যু হয়। কারণ, পরিপাকতন্ত্র অকার্যকর হয়ে গেলে এরা খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেয় এবং ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যায়।

 

৭. অক্টোপাস রং বদলে শিকারিকে ধোঁকা দিতে পারে

অক্টোপাস গিরগিটির মতো নিজের দেহের রং পরিবর্তন করতে পারে। অক্টোপাসের ত্বকের নিচে ক্রোমাটোফোর নামে এক ধরনের কোষ থাকে। ক্রোমাটোফোর হলো রং উৎপাদনকারী কোষ। এই কোষ প্রাণীর দেহে রং সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রং পরিবর্তন করে এরা দ্রুত লুকাতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিডস