অক্টোপাস রং বদলায় কীভাবে

আজ বিশ্ব অক্টোপাস দিবস। প্রতিবছর ৮ অক্টোবর দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। বিস্ময়কর এই প্রাণিটি নানা রহস্যে ভরা। শারীরিক কসরত এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে বুদ্ধিমত্তায় এর জুড়ি মেলা ভার। অক্টোপাসের শরীরে আছে তিনটি হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ড ত্রয় অক্টোপাসের দেহে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাম্প করছে তামা সমৃদ্ধ নীলরক্ত। শত্রুর চোখে ধুলো দিতে, অথবা শিকারকে বোকা বানাতে এরা নিমিষেই দেহের রঙ বদলে পারে। অক্টোপাসের রঙ পরিবর্তন নিয়েই আজকের আলোচনা।

মলাস্কা পর্বের সেলাফড শ্রেণির প্রাণী অক্টোপাস। অক্টোপাস ছাড়াও এই শ্রেণির প্রাণীর মধ্যে আছে স্কুইড, ক্যাটলফিসের মতো প্রাণী। এরা প্রত্যেকেই প্রয়োজনে নিজেদের রং বদলাতে পারে। নিরাপত্তা ও খাবার সংগ্রহের কাজে দেহের রং পরিবর্তনের কৌশলটি দারুণভাবে কাজে লাগায় অক্টোপাস।

এদের দেহে আছে বিশেষ ধরনের কোষ। যাকে বলা হয় ক্রোমাটোফর। প্রতিটি ক্রোমাটোফর কোষে থাকে সাইটোইলাস্টিক স্যাকুলাস নামে একটি স্থিতিস্থাপক রঞ্জক থলি। থলিগুলো লাল, হলুদ, বাদামী এবং কালো রঞ্জক কণা দিয়ে পূর্ণ থাকে। দেহকোষের চারপাশে থাকা পেশিগুলো শক্ত হয়ে গেলে, রঞ্জক থলিগুলো প্রসারিত হয়। ফলে ত্বকের বহিঃরাবরণ হয়ে যায় স্বচ্ছ। ফুটে ওঠে রং। পেশি স্বাভাবিক হলে, ত্বকের আবরণ স্বাভাবিক হয়। কমে যায় রঙের উপস্থিতি। পেশির সংকোচন প্রসারণের উপর রঙের ধরণ নির্ভর করে।

সেলাফড ছাড়াও ডাঙার সরীসৃপ ও অনেক উভচর প্রাণী দেহের রঙ বদলাতে পারে। তবে সেলাফড শ্রেণির প্রাণীদের ব্যপারটা অন্যদের চেয়ে আলাদা। এদের প্রতিটি কোষ স্নায়ুর সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে এদের প্রতিটা কোষের সংকোচন-প্রসারণ আলাদা স্নায়ু দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী, পরিবেশের রং দেখে এদের মস্তিস্ক ক্রোমাটোফরে সংকেত পাঠায়। তখন সেগুলো প্রয়োজনমতো প্রসারিত হয়। রং বদলে যায়।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, টু-স্পট প্রজাতির অক্টোপাস মস্তিষ্ক ছাড়াও আলো অনুভব করতে পারে। এদের দেহে থাকা আলোক-সংবেদনশীল প্রোটিন আলোর উজ্জ্বলতা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করতে পারে। সে অনুযায়ী বদলে ফেলতে পারে দেহের রং।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

অক্টোপাস কীভাবে রং বদলায় তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু কেন কাজটা করে অক্টোপাস? আসলে চারপাশের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়ার জন্য তারা এই কাজটি করে। এতে অনেক সুবিধা আছে। প্রথমত, শিকারি প্রাণীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। অন্যান্য প্রজাতির মতো অক্টোপাসের শক্ত খোসল, ধারালো দাঁত বা মেরুদণ্ড নেই। প্রাণ বাঁচানোর সবচেয়ে ভালো উপায় তাই নিজেকে লুকিয়ে ফেলা। এ কাজে অক্টোপাসে দক্ষতা দেখার মতো। এক মিনিটের কম সময়ে এরা চারপাশের রঙের সাথে নিজের দেহের রং মিলিয়ে ফেলতে পারে। এখানেই শেষ নয়।

ছদ্মবেশ নিতে দেহের রঙের প্যাটার্নও বদলে দেয় এদের ক্রোমাটোফর। ফলে বালি, গাছ, প্রবাল বা পাথরের সঙ্গে পুরোপুরি মিশে যায় এরা। এসব ছাড়া শিকারী প্রাণীকে সতর্ক করতেও এরা নিজেদের রং বদলায়। নীল বৃত্তের ছোপযুক্ত বিষাক্ত অক্টোপাসগুলো মূলত এই কাজ করে।

অক্টোপাসের রং বদলানোর দ্বিতীয় কারণ, শিকারকে ফাঁদে ফেলা। শিকার ধরার জন্য পরিবেশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে অক্টোপাস। মাঝেমধ্যে এরা অন্যান্য প্রাণীর রং ধারণ করে। ফলে, স্বজাতি বা নিরীহ প্রাণিভেবে নিশ্চিন্তে কাছে আসে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি। এই সুযোগেই আট পা দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে ধরে ফেলে শিকারকে।

আজ থেকে ২ হাজার ৪০০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম অক্টোপাসের রং পরিবর্তনের বিষয়টি লিপিবদ্ধ  করেন। তিনি সেসময় এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারেননি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অক্টোপাস নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। ফলে বিস্ময়কর এই প্রাণীটির ব্যাপারে নানা তথ্য জানা যাচ্ছে।

পৃথিবীতে প্রায় ১৪০০ প্রজাতির অক্টোপাস আছে। পুরো পৃথিবীজুড়েই এদের দেখা মেলে। সাধারণত উষ্ণ পানির সমুদ্রের তলদেশে এরা বাস করে। আকারে দুই ইঞ্চি থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে অক্টোপাস।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: লাইভ সায়েন্স