পানি ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়, এটা সবার জানা। কিন্তু রোজ আসলে কতটা পানি পান করবেন, সে বিষয়ে কি ভেবেছেন? অনেকে হয়তো মনে করেন, যত বেশি পানি পান করব, তত ভালো। একটি প্রচলিত ধারণা আছে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। যদিও শরীরকে সচল রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। তবে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার কোনো নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তাহলে প্রতিদিন ঠিক কতটা পানি পান করা প্রয়োজন?
মানুষভেদে পানির চাহিদা ভিন্ন ও তা বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন, কতটা ব্যায়াম বা পরিশ্রম করেন, এলাকার আবহাওয়া কেমন, কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন। এসব কারণে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করার হিসাব সবার জন্য প্রযোজ্য নয়।
আমাদের শরীরে যখন পানির প্রয়োজন হয়, তখন তৃষ্ণা লাগে। তৃষ্ণা পেলেই আমরা দ্রুত দেহের হারানো তরল পেতে পারি। শরীরে কতটুকু পানির দরকার, তা নির্ভর করে উচ্চতা ও ওজনের ওপর। ২০১৮ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, বয়স ভেদে শিশু থেকে বয়স্কদের পানির চাহিদা ভিন্ন হয়।
২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ পানি আমরা খাবার থেকে পাই। অনেকে মনে করেন, চা বা কফির মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। আসলে তা করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিকস অব সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনের গবেষকেরা জানিয়েছেন, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী পুরুষদের প্রতিদিন প্রায় ৩.৭ লিটার এবং মহিলাদের প্রায় ২.৭ লিটার তরল পদার্থ প্রয়োজন।
একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মিলিলিটার প্রস্রাব করে। এই চাহিদা পূরণ করতে তাঁকে দৈনিক ২-৩ হাজার মিলিলিটার তরল খাবার খেতে হয়। খেয়াল রাখবেন, এখানে তরল খাবারের কথা বলা হয়েছে, পানি নয়। অর্থাৎ, পানিই একমাত্র হাইড্রেশনের কাজ করে এমনটা ঠিক নয়। পানির চাহিদা আমরা প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবার থেকেই পূরণ করি। এছাড়াও আমরা প্রতিদিন কিছু না কিছু তরল জাতীয় খাবার খাই। যেমন, দুধ, চা বা কফি, ফলের জুস ইত্যাদি। এগুলোও আমাদের পানির চাহিদা অনেকাংশে মেটায়।
২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ পানি আমরা খাবার থেকে পাই। অনেকে মনে করেন, চা বা কফির মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। আসলে তা করে না। ক্যাফিনযুক্ত পানীয় সাময়িকভাবে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ালেও তা শরীরের সামগ্রিক পানির ভারসাম্যের ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ, আপনি প্রতিদিন চা বা কফি পান করলেও পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে। নেদারল্যান্ডসের শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল জার্নাল টাইডশ্রেফট ভো জিনিসকুন্দে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শরীরে তরলের ভারসাম্য রাখে কিডনি ও একটি হরমোন। এই হরমোনের নাম ভ্যাসোপ্রেসিন।
শরীরে পানির পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে সোডিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে। এই অবস্থাকে বলে হাইপোনাট্রেমিয়া। এই অবস্থার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, বমি বমি ভাব এবং পেশীর দুর্বলতা।
পানির চাহিদা নির্ধারণে দৈনন্দিন কাজকর্ম বড় ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি বেশি ব্যায়াম করেন বা রোদে বেশিক্ষণ থাকেন, তাহলে আপনার ঘাম হবে বেশি। এতে শরীর থেকে অনেক তরল কমে যাবে। সেই হারানো তরল পূরণের জন্য দরকার হবে বেশি পানি।
শুরুতে বলেছিলাম, অনেকে মনে করেন, অতিরিক্ত পানি পান করা হয়তো ক্ষতিকর নয়। কিন্তু অতিরিক্ত পানি পান করলে বিপদ হতে পারে। যদিও প্রতিদিন আট গ্লাস পানি সাধারণত তেমন ক্ষতিকর নয়, তবে জার্নাল অব ক্লিনিকাল প্যাথলজি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের বেশি পানি পান করলে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এমনকি, শরীরে পানির পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে সোডিয়াম, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে। এই অবস্থাকে বলে হাইপোনাট্রেমিয়া। এই অবস্থার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, বমি বমি ভাব এবং পেশীর দুর্বলতা। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও খুব এমনটা হয়।